বাংলাদেশে ধীরে ধীরে সংকটময় হয়ে উঠছে করোনাভাইরাস পরিস্থিতি। করোনাভাইরাসের কোনো পরীক্ষিত চিকিৎসা বা প্রতিষেধক এখনো আবিষ্কৃত না হওয়ায় এ ভাইরাস মোকাবিলা করতে আক্রান্ত দেশগুলো নানা চিকিৎসা পদ্ধতি অবলম্বন করছে। আক্রান্ত রোগীদের সুস্থ করতে বাংলাদেশে প্লাজমা থেরাপির ব্যবস্থা নিচ্ছে সরকার।
প্লাজমা থেরাপির মাধ্যমে সুস্থ হয়ে ওঠা করোনা রোগীর রক্ত থেকে অ্যান্টিবডি নিয়ে আক্রান্ত রোগীর শরীরে দেওয়া হবে। অনেক আগে থেকেই বিভিন্ন রোগের চিকিৎসায় প্লাজমা থেরাপি দিয়ে আসছেন চিকিৎসকরা।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ডা. এবিএম আবদুল্লাহ বলেন, কোভিড-১৯ থেকে সুস্থ হওয়া রোগীদের শরীরে যে অ্যান্টিবডি তৈরি হয় তার তাদের রক্তে থাকে। ওই রক্ত থেকে প্লাজমা নিয়ে অসুস্থ রোগীদের চিকিৎসা করার পদ্ধতিকে প্লাজমা থেরাপি বলে। শরীরে করোনাভাইরাস ধ্বংস করতে এটি একটি ভালো উপায় হতে পারে।
এদিকে বাংলাদেশে করোনার চিকিৎসায় প্লাজমা থেরাপির ব্যবহার নিয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এরই মধ্যে একাধিক বৈঠক করেছেন এবং কমিটি কীভাবে পরিচালনা করা হবে তা নিয়ে একটি খসড়া তৈরি করছেন।
বাংলাদেশের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের (ডিজিএইচএস) ডাইরেক্টর জেনারেল ডা. আবুল কালাম আজাদ ঢাকা ট্রিবিউনকে বলেন, “আমরা শুক্রবার চার সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছি এবং এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। যারা কোভিড-১৯ থেকে সুস্থতা পেয়েছেন তাদের শরীর থেকে আমরা রক্ত সংগ্রহ করার পরিকল্পনা করছি।”
তিনি আরও বলেন, এ বিষয়ে এরই মধ্যে পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে এবং সুস্থ হয়ে ওঠা করোনা রোগীদের শরীর থেকে রক্তের নমুনা সংগ্রহ করতে গঠিত কমিটিকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
ডিজিএইচএস’এর পরিচালক (হাসপাতাল) ডা. আমিনুল হাসান জানান, কমিটি কীভাবে কাজ করবে তা নিয়ে একটি খসড়া পাঁচ দিনের মধ্যে তৈরি করা হবে। করোনাভাইরাস মহামারির বিরুদ্ধে লড়তে প্লাজমা থেরাপি আশার আলো জাগাতে পারে।
যদিও, যুক্তরাষ্ট্রের ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন কোভিড-১৯ থেকে সুস্থ্ হয়ে ওঠা রোগীদের প্লাজমা ব্যবহারের অনুমোদন দেয়নি। বিষয়টি নিয়ে এখনো তারা অনুসন্ধান চালাচ্ছে।
এ নিয়ে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) পরিচালক মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, “আমরা সবকিছু নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছি এবং সঠিক ফল পেলে আমরা যে কোনো ধরনের নতুন চিকিৎসা পদ্ধতি বিবেচনা করে দেখবো।
এদিকে প্লাজমা থেরাপির মাধ্যমে করোনা চিকিৎসায় সুফলের দাবি করেছে কয়েকটি দেশ। ইরানের সংবাদমাধ্যম তেহরান টাইমস জানায়, দেশটিতে এই চিকিৎসার মাধ্যমে করোনাভাইরাসে মৃত্যুর হার ৪০ শতাংশ কমানো সম্ভব হয়েছে। এছাড়া চীনে প্লাজমা থেরাপি ও বিশেষ কিছু ওষুধ প্রয়োগে সুস্থ হয়েছেন শতবর্ষী এক ব্যক্তি। জার্মানি, ফ্রান্স ও যুক্তরাষ্ট্রসহ বেশ কয়েকটি দেশে এই থেরাপির পরীক্ষামূলক ব্যবহার করা হচ্ছে।