লকডাউন উপেক্ষা করে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলে ইসলামি আলোচক মাওলানা যুবায়ের আহম্মদ আনসারীর জানাজায় লাখো মানুষের জমায়েতের পর নড়েচড়ে বসেছে জেলা প্রশাসন। শনিবারের (১৮ এপ্রিল) জনসমাগমের জন্য প্রশাসনের ব্যর্থতাকেই দায়ী করছেন সচেতন মহল। আর স্থানীয় প্রশাসন বলছে, বিষয়টি তাদের ধারণার বাইরে ছিল।
এদিকে, ঘটনার পর শনিবার রাতেই সরাইল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) এবং রবিবার প্রত্যাহার করা হয়েছে সরাইল সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপারসহ আরেক পুলিশ কর্মকর্তাকে।
প্রসঙ্গত, শুক্রবার বিকেলে শহরের নিজ বাড়িতে মারা যান আনসারী। শনিবার সকাল ১০টায় বিশাল জানাযা শেষে সরাইল উপজেলার বেড়তলায় তার প্রতিষ্ঠিত জামিয়া রহমানিয়া বেড়তলা মাদ্রাসা প্রাঙ্গনে তাকে দাফন করা হয়।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ এলাকায় মাইকিং করে জানাজার বিষয়টি প্রচার করে আনসারীর অনুসারীরা। জনসমাগমের আগে স্থানীয় প্রশাসনের কোনো ধরনের তৎপরতা না থাকায় জেলা এবং জেলার বাইরে থেকে লাখো মানুষের সমাগম হয় জানাজায়। রাজধানী থেকেও সেখানে যান কিছু মানুষ।
বিপুল এই জনসমাগমে বেড়েছে করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি। আতঙ্কে আছেন আশপাশের এলাকার মানুষ।
সরাইলের বিটঘর এলাকার বাসিন্দা মো. ফরিদ মিয়া জানান, “জানাজা হবে সবাইতো জানতো। এলাকায় মাইকিং হয়েছে। ফেসবুকে লেখালেখি হয়েছে। মানুষ জড়ো হয়েছে। প্রশাসন কী করেছে? এখন গ্রাম লকডাউন করা হয়েছে।”
বিষয়টিকে “চোর পালালে বুদ্ধি বাড়ে”র মতো বলে আখ্যা দিয়েছেন তিনি।
অনেক স্থানীয় বাসিন্দা বিষয়টি নিয়ে ক্ষুব্ধ থাকলেও গণমাধ্যমে নাম প্রকাশ করতে ভয় পাচ্ছেন।
স্থানীয় একটি মাজারের খাদেম দারুল ইসলাম বলের, “বিষয়টি স্পর্শকাতর। করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঝুঁকির মধ্যে এত বিপুল লোক সমাগম সবাই দেখেছে। স্থানীয় প্রশাসন তো তখন কিছু করেনি। অথচ জেলা লকডাউন হওয়ার পর গ্রামের বাজারে এসে পুলিশ দেকানে লাঠিচার্জ করেছিল। আর জনসমাগমের বিষয়ে তারা কিছু জানে না, বললেই হলো? এই ঘটনার দায় প্রশাসনের কর্মকর্তারা এড়াতে পারেন না।”
ঘটনার পরপরই বিষয়টি নিয়ে সারাদেশে সমালোচনার ঝড় ওঠে। গণমাধ্যমে প্রতিবেদনের পর নড়েচড়ে বসে স্থানীয় প্রশাসন। রাতেই সরাইলের ওসি শাহদাৎ হোসেনকে প্রত্যাহার করা হয়। রবিবার সকালে প্রত্যাহার করাহয় সরাইল থানার (ওসি তদন্ত) নরুল হক ও সরাইল সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার মো. মাসুদ রানাকে।
লকডাউন করা হয় সদর উপজেলার মালিহাতা, সরাইলের বেড়তলা, সিতাহরণ, বড়ই ছড়া এবং আশুগঞ্জের শান্তিনগর, বগইর, খরিয়ালা, মৈশার গ্রামের (মোট ৮টি) বাসিন্দাদের ওপর কড়াকড়ি আরোপ করা হয়। জনসাধারনকে ঘর থেকে বের হতে জারি করা হয় নিষেধাজ্ঞা। গ্রামের বিভিন্ন স্থানে টাঙানো হয় সর্তকতামূলক লাল নিশান।
তিন কর্মকর্তার প্রত্যাহারের বিষয়টি নিশ্চিত করে জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আলমগীর হোসেন জানান, জানাজায় জনসমাগমের ঘটনা তদন্ত করতে চট্টগ্রাম বিভাগের অতিরিক্ত ডিআইজি মো. ইকবাল হোসেনকে প্রধান করে ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী ২২ এপ্রিলের মধ্যে কমিটিকে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।