করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট কোভিড-১৯ রোগে এপর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ২০০ জনের বেশি চিকিৎসক।
মঙ্গলবার (২১ এপ্রিল) নতুন করে আরও ৩৫জন চিকিৎসককে শনাক্ত করা হয়।
বিশেষজ্ঞদের মতে, সামনের সারিতে থাকা চিকিৎসকরাই রোগটি ছড়িয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে অন্যতম বাহক হয়ে উঠছেন। বিশেষ করে করোনাভাইরাসের উপসর্গ দেখা যায়নি, অথচ আক্রান্ত হয়েছেন এবং রোগীর সান্নিধ্যেও এসেছেন এমন চিকিৎসকরা মানুষের জীবন বাঁচানোর বদলে বরং আরও ক্ষতির কারণ হয়ে উঠতে পারেন বলেই মনে করছেন তারা।
বাংলাদেশ চিকিৎসক ফাউন্ডেশনের (বিডিএফ) প্রধান ড. নিরুপম দাস বলেন, বর্তমানে করোনাভাইরাসের কারণে ২০৫ জন চিকিৎসক আক্রান্ত হয়েছেন। এছাড়া নতুন শনাক্ত ৩৫ জনের মধ্যে ঢাকার পরেই রয়েছে নারায়ণগঞ্জ ও কিশোরগঞ্জের অবস্থান।
তিনি আরও বলেন, “করোনাভাইরাসে শনাক্তদের মধ্যে ১৩% চিকিৎসক। তবে সকল স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ও চিকিৎসা পেশার সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের হিসেব করলে শনাক্তের সংখ্যা মোট আক্রান্তের ১৫%।”
তিনি আরও বলেন, চিকিৎসকরা কেউ ঘরে বসে আক্রান্ত হচ্ছেন আবার বিভিন্ন হাসপাতালে স্বাস্থ্যসেবা দিতে গিয়েও আক্রান্ত হচ্ছেন তারা।
ঢাকা শহরের বাইরে ভাইরাসটি দ্রুতগতিতে ছড়িয়ে পড়ছে ফলে উপজেলা স্বাস্থ্যখাত ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, “এভাবে উপজেলা স্বাস্থ্যখাত আক্রান্ত হলে ভবিষ্যতে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে চিকিৎসা দেওয়া কঠিন হয়ে পড়বে।”
এদিকে, চিকিৎসকদের ব্যক্তিগত সুরক্ষাসামগ্রী (পিপিই) নিয়ে অসন্তোষের মধ্যদিয়েই এই রোগে চিকিৎসকদের আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েই যাচ্ছে বলেও মনে করছেন তিনি।
সম্প্রতি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাকের একটি জরিপে দেখা গেছে, এখনও পর্যন্ত ২৫% চিকিৎসক ও নার্স, ৬০% স্বাস্থ্যসেবার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা এখনও পিপিই পাননি।
একজন চিকিৎসক আক্রান্ত হলে তা কতখানি হুমকিস্বরূপ?
গতমাসে ঢাকার বাইরে একটি উপজেলায় প্রাইভেট প্র্যাকটিসের উদ্দেশ্যে রাজধানী ত্যাগ করেন এক চিকিৎসক। গত ৭ এপ্রিল তিনি কোভিড-১৯ এর উপসর্গ নিজের ভেতর খেয়াল করলে, প্র্যাকটিস করা বন্ধ করে দেন। এরপরই নমুনা পরীক্ষায় তার ফলাফল পজিটিভ আসে।
তিনি বলেন, “করোনাভাইরাসের উপসর্গ অনুভব করাতেই আমি প্রাইভেট প্র্যাকটিস বন্ধ করে দেই। তবে এর আগে ১০জনেরও বেশি রোগী দেখেছি প্রতিদিন।”
“সরকারি বা বেসরকারি কোনও সংস্থা থেকেই আমি কোনও পিপিই পাইনি, যদিও সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে হাজার হাজার পিপিই সারাদেশে বিতরণ করা হয়ে। একজন প্রাইভেট চিকিৎসক হিসেবে এটি আমার পক্ষে যোগাড় করা কঠিন, বিশেষ করে উপজেলাগুলোতে সবধরনের রোগেরই চিকিৎসা দিতে হয়।”
এপ্রসঙ্গে ডা. নিরুপম দাস বলেন, সংক্রমণটির ১৮ দিন না গেলে বোঝা সম্ভব নয়, চিকিৎসকও আক্রান্ত কিনা তবে এসময়ের মধ্যে ঠিকই রোগীদের চিকিৎসা দিতে হচ্ছে।
তিনি বলেন, “যদি কোনও রোগীর কিডনি ট্রান্সপ্ল্যান্ট বা লিভার সিরোসিস, ডায়াবেটিস ও হৃদরোগজনিত সমস্যা থাকে তবে এই রোগে আক্রান্ত হলে মৃত্যু ঝুঁকি অন্যান্য রোগীর তুলনায় ৩০% বেড়ে যাবে।”
এজন্য প্রত্যেক হাসপাতালেই দুইভাগে চিকিৎসা করতে হবে, যারমধ্যে একভাগ শুধু কোভিড আক্রান্ত ও শ্বাসযন্ত্রের সমস্যা রয়েছে তাদের চিকিৎসা দেবে। অপর ভাগটি অন্য রোগীদের চিকিৎসা দেবে, যাতে করে চিকিৎসক ও গুরুতর রোগে আক্রান্ত কোনও ব্যক্তি এই রোগে আক্রান্ত না হন বলেও জানান তিনি।
তিনি আরও বলেন, বর্তমানে পিপিই স্বল্পতার চেয়ে গুণগত মানসম্পন্ন পিপিইর বেশি অভাব। চিকিৎসকদের অবশ্যই গুণগত মানসম্পন্ন পিপিই প্রয়োজন বলেও জানান তিনি। এছাড়া রোগীদের মধ্যেও যাদের অন্যান্য অসুখ রয়েছে তাদেরও চিকিৎসকদের সঙ্গে সাক্ষাতের পূর্বে গুণগত মানসম্পন্ন পিপিই প্রয়োজন, নাহলে সারাদেশ এক কঠিন অবস্থার মধ্যে পড়বে বলেও সতর্ক করে দেন তিনি।
বর্তমানে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ, মিটফোর্ড হাসপাতাল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের বেশি আক্রান্ত হতে দেখা গিয়েছে।