বাংলাদেশে চলমান অঘোষিত লকডাউন কিছুটা শিথিল করে অর্থনীতি আংশিক সচল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। তবে, ইমপেরিয়াল কলেজ লন্ডন এক গবেষণায় দেখতে পেয়েছে, স্বল্প অর্থনীতির দেশগুলোর জন্য কঠোরনীতি প্রশমন পদ্ধতির তুলনায় অনেক বেশি কার্যকর।এটি সহজেই অনুমেয় যে, করোনাভাইরাসের কোনও ভ্যাকসিন বা অন্যকোনও প্রতিষেধক আবিষ্কারের আগপর্যন্ত লকডাউন কার্যকর থাকা খুবই জরুরি। গবেষকরা ধারণা করছেন, বাংলাদেশ সরকার যদি লকডাউন বলবৎ রাখে তবু কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হয়ে অন্তত প্রায় ৫২,১৪১ জনের মৃত্যু হবে। গবেষণায় দেখা যায়, বাংলাদেশ করোনাভাইরাস শেষ হওয়ার আগপর্যন্ত কেবল সামাজিক দূরত্ব ঠিক রেখেই ভাইরাস সংক্রমণ ৬৮.৯২% থেকে ৯১.৯৩% কমিয়ে আনতে পারে। ইমপেরিয়াল কলেজ লন্ডনের কোভিড-১৯ রেসপন্স দলটির তথ্যানুযায়ী লকডাউনের উদ্দেশ্য হলো, সর্বক্ষেত্রে সংক্রমিত ব্যক্তির সংখ্যা কমিয়ে রোগের বিস্তার রোধ করা। সেখানে বলা হয়, আর করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধ করতে দু’টি পদ্ধতিতে প্রচেষ্টা চালাতে হবে, ১) কঠোরনীতি ২) প্রশমননীতি। কঠোরনীতি যা বলতে মূলত লকডাউন বোঝানো হয়েছে। সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত ও অফিস-শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে যার মাধ্যমে ভাইরাস সংক্রমণ একেবারেই কমিয়ে আনা সম্ভব।অন্যদিকে, প্রশমননীতির লক্ষ্যও সংক্রমণ কমিয়ে আনা হলেও বিস্তার রোধ করা নয়। যারফলে শীর্ষ স্বাস্থ্যসেবা চাহিদা হ্রাস করার মধ্যদিয়ে ঝুঁকির মধ্যে যারা সবচেয়ে বেশি তাদেরকে রক্ষা করা সম্ভব। এটি করা হয় মূলত সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের আইসোলেশনে রাখার মাধ্যমে। একইসাথে, তাদের পরিবারকেও বিচ্ছিন্ন করে বৃদ্ধ ও অসুস্থ ব্যক্তি যাদের সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি বেশি তাদের থেকে সামজিক দূরত্ব নিশ্চিত করে এটি করা হয়। গবেষণা বলছে, বাংলাদেশ যদি লকডাউন বা কঠোরনীতির পরিবর্তে প্রশমননীতিতে চলে এবং বৃদ্ধও অধিক ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তিদের সামাজিকভাবে দূরত্বে রাখে, তবু করোনাভাইরাস মহামারিতে কমপক্ষে ১১,১,৯৯১,৮১০ জনের আক্রান্ত ও ৪,৬৭,০৩০ জন মারা যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।যদি কঠোরনীতি বা লকডাউন রেখে মোট জনসংখ্যার অন্তত ৭৫%কে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করা যায়, সেক্ষেত্রে মোট মৃতর সংখ্যা ৫২,১৪১ জনে নামিয়ে আনা সম্ভব বলেও মনে করেন গবেষকরা। এরমানে হলো, যদি সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত না করে জনসাধারণ কেবল প্রশমননীতিই মেনে চলা হয়, সেক্ষেত্রে মোট আক্রান্তর সংখ্যা বেড়ে ৪৩.২৮% ও মোট মৃত্যু ৪২.৯৩% হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। গবেষণায় আরও বলা হয়, “আমরা কঠোরতার বৃহত্তর সামাজিক ও অর্থনৈতিক ব্যয়কে বিবেচনা করি না, যা উচ্চতর হবে এবং স্বল্প আয়ের ক্ষেত্রে সামঞ্জস্যহীন হতে পারে। কঠোরনীতি অবশ্যই কিছুক্ষেত্রে জরুরি যতদিন না পরবর্তী মহামারিগুলোর ঝুঁকি এড়াতে ভ্যাকসিন বা প্রতিষেধক কোনও ব্যবস্থা সহজলভ্য হচ্ছে।”প্রসঙ্গত, শনিবার (২ মে) বাংলাদেশ করোনাভাইরাসে ১৭৫ জনের মৃত্যু ও ৮,৮০০ জনের আক্রান্ত হওয়ার খবর নিশ্চিত করেছে। গত ২৬ মার্চ প্রকাশিত ইমপেরিয়াল কলেজ লন্ডনের গবেষণাটিতে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে, বিশ্বব্যাপী কোভিড-১৯এ ৭শ’ কোটি মানুষ সংক্রমিত ও প্রায় ৪ কোটি মানুষের মৃত্যু হতে পারে।