কিশোরগঞ্জবাসীর দীর্ঘদিনের দাবির মুখে প্রতাপশালী বারো ভুঁইয়াদের নেতা ঈশা খাঁর স্মৃতি সংরক্ষণে একটি যাদুঘর নির্মাণে ভূমি অধিগ্রহণের জন্য অর্থ বরাদ্দ পেয়েছে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর। সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণাধীন প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর এ বরাদ্দ পায়।
প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অতিরিক্ত সচিব মো. হান্নান মিয়ার বরাত দিয়ে সদ্য অবসরে (এলপিআর) যাওয়া প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের প্রকৌশলী ও অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. ছাদেকুজ্জামান অর্থ বরাদ্দের তথ্য নিশ্চিত করেন।
জানা যায়, সম্প্রতি প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল ঈশা খাঁর স্মৃতি বিজড়িত জঙ্গলবাড়িসহ এগারো সিন্দুর দুর্গ, আদি বাংলা কবি চন্দ্রাবতীর মঠ, ভৈরব ও কুলিয়ারচরের প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনসমূহ পরিদর্শন করেন। পরে ঈশা খাঁর স্মৃতি বিজড়িত ও সংরক্ষিত পুরাকীর্তি সমূহকে কেন্দ্র করে জঙ্গলবাড়িতেই “ঈশা খাঁ স্মৃতি যাদুঘর” গড়ে তোলার জন্য প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর গণপূর্ত বিভাগের মাধ্যমে ডিজিটাল সার্ভে করে ভূমি অধিগ্রহণের জন্য প্রস্তাব দেয়। একইসঙ্গে জেলার সংরক্ষিত প্রত্নস্থলের উন্নয়নের জন্য একটি প্রকল্প তৈরি করে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করে।
বাংলার প্রথম মহিলা কবি চন্দ্রাবতীর মঠ। সোহেলুর রহমানএদিকে কিশোরগঞ্জ আরকিওলজিক্যাল সোসাইটির সভাপতি আমিনুল হক সাদী বলেন, “কিশোরগঞ্জে ঈশা খাঁ ও চন্দ্রাবতীর মঠসহ জেলায় ৯টি সংরক্ষিত প্রত্নস্থল রয়েছে। সেগুলোর উন্নয়নে জমি অধিগ্রহণ অত্যাবশ্যক। তাই সেই লক্ষ্যে সম্প্রতি ২০ কোটি টাকা অর্থ বরাদ্দও দেওয়া হয়েছে। আমি মনে করি, এই অর্থ বরাদ্দের ফলে ঈশা খাঁ স্মৃতি যাদুঘরসহ জেলার অন্যান্য প্রত্নস্থলের জমি অধিগ্রহণের কাজ দ্রুত এগিয়ে যাবে এবং পরবর্তীতে এ সকল কাজের পূর্ণরূপ মানুষ দেখতে পাবে।”
এ বিষযে জঙ্গলবাড়িতে বসবাসরত ঈশা খাঁর ১৫তম উত্তসূরী দেওয়ান জামাল দাদ খান বলেন, “প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর আমাদের গৌরবদীপ্ত পূর্ব পুরুষ মহাবীর ঈশা খাঁর স্মৃতি বিজড়িত যাদুঘর নির্মাণসহ অন্যান্য প্রত্নস্থলের উন্নয়নের লক্ষে ভূমি অধিগ্রহণের জন্য অর্থ বরাদ্দ দেওয়ায় বিষয়টি জেনে শুধু আমিই নই বরং কিশোরগঞ্জবাসী আনন্দিত।”
প্রসঙ্গত, ইতিহাস-ঐতিহ্য ও প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনে সমৃদ্ধ জেলা কিশোরগঞ্জ। জেলাটিতে ঈশা খাঁর বাসস্থান জঙ্গল বাড়ি দুর্গ, বাংলার প্রথম মহিলা কবি চন্দ্রাবতীর বাড়ি, পরিখা মসজিদ, এগারসিন্দুর দুর্গ, বেবুদ রাজার দীঘি, ভেলুয়া সুন্দরীর দীঘি, শাহ মাহমুদের মসজিদ, মাজার, সাদী মসজিদ, সেকান্দার নগর সাহেব বাড়ি, গাঙ্গাটিয়া জমিদার বাড়ি, তাড়াইলের জাওয়ার সাহেব বাড়ি প্রভৃতি অসংখ্য প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন রয়েছে। এছাড়া শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠ ও অষ্টগ্রাম হাওড় জেলাটিকে দিয়েছে বাড়তি সৈন্দর্য। এসব ঐতিহাসিক স্থান ঘুরে দেখতে প্রতিবছর দেশ বিদেশের হাজারো পর্যটক ভিড় করেন কিশোরগঞ্জে।