ভারতের পেট্রাপোল চেকপোস্ট ইমিগ্রেশনে কর্তৃপক্ষের অবহেলা ও অব্যবস্থাপনায় সীমাহীন দুর্ভোগে পড়েছেন বাংলাদেশি পাসপোর্টধারীরা।
করোনাভাইরাস সংক্রমণ এড়াতে দেশটির লকডাউন শিথিলের সুযোগে বাংলাদেশমুখী যাত্রীরা অসুস্থতা, রোদ-বৃষ্টি মাথায় নিয়ে রাস্তায় দুই দিন ধরে দীর্ঘ লাইনে রাত-দিন কাটাচ্ছেন।
ভারতফেরত যাত্রীদের সাথে কথা জানা যায়, ভারতে লকডাউনে আটকা পড়েন চিকিৎসা, ব্যবসা ও ভ্রমণের জন্য যাওয়া কয়েক হাজার বাংলাদেশি। ইচ্ছা থাকলেও লকডাউনে কড়াকড়ির কারণে তারা এতদিন দেশে ফিরতে পারেননি। এদিকে ভিসার মেয়াদ শেষ পর্যায়ে চলে আসায় তারা দূর-দূরান্ত থেকে কেউ যানবাহনে আবার কেউ হেঁটে চেকপোস্টে যান।
কিন্তু ভারতের পেট্রাপোল ইমিগ্রেশনের কাজের ধীরগতি ও নানান টালবাহনায় এসব যাত্রীদের দু’দিন আটকে রাখা হয়। তারা খেয়ে না খেয়ে, রোদ-বৃষ্টি মাথায় নিয়ে খোলা রাস্তার রাত কাটান। হঠাৎ মঙ্গলবার (১৯ মে) সন্ধ্যায় সব যাত্রীকে এক সাথে ছেড়ে দেয় পেট্রাপোল ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ। এতে বেনাপোল ইমিগ্রেশনে হঠাৎই চাপের মুখে পড়ে।
বেনাপোল ইমিগ্রেশন সূত্রে জানা গেছে, সন্ধ্যায় হঠাৎ হাজারেরও অধিক যাত্রী একসাথে ছেড়ে দেওয়ায় ইমিগ্রেশনে শারীরিক পরীক্ষা শেষ করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। ফলে দেশের মাটিতে পা রেখেও বাড়ি ফিরতে পারেননি অনেকে।
ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ বলছে, তারা রাত জেগে কাজ করছেন ভারত ফেরত যাত্রীদের ছাত্রপত্র দেওয়ার জন্য।
মঙ্গলবার রাতে বেনাপোল ইমিগ্রেশনে আটকে থাকা যাত্রী এমদাদুল হক বলন, খেয়ে না খেয়ে দীর্ঘ রাস্তা পাড়ি দিয়ে এসেছি দেশে ফিরব বলে। ভারতের পেট্রাপোল ইমিগ্রেশনের কাজের ধীরগতির কারণে এবং নানা টালবাহানায় হাজারের বেশি বাংলাদেশি যাত্রী জমা হয়ে যায়। পরিশেষে গতকাল সন্ধ্যায় আমাদেরকে এক সাথে বাংলাদেশে ঢুকিয়ে দেয়।
ভারতফেরত অপর যাত্রী জয়ন্তী রানী বলেন, ইচ্ছে করেই ভারতীয় ইমিগ্রেশন পুলিশ আমাদের দাঁড় করিয়ে রাখে। এ সময় সবাই না খেয়ে রাস্তায় রাত কাটালেও কেউ খবর নেয়নি।
এদিকে, বেনাপোল ইমিগ্রেশন ভবনে সংকীর্ণ জায়গায় ভারতফেরত যাত্রীদের মধ্যে কোনো সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে যাত্রীদের পাশাপাশি করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকিতে পড়েছেন ইমিগ্রেশনের পুলিশ ও স্বাস্থ্যকর্মীরা।
বেনাপোল ইমিগ্রেশন স্বাস্থ্য কেন্দ্রের মেডিকেল অফিসার সুভাশিস জানান, ভারতীয় ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ এসব যাত্রীকে একসাথে ছেড়ে দেওয়ায় ভিড় বেড়ে নানান অসুবিধা হচ্ছে। এত যাত্রীর চাপ, কোনোভাবেই তাদের মধ্যে সামাজিক দূরত্ব রক্ষা করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে তাদের স্বাস্থ্য পরীক্ষার কাজ শেষ করতে রাত জেগে স্বাস্থ্যকর্মীরা কাজ করছেন।
বেনাপোল ইমিগ্রেশনের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আহসান হাবিব জানান, পেট্রাপোল চেকপোস্টে ইমিগ্রেশন যাত্রী দিনের শেষভাগে ছেড়ে দেওয়ায় আমাদের অনেক রাত জেগে কাজ করতে হয়েছে। ভারত থেকে ফিরে আসা যাত্রীরা ইমিগ্রেশন ও প্যাসেঞ্জার টার্মিনাল ভবনে রাতে ছিলেন। সকালে নিকটবর্তীরা যেতে পারলে ও আবহাওয়া ও লকডাউনের কারণে দূরের যাত্রীদের যেতে কিছুটা বিলম্ব হচ্ছে ।