পাবনার পদ্মার চরাঞ্চলে ভয়ংকর বিষধর সাপ “রাসেল ভাইপার”-এর আনাগোনার খবর পাওয়া গেছে। চরের ফসলি জমি, ঝোঁপঝাড় আর বসতবাড়িতে এই সাপের দেখা মেলায় আতংক ছড়িয়ে পড়েছে চরাঞ্চলের মানুষের মধ্যে।
জানা যায়, গত ২৬ মে পাবনা সদর উপজেলার চরকোমরপুর পদ্মার চরে দেখা মেলে এই বিষধর সাপটির। খবরটি ছড়িয়ে পড়লে সোমবার (০১ জুন) ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন জেলা প্রশাসনের একটি ৫ সদস্যের একটি টিম। তারা প্রতিষেধক সহজলভ্য না থাকায় এবং সামনে বর্ষা মওসুমে চরাঞ্চলের মানুষদের সতর্কতার সাথে কৃষিকাজসহ দৈনন্দিন কাজ করার পরামর্শ দিয়েছেন।
স্থানীয় কৃষক, প্রত্যক্ষদর্শী ও জনপ্রতিনিধিরা বলছেন, পাবনা সদর উপজেলার দোগাছি ইউনিয়নের কোমরপুর একটি বিস্তৃর্ণ পদ্মার চর। এই চরে বিভিন্ন সময়ে নতুন নতুন পোকামাকড়সহ নানা জাতের সাপের উপদ্রব দেখা দেয়। এই উপদ্রবের মধ্যেই স্থানীয় কৃষকসহ সাধারণ মানুষকে দৈনন্দিন কাজ করতে হয়। এ সকল বিষধর পোকামাকড় ও সাপের উপদ্রব উপক্ষো করেই জীবিকা নির্বাহের তাগিদে মাঠে কাজ করতে হচ্ছে।
আরও পড়ুন - মুন্সীগঞ্জে আবারও ধরা পড়েছে ভয়ংকর বিষধর ‘রাসেলস ভাইপার’
তারা বলেন, গত শনিবার (২৯ মে) ঈশ্বরদী উপজেলার সাড়া ইউনিয়নের মাঝদিয়া বড়পাড়া গ্রামের সেলিনা খাতুন নিজ ঘরেই সাপের হামলার শিকার হন। স্থানীয়রা আগ্রাসী প্রকৃতির সাপটি মেরে রোগীর সাথেই পাবনা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে আসেন। চিকিৎসকরা সাপটি শনাক্ত করতে না পারলেও পরে পরিবেশবিদদের সহায়তায় তারা এটি ভয়ংকর বিষধর “রাসেল ভাইপার” বা “চন্দ্রবোড়া” সাপ হিসেবে শনাক্ত করেন। তবে সাপের ছোবলটি লক্ষ্যভ্রষ্ট হওয়ায় বেঁচে গেছেন ওই গৃহবধূ।
রাসেল ভাইপার উপদ্রব্যের এলাকা পরিদর্শনে জেলা প্রশাসনের একটি দল। ঢাকা ট্রিবিউন
পাবনা জেনারেল হাসপাতালের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা. আবু সালেহ মোহাম্মদ বলেন, গত এক মাসে পাবনা সদর, ঈশ্বরদী ও সুজানগরের চরাঞ্চলে এই বিষধর সাপ দেখার খবর পাওয়া গেছে। এসব অঞ্চলের মানুষকে খুব সাবধানে থাকতে হবে। কারণ এই সাপের প্রতিষেধক বাংলাদেশে পাওয়া যায় না।
পরিদর্শনে যাওয়া জেলা প্রশাসনের তদন্ত টিমের প্রধান সহকারি কমিশনার ভুমি রোকসানা মিতা বলেন, “পদ্মার বিশাল এই চরাঞ্চল ফসলসহ গোচারণের অন্যতম স্থান। এখানে বিভিন্ন ধরণের সাপসহ পোকামাকড় থাকাটা স্বাভাবিক। তবে সাবধান ও সর্তকতার সাথে কাজ করতে হবে এ অঞ্চলের মানুষদের।”
আরও পড়ুন - ভাইরাল হওয়া প্রাণীটি চিতাবাঘ নয়, চিতা বিড়ালের বাচ্চা
রাসেল ভাইপার সম্পর্কে বাংলাদেশ বন বিভাগের বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ কর্মকর্তা জোহরা মিলা ঢাকা ট্রিবিউনকে বলেন, “আইইউসিএনের ২০১৫ সালের লাল তালিকা অনুযায়ী রাসেলস ভাইপার বাংলাদেশে সংকটাপন্ন প্রাণীর তালিকায় রয়েছে। এটি ইঁদুর ও টিকিটিকি খায়। বসতবাড়ির আশেপাশে এদের প্রাচুর্যতা বেশি থাকায় খাবারের খোঁজে রাসেলস ভাইপার অনেক সময় লোকালয়ে চলে আসে এবং মানুষকে দেখে আতঙ্কগ্রস্থ হয়ে কখনও কখনও আক্রমণও করে।”
জোহরা মিলা বলেন, “তীব্রতার দিক দিয়ে সাপটি বিশ্বের ৫ নম্বর ভয়ংকর বিষধর সাপ। কিন্তু মাত্র ১ সেকেন্ডের ১৬ ভাগের ১ ভাগ সময়ে কাউকে কামড়ে বিষ ঢালতে পারে সাপটি! কামড়ের ক্ষিপ্রগতির দিক দিয়ে সব সাপকে হারিয়ে রাসেল ভাইপার প্রথম স্থান দখল করেছে। তাছাড়া এ সাপটির বিষ দাঁত বিশ্বে দ্বিতীয় সর্ববৃহৎ। এই সাপের বিষ ‘হেমোটক্সিন’ হওয়ায় মাংস পঁচেই আক্রান্ত ব্যক্তির মৃত্যু হয়। সাপটির কবল থেকে বাঁচতে সচেতনতাই কার্যকর পথ। বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন-২০১২ অনুযায়ী সাপটি সংরক্ষিত।”
আরও পড়ুন - বাঘের সংখ্যা দ্বিগুণ করতে বাংলাদেশ কি ব্যর্থ হতে যাচ্ছে?