গত ডিসেম্বরে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাস প্রথম বাংলাদেশে শনাক্ত হয় গত ৮ মার্চ। ১৮ মার্চ প্রথম করোনাভাইরাসে মৃতের তালিকায় নাম লেখায় বাংলাদেশ। মৃতের সংখ্যা ৫শ’ ছাড়াতে দুইমাস সময় লাগলেও পরের হাজার ছাড়াতে সময় লেগেছে মাত্র দুই সপ্তাহ।
অর্থাৎ গত ২৫ মে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে দেওয়া নিয়মিত সংবাদ বুলেটিনে মৃতের সংখ্যা ৫শ’ ছাড়ানোর সংবাদ দেওয়া হয়। এর ঠিক দুই সপ্তাহের মধ্যে এ ভাইরাসে মৃতের সংখ্যা ছাড়িয়ে যায় একহাজার।
বুধবার (১০ জুন) এ সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১,০১২ জনে। এরমধ্য দিয়ে ২১৫ টি করোনাভাইরাস আক্রান্ত দেশ ও অঞ্চলের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান দাঁড়ায় ৩২ নম্বরে। দক্ষিণ এশিয়ায় ভারত-পাকিস্তান- বাংলাদেশ বাদে অন্যান্য সকল দেশেই মৃতের সংখ্যা অনেক কম। ওয়ার্ল্ডোমিটারের তথ্যানুযায়ী, আফগানিস্তান ৪০৩ জনের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে ৪৩ নম্বরে অবস্থান করছে। অর্থাৎ বাংলাদেশের তুলনায় যুদ্ধ-বিধ্বস্ত দেশটির অবস্থান অনেকটাই ভাল। এরপর রয়েছে নেপাল, ১৫ জনের মৃত্যুতে ১২৩ তালিকায় রয়েছে দেশটির অবস্থান। ১১ জনের মৃত্যুতে শ্রীলংকার অবস্থান ১৩৪ এ, মালদ্বীপ ১৪৭ নম্বরে। এছাড়া ভূটান পুরো পরিস্থিতি নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে সক্ষম হয়েছে। এখনও পর্যন্ত এ ভাইরাসে দেশটিতে কেউ মারা যাননি।
এমনকি মৃতের হারের দিক থেকে বাংলাদেশের পিছে রয়েছে জাপান, অস্ট্রেলিয়া, সৌদি আরব. সুদান ও ইরাকও।
বাংলাদেশে মৃত্যুর হার
১৮ মার্চ বাংলাদেশে এ ভাইরাসে প্রথম মৃত্যুর পর ২০ দিন সময় নিয়েছে ১০ জনের মৃত্যু হতে, ১০০ জনের মৃত্যু হতে সময় নিয়েছে ৩৪ দিন, ৫০০ জনের মৃত্যু হতে সময় লেগেছে ৬৯ দিন, এরপর ৮৫ দিনের মধ্য মৃতের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ১,০০০। বিদ্যমান এ পরিস্থিতিতে দেশের লকডাউন শিথিল করা হয়েছে। দেশব্যাপী রেড-ইয়েলো-গ্রিন অর্থাৎ লাল-হলুদ-সবুজ জোনে ভাগ করা হয়েছে।
পুরুষদের মৃত্যুর হার বেশি
জাতীয় রোগ তত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের দেওয়া তথ্যমতে, বুধবার (১০ জুন) পর্যন্ত এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন মোট ১,০১২ জন। যাদের মধ্যে ৭৭% পুরুষ।
এ পর্যন্ত করোনাভাইরাস পজিটিভ এসেছে ৭৪,৮৬৫ জনের, যার মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ১.৩৫%, সুস্থ হয়েছে ২১.২৪% এবং এখনও ৭৭.৪১% ভেতর ভাইরাসটির উপস্থিত রয়েছে।
ষাটোর্ধ্বদের মৃতের হার ৩৯%
ভাইরাসটিতে এ পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি মারা গেছেন ষাটোর্ধ্ব ব্যক্তিরা, যাদের সংখ্যা ৩৯%। এরপর রয়েছে ৫১ থেকে ৬০ বছর বয়সীরা মারা যাচ্ছেন, যার হার ২৯.৬২%। এছাড়া ৪০ বছরের মধ্যে মারা যাওয়া ব্যক্তিদের হার ১৭.৪%।
অন্যদিকে, নেপাল, ভুটান, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের সুস্থতার হারও বাংলাদেশের চেয়ে বেশি।
নেপাল, ভুটান, শ্রীলঙ্কা ও মালদ্বীপের মতো পর্যটননির্ভর দেশগুলো বিশ্বব্যাপী এ ভাইরাস মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়ার পরই কড়াভাবে লকডাউন, সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করে।
চীন, ইতালি, ইরান ও স্পেনের পর সবচেয়ে দ্রুতগতিতে মৃতের সংখ্যা হাজার ছাড়িয়ে গেছে ফ্রান্সে। এরপরই সরকার সারাদেশে লকডাউন জারি করে ফ্রান্স সরকার।
বিশেষজ্ঞদের মতে ভবিষ্যতে এ ধরনের পরিস্থিতি মোকাবেলায় জন্য বাংলাদেশের প্রচুর কাজ করার প্রয়োজন আছে। এ প্রসঙ্গে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পাবলিক হেলথ বিভাগের অধ্যাপক রুহুল ফোরকান সিদ্দিক শহরের সঙ্গে সরবরাহ ব্যবস্থা বাদে সকল গ্রামগুলোর সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার ওপর জোর দেন।
এসময় সরকারকে গ্রামগুলোর প্রতি নজর দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “সকল গ্রামগুলোকে লকডাউন করা প্রয়োজন”। শহর থেকে আসা ব্যক্তিদের কাউকে গ্রামে ঢুকতে না দেওয়ার প্রতিও জোর দেন তিনি।
এছাড়া ঘরে বসে অক্সিজেনের মাত্রা দেখার জন্য সবাইকে বিনামূল্যে “পালস অক্সিমিটার” সরবরাহ, আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসায় ঘরে সহজে ব্যবহার করা যায়, এমন উপকরণের ব্যবস্থা এবং সপাতালগুলোর ব্যবস্থাপনা পদ্ধতির ওপর জোর দেওয়ার জন্যও সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।