কুয়েতে মানব পাচার, মানি লন্ডারিংসহ বিভিন্ন অপরাধে অভিযুক্ত লক্ষ্মীপুরের সাংসদ মো. শহিদ ইসলাম ওরফে কাজী পাপুলের বিরুদ্ধে চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছেন সেখানকার এক প্রবাসী বাংলাদেশি শ্রমিক। কুয়েতি গণমাধ্যমের বরাত দিয়ে এ তথ্য জানিয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের গণমাধ্যম গালফ নিউজ।
এদিকে, মধ্যপ্রাচ্যের আরেকটি গণমাধ্যম আরব টাইমস এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, দেশটিতে পাপুলের বিরুদ্ধে চলমান তদন্তের অন্যতম সাক্ষী আব্দুল জব্বার নামে এক প্রবাসী।
জব্বার বলেন, “মাফিয়া সম্রাটদের মতো নিম্নআয়ের শ্রমিকদের কাছ থেকে ট্যাক্স নিতেন পাপুল।” তিনি বাধ্য হয়ে পাপুলকে একাধিকবার অর্থ দিয়েছেন।
জব্বার আরও জানান, “শ্রমিকদের কাছ থেকে প্রতিদিন ৮ দিনার হারে ‘কর’ নিতেন অভিযুক্তরা।”
আরও পড়ুন- মানব পাচার: পাপুলের সঙ্গে জড়িত বাংলাদেশি ও কুয়েতি এমপিরাও
প্রতারণার শিকার এই শ্রমিককে দৈনিক ৮ ঘণ্টা করে কাজের বিপরীতে মাসে ১৪০ দিনার বেতনের প্রতিশ্রুতিতে কুয়েতে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু সেখানে গিয়ে তিনি দেখেন প্রতিদিন তাকে কাজ করতে হবে ১৬ ঘণ্টা আর মাসিক বেতন হবে ১০০ দিনার। এছাড়া, নির্দিষ্ট কোনো কাজের বিপরীতে একেক সময় একেক ধরনের কাজ ধরিয়ে দেওয়া হতো তাকে।
দেশে ফিরে আসার আগে প্রবাসী শ্রমিক জব্বার জানিয়েছেন, “মাহবুব ও আমান নামে দু'জন পাপুলের হয়ে শ্রমিকদের কাছ থেকে টাকা নিতেন।”
এদিকে, দেশের একটি গণমাধ্যমের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, মঙ্গলবার দেশে ফেরা অন্তত তিন প্রবাসী শ্রমিককে সম্পূর্ণ ক্ষতিপূরণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল কুয়েতি কর্তৃপক্ষ। কিন্তু বিমানে ওঠার আগে তাদের হাতে মাত্র ১৫০ দিনার ধরিয়ে দেওয়া হয়।
আরও পড়ুন- কুয়েতের জিজ্ঞাসাবাদে পাপুলের স্বীকারোক্তি, বাংলাদেশ জানে না কিছুই!
গত ৭ জুন কুয়েতি কর্তৃপক্ষের হাতে গ্রেফতার হওয়ার পর লক্ষ্মীপুর-২ আসন থেকে নির্বাচিত এই স্বতন্ত্র সাংসদকে কারাগারে রাখা হয়েছে।
কুয়েতি গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, জিজ্ঞাসাবাদে দেশটির অভ্যন্তরীণ বিষয়াবলী সংক্রান্ত মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তাকে চেকের মাধ্যমে ১ দশমিক ১ মিলিয়ন দিনার, আরেক কর্মকর্তাকে নগদ ১ মিলিয়ন ডলার ও তৃতীয় এক কর্মকর্তাকে কয়েক মিলিয়ন দিনার নগদ অর্থ উৎকোচ দেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন পাপুল।
মানব পাচারের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে তদন্তকারী পাবলিক প্রসিকিউশনের সুপারিশে কুয়েতের জনসম্পদ কর্তৃপক্ষের এক কর্মকর্তাকে তিন মাসের জন্য বরখাস্ত করা হয়েছে।
আরও পড়ুন- মানব পাচারের অভিযোগে লক্ষীপুর-২ আসনের এমপি কুয়েতে গ্রেফতার
অভিযুক্তদের মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে অর্থের বিনিময়ে কুয়েতে যাওয়া ১২ প্রবাসী শ্রমিকের সাক্ষ্য নিয়েছেন প্রসিকিউটররা।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রের বরাত দিয়ে কুয়েতি সংবাদপত্র আল রাই বলছে, তার সঙ্গে একটি মন্ত্রণালয়ের একজন ডিরেক্টরের সংশ্লিষ্টতার কথাও স্বীকার করেছেন পাপুল।
প্রতিবেদনের তথ্যানুযায়ী, একজন মার্কিন নাগরিকের সঙ্গে যৌথ প্রতিষ্ঠান খোলার জন্য উল্লেখিত অর্থ যুক্তরাষ্ট্রে পাঠিয়েছেন পাপুল। মারাফি কুয়েতিয়া গ্রুপ নামে একটি প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং ডিরেক্টর ও সিইওর পদে আছেন লক্ষ্মীপুরের এই সাংসদ।
কুয়েত, ওমান ও জর্দানে শাখা রয়েছে প্রতিষ্ঠানটির। তিনটি দেশেই বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, পরিচ্ছন্নতা, নিরাপত্তা সেবা এবং প্রকৌশল কাজে ব্যবহৃত ভারি যন্ত্রপাতি ভাড়ার ব্যবসা করে আসছে তারা।
গত ৭ জুন লক্ষ্মীপুর-২ আসনের সাংসদ পাপুলকে গ্রেফতার করে কুয়েতের ক্রিমিন্যাল ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্ট (সিআইডি)।