একাত্তরের জননী খ্যাত বীরাঙ্গনা রমা চৌধুরী আর বেঁচে নেই। সোমবার (৩ সেপ্টেম্বর) ভোর ৪টা ১০ মিনিটের দিকে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৯ বছর।
রমা চৌধুরীর এক মাত্র পুত্র সন্তান জাহার লাল চৌধুরী এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
জাহার লাল চৌধুরী জানান, ‘গল ব্লাডারে পাথর, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপসহ নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে এ বছরের ১৭ জানুয়ারি তিনি চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হন। এরপর থেকে সেখানেই চিকিৎসাধীন ছিলেন’।
‘রবিবার (০২ সেপ্টেম্বর) রাতে রমা চৌধুরীর শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটলে রাতে তাকে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়। আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন’ বলে জানান জাহার লাল চৌধুরী।
তিনি আরও জানান, ‘বেলা ১০টার পর তার মরদেহ সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে রাখা হবে। এরপর দুপুরে মরদেহ তার গ্রামের বাড়ি বোয়ালখালী পোপাদিয়া গ্রামে নিয়ে যাওয়া হবে। সেখানেই তার দাহ কাজ অনুষ্ঠিত হবে’।
১৯৩৬ সালের ১৪ অক্টোবর চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলায় জন্মগ্রহণ করেন রমা চৌধুরী। ১৯৬১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা সাহিত্যে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেন।
মুক্তিযুদ্ধের সময় ১৯৭১ সালের ১৩ মে তিন শিশু সন্তান নিয়ে বোয়ালখালীর পোপাদিয়ার গ্রামের বাড়িতেই ছিলেন রমা চৌধুরী। ওই সময় এলাকার রাজাকারদের সহায়তায় পাকিস্তানি বাহিনী রমা চৌধুরীর বাড়িতে হানা দেয়, ধর্ষণের পর তাদের বাড়ি জ্বালিয়ে দেয় হানাদাররা। আগুনে পুড়ে ওই দিন তার দুই ছেলে সাগর ও টগর মারা যায়।
‘একাত্তরের জননী’, ‘এক হাজার এক দিন যাপনের পদ্য’ এবং ‘ভাব বৈচিত্র্যে রবীন্দ্রনাথ’ সহ ১৮টি বই লিখেছেন রমা চৌধুরী। বই বিক্রির টাকা দিয়ে চলতো তার পরিবার। পাশাপাশি বই বিক্রির টাকা দিয়ে একটি অনাথআশ্রম খোলার ইচ্ছেও ছিল তার।