মানবপাচার পরিস্থিতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের বার্ষিক প্রতিবেদনে বাংলাদেশের অবস্থানের উন্নতি ঘটেছে, যার কারণ হিসেবে পরিস্থিতির উন্নয়নে সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের কথা বলা হয়েছে।
“ট্রাফিকিং ইন পারস” শীর্ষক বার্ষিক এই প্রতিবেদনে গত তিন বছর বাংলাদেশকে রাখা হয়েছিল দ্বিতীয় স্তরের “নজরদারিতে থাকা দেশের” তালিকায় (টায়ার-টু ওয়াচ লিস্ট) । ২০২০ সালের প্রতিবেদনে বাংলাদেশকে নজরদারিতে থাকা দেশের তালিকা থেকে বাদ দিয়ে দ্বিতীয় স্তরের দেশের তালিকায় উন্নীত করা হয়েছে।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও বৃহস্পতিবার (২৫ জুন) রাতে চলতি বছরের “ট্রাফিকিং ইন পারসন” প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেন।
দ্বিতীয় স্তরে থাকার অর্থ হল, পাচার নির্মূলের লক্ষ্যে ন্যূনতম মান এখনও বাংলাদেশ অর্জন করতে পারেনি। তবে তা অর্জনে সরকার উল্লেখযোগ্য ও ক্রমবর্ধমান প্রচেষ্টা নিচ্ছে।
ব্রাজিল, ডেনমার্ক, জার্মানি, গ্রিস, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, ইতালি, জাপান, নেপাল, পোল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা, থাইল্যান্ড, তুরস্ক, সংযুক্ত আরব আমিরাতকেও (ইউএই) এবারের প্রতিবেদনে দ্বিতীয় স্তরে রাখা হয়েছে।
মানবপাচার পরিস্থিতি বিবেচনা করে এই প্রতিবেদনে দেশগুলোকে তিনটি স্তরে ভাগ করে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর। এর মধ্যে যেসব দেশ পাচার বন্ধে “কার্যকর” ব্যবস্থা নিয়েছে অর্থাৎ, ট্রাফিকিং ভিকটিমস প্রোটেকশন অ্যাক্টস’এর ন্যূনতম মান পূরণে সক্ষম হয়েছে বলে যুক্তরাষ্ট্র মনে করে, সেসব দেশকে প্রথম স্তর বা টায়ার-ওয়ান-এ রাখা হয়।
দ্বিতীয় স্তর বা টায়ার-টু’কে আবার দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে- টায়ার-টু এবং টায়ার-টু ওয়াচলিস্ট। সবশেষে রয়েছে তৃতীয় স্তর বা টায়ার-থ্রি।
ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের ওয়েবসাইটে এক বিবৃতিতে বলা হয়, গুরুত্বপূর্ণ যে পদক্ষেপগুলোর কারণে মানবপাচার প্রতিরোধে বাংলাদেশের পরিস্থিতির অগ্রগতি হয়েছে, তার মধ্যে রয়েছে সাতটি মানবপাচার ট্রাইবুনাল গঠন এবং বিদেশে কাজের জন্য যেতে আগ্রহী বাংলাদেশিদের “শোষণকারী” নিয়োগ প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ গ্রহণ।
রাষ্ট্রদূত আর্ল মিলার ও যুক্তরাষ্ট্রের মানবপাচার পর্যবেক্ষণ ও মোকাবেলা বিষয়ক অ্যাম্বাসেডর অ্যাট লার্জ জন কটন রিচমন্ড এক যৌথ বিবৃতিতে বলেন, “পাচারকারীদের বিচারের মুখোমুখি করতে এবং ভুক্তভোগীদের মুক্তি নিশ্চিত করতে অক্লান্তভাবে লড়াই করে চলা বাংলাদেশ সরকার ও নাগরিক সংগঠনগুলোকে আমরা অভিনন্দন জানাই। মানবপাচারের বিরুদ্ধে বিশ্বের এই যুদ্ধে তারা বাংলাদেশের হিরো।”
প্রতিবেদনে এও বলা হয়েছে, বাংলাদেশ সরকার রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে মানবিক কর্মসূচি চালানোর সুযোগ অব্যাহত রেখেছে। তবে মানবপাচার বন্ধে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় এখনও যথেষ্ট উন্নতি দেখাতে পারেনি। মানবপাচার নিয়ে তদন্ত আগের চেয়ে কমে গেছে। রোহিঙ্গাদের শ্রম দিতে বাধ্য করা এবং যৌনকর্মী হিসেবে পাচার করার শত শত অভিযোগে কোনো ধরনের তদন্তের উদ্যোগ নেয়নি।
শিশুদের যৌনকর্মী হিসেবে কাজ করতে বাধ্য করার বহু অভিযোগ থাকলেও সরকার সেই ভুক্তভোগীদের চিহ্নিত করার বা অভিযোগগুলো খতিয়ে দেখার উদ্যোগ নেয়নি বলেও পর্যবেক্ষণ দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, পাচারের শিকার হয়ে সৌদি আরবে শ্রম দিতে বাধ্য হওয়া সহস্রাধিক বাংলাদেশিকে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো খুঁজে বের করলেও, সরকার তাদের পুনর্বাসন বা পাচারকারীদের বিরুদ্ধে কোনো ফৌজদারি তদন্তেরও উদ্যোগ নেয়নি।