Sunday, May 18, 2025

সেকশন

English
Dhaka Tribune

একটি শিশু রাষ্ট্রে করোনাভাইরাস

১৯৭১ সালে স্বাধীনতার জন্য পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের যুদ্ধের সময় আমি সেখানে গিয়েছিলাম। এবার আবার এলাম চলমান মহামারি যখন বিস্তৃত হতে শুরু করেছে তখন

আপডেট : ২৮ জুন ২০২০, ০৬:১৫ পিএম

১৯৭১ সালে স্বাধীনতার জন্য পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের যুদ্ধের সময় আমি সেখানে গিয়েছিলাম। এবার আবার এলাম চলমান মহামারি যখন বিস্তৃত হতে শুরু করেছে তখন।

যশোর, বাংলাদেশ। বাঁশি আর বাদ্যের তূর্যনিনাদ। সারিবদ্ধ হয়ে ছন্দে ছন্দে হাততালি দিচ্ছে শিশুরা।

তৎকালীন তরুণ যোদ্ধাদের শুভ্র শ্মশ্রুমণ্ডিত মুখে সম্মিলিত সুরে ধ্বনিত হচ্ছে স্বাধীন বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত। আর দু’পাশের বাঁশের লাঠিতে বাঁধা হলুদ ব্যানার বলছে, “শ্রদ্ধেয় বার্নার্ড লেভি, যশোরে আপনাকে আবারও স্বাগতম।”

প্রায় ৫০ বছর আগের কথা। অদ্রে মালরোর আহ্বানে স্প্যানিশ গৃহযুদ্ধের মতো একটি আন্তর্জাতিক ব্রিগেড গড়ে তুলতে আমি এখানে এসেছিলাম। উদ্দেশ্য ছিল এই ভূখণ্ডে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর অপরাধের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো। কলকাতায় নেমে সাতক্ষীরা দিয়ে সীমান্ত অতিক্রম করে ঘাঁটি গাড়লাম যশোর থেকে ৪৫ মাইল দূরের একটি এলাকায়। জায়গাটা তখন বোমা আর মেশিনগানের বুলেটের ক্রমাগত আঘাতে জর্জরিত।

কেবল শহরের তকমা গায়ে লাগাতে শুরু করেছে তখনকার যশোর। নতুন বিমানবন্দর। ছিল ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক আমলের বাড়ি-ঘর, অসম্পূর্ণ নতুন বিল্ডিং আর মাটির ঘর, শীর্ণকায় শিশুর দল, গরু ব্যবসায়ী আর তাচ্ছিল্যের পাত্র ভিক্ষুকরা।

কিন্তু আমার মনে আছে শুভ্র আকাশ আর নারকেল তেলের মাতাল করা ঘ্রাণের কথা। তখনও বাজার পেরোতেই চোখে পড়তো ধানের শীষের একইভাবে বাতাসে দোল খাওয়ার দৃশ্য। এমনটাই ছিল ২০ বছর বয়সে আমার দেখা বাংলাদেশ।

সেবার সাতক্ষীরা থেকে আমাকে সঙ্গ দিয়েছিলেন তরুণ মাওবাদী নেতা আকিম মুখার্জি। অর্ধশত বছর পরে রাজধানী ঢাকার মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘরের মফিদুল হককে আমি আকিমের নাম বললাম। তিনি বিষয়টি পুলিশকে জানালেন। আকিমকে খুঁজে পেতে বেশ বেগ পেতে হয়েছে পুলিশকে।

“বাবা মারা গেছেন,” বললেন দরজায় আমাদের অভ্যর্থনা জানানো বছর ৫০-এর মানুষটি। জানালেন, তিনিই আকিমের ছেলে।

“তিনি প্রায়ই আপনার কথা বলতেন...হলুদ জ্যাকেট পরা তরুণ ফরাসি...তিনি এই জিনিসটা যত্ন করে রেখে দিয়েছিলেন।” হলুদ রঙা প্লাস্টিক স্লিভের ভেতর থেকে আকিমের ছেলে আমাকে একটা জিনিস বের করে দিলেন। আমার ফ্রেঞ্চ গ্র্যাজুয়েট স্কুলের বিজনেস কার্ড, যেখানে আমার বাবা-মায়ের ঠিকানা লেখা ছিল।

“আসুন এই ঘরে,” আকিমের ছেলে বললেন। “এখানেই বাবা শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছিলেন।”

ঘরটি থেকে কিছুই সরানো হয়নি। দেয়ালের কাছে মেঝেতে রাখা তাকে ধূপের বোতল, মোমবাতি, ধর্মীয় ছবি ও ঘণ্টা। আর মার্ক্স-লেনিনের ফ্যাকাশে হয়ে যাওয়া সাদাকালো পোট্রেট। শিব ও বিষ্ণুর পাশাপাশি এই বাড়িতে মার্ক্স-লেনিনও ছিলেন পূজনীয়। তাকের দরজা খুলতেই ছবিগুলো ঝাঁকুনি খেলো। ক্ষয়িষ্ণু জিনিসগুলোর পেছন থেকে বেরিয়ে এলো বিরাটকায় এক কালো মাকড়সা।

মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে দেখা হয়েছিল কিছু বয়স্ক নারীর সঙ্গে। তারা বীরাঙ্গনা, আসলে তারা “যুদ্ধের নায়ক”। পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর হাতে পাশবিক নির্যাতনের শিকার নারীদের এই সম্মানে ভূষিত করেছে বাংলাদেশ।

নয় মাস পর ওই ধর্ষণের ফলে যখন প্রাকৃতিক নিয়মে নবজাতকরা আসতে শুরু করলো। সদ্য স্বাধীন দেশের প্রেসিডেন্ট মুজিবুর রহমান এক ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত নিলেন- একঘরে কিংবা সমাজচূত্যির হাত থেকে বাঁচিয়ে (প্রথাগতভাবে যা হয়ে আসে সমাজে) তিনি তাদেরকে নিজের মেয়ের মর্যাদা দিলেন।

সেদিন অনেকের সঙ্গে আমি সদ্য স্বাধীন দেশের নতুন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে দেখা করে বলেছিলাম, দুর্ভোগ, নিষ্কলুষতার পাশাপাশি সহনশীলতার মাধ্যমে ওই নারীরা জাতির জন্মলগ্নের গল্পের মহানায়িকা হয়ে গেছেন।

ওই নারীরা কি জানেন সে কথা? উত্তর হলো- হ্যাঁ।

বয়োঃবৃদ্ধ এই নারীরা এখানে এসেছেন যে যার মতো করে। কারও সঙ্গী হুইলচেয়ার, কারও গায়ে শোভা পাচ্ছে উজ্জ্বল শাড়ি আর নাকে জ্বলজ্বল করছে সুন্দর নাকফুল। নির্মম অত্যাচারের শিকার এই নারীরাই যে বিশ্ব নারীবাদের অগ্রপথিক, দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে স্বীকার করা যায় সে কথা!শেখ মুজিবুর রহমানের মেয়ে শেখ হাসিনা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী। আমার প্রায় সমবয়সী মানুষটি ২০০৯ সাল থেকে সরকারের নেতৃত্ব দিচ্ছেন।আমার গল্পটা জানেন বলেই তিনি আমাকে তাঁর বাবার জন্মশতবার্ষিকী এবং দেশের অর্ধশতবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে নিমন্ত্রণ করেছিলেন।

এই অনুষ্ঠানসূচি বাতিল করা হয়েছে কোভিড-১৯ এর কারণে। আমি তার জন্য প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর পক্ষ থেকে একটি চিঠি এনেছি। সাক্ষাতের সময় সতর্কতাস্বরূপ সেটিকে রেখেছিলাম আমাদের মাঝে থাকা চায়ের টেবিলে। যার উপরেই রাখা ছিল শেখ হাসিনার বাবার ছবিটি।

চিঠিটি হাতে নিতে গিয়েও একবার ভেবে দমে গেলেন হাসিনা। কিন্তু যখন ঠিকঠাক গ্লাভসপরা প্রটোকল প্রধান চিঠিটি খুলে দিলেন তখন আমার দিকে তাকিয়ে অর্থপূর্ণ মুচকি হাসলেন তিনি।

কর্তৃত্ববাদী হিসেবে এই প্রধানমন্ত্রীর পরিচিতি রয়েছে, বিরোধীদের ব্যাপারে কৃপাহীন হিসেবেও। তার তামাটে শাড়ি, টর্টয়েজশেল গ্লাসের নিচে বরফ শীতল চোখ আমাকে মনে করিয়ে দেয় ইন্দিরা গান্ধীর প্রতাপের কথা।

কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের বিষয়ে তার উদার মনোভাবের কথাও সর্বজনবিদিত। আকিম মুখার্জিকে খোঁজার ঘটনা বলতেই তিনি বিস্ময় প্রকাশ করলেন। ১৯৭৫ সালে সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে তার বাবার হত্যাকাণ্ডের প্রসঙ্গ টেনে আনলে তার চেহারায় ফুটে উঠল কঠোরতার ছাপ। সেবার তার পুরো পরিবারকে হত্যা করা হয়েছিল। বিদেশে থাকায় কেবল বেঁচে গিয়েছিলেন হাসিনা ও তার ছোট বোন।

ঢাকা থেকে পশ্চিমে এগোলে গ্রামীণ বাংলাদেশ শুরু হয়েছে মানিকগঞ্জের গোলোরা এলাকা দিয়ে। এখানে চোখে পড়ে একটা ছোট মনুমেন্ট। সাদামাটা ইটের দেয়ালে ঘেরা পাথরে তৈরি ছোটখাটো একটা ঢিবি, যার নিচে চিরনিদ্রায় শায়িত ১৯৭১-এর ডিসেম্বরে স্বাধীনতার প্রাক্কালে গণহত্যার শিকার অগণিত মানুষ।

ওই গণহত্যার বিষয়ে গবেষকদের কোনো দ্বিমত নেই।একটি জনগোষ্ঠীকে নিশ্চিহ্ন করার উদ্দেশে পরিচালিত হত্যাযজ্ঞ। কিন্তু কত মানুষ সেবার মারা গেছেন, সঠিক সংখ্যা কেউ জানে না। গোলোরার একদল তরুণকে আমি তাই অনুরোধ জানিয়ে এসেছি তাদের পূর্বপুরুষদের গল্প যেন বারবার সবার সামনে তুলে ধরা হয়।

আমি নিশ্চিত নই যে ৫০ বছর আগেও আমি বাংলদেশ ও পাকিস্তানের এই মৌলিক পার্থক্যের ব্যাপারে সচেতন ছিলাম কিনা—“পবিত্রভূমি” হিসেবে পরিচিত পাকিস্তানের ডিএনএ-র ভিতরে ইসলামি মৌলবাদ নিহিত, আর বাংলাদেশ মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ হলেও ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের প্রতি সম্মানজনক আচরণ করে। মনে রাখতে হবে, বিশ্বজুড়ে ইসলামি মতবাদগুলোর অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব বাড়ছে। ইসলামের উদার ও উগ্রপন্থার মধ্যকার লড়াইয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার সুযোগ রয়েছে বাংলাদেশের সামনে।

আমি কখনই বলি না যে শরণার্থীরা কোথাও ভালো আছে। কিন্তু অনেকটা দৈবক্রমে আমি গেলাম ঘিঞ্জি শরণার্থী শিবিরের এলাকা কক্সবাজারে। তিন বছর ধরে সেখানে থাকছে বার্মার বৌদ্ধ ও সামরিক জান্তার দমনমূলক আচরণের শিকার হয়ে পালিয়ে আসা ৯ লাখ রোহিঙ্গা। বলে রাখা প্রয়োজন, কিছুদিন আগেই আমি গিয়েছিলাম সিরিয়া থেকে ইউরোপগামী শরণার্থীদের ল্যান্ডিং পোর্ট মোরিয়াতে, যা গ্রীসের লেসবোস নামক একটি দ্বীপের অন্তর্ভুক্ত । দুঃখের সঙ্গে বলতে হয় ইউরোপের শরণার্থীদের অবস্থা রোহিঙ্গাদের চেয়েও খারাপ। 

কক্সবাজারের ৩৪টি ক্যাম্পে রয়েছে সাবান, তোয়ালে, টুথব্রাশ আর পানির পর্যাপ্ত সরবরাহ। মূল শহরের সঙ্গে ক্যাম্পগুলোকে সংযুক্ত করেছে বাঁশ দিয়ে নির্মিত লম্বা রাস্তা। স্বাভাবিক জীবনযাপনের চেয়েও বেশি কিছু দিতে রোহিঙ্গাদের জন্য ব্যবস্থা করা হয়েছে বাঁধানো পথ, পরিচ্ছন্ন ঘর আর ছোট ছোট সবজির বাগানের। বার্মার বাড়ির মতো এখানেও পরিবারগুলো ছোটখাটো ক্ষেত-খামার করতে পারে চাইলেই।

নিশ্চিত করেই বলা যায়, অনেকটা লেসবসের মতই, এখানেও স্থানীয় বাঙালিদের সাথে তাদের বিরোধ আছে। স্থানীয়রা প্রায়ই অভিযোগ করে যে এই শরণার্থীদের তুলনায় তারা দরিদ্র। বাংলাদেশ তবুও হাল ছাড়েনি। রোহিঙ্গাদের সাহসের ভেতরে একটা শিক্ষা লুকিয়ে আছে। তারা সবকিছু হারালেও সম্মান হারায়নি। অন্যদিকে, সম্পদের প্রাচুর্যতা না থাকা সত্ত্বেও যৎসামান্য আর্থিক সঙ্গতি থাকা বাঙালিরা সবটুকু উজাড় করে জীবন্ত নরক থেকে ৯ লাখ বিপদগ্রস্ত রোহিঙ্গাকে ঠাঁই দিয়েছে।

এতক্ষণ ধরে বাংলাদেশের দারিদ্র্য নিয়ে কিছুই বলিনি। আমি কি ভুলে গেছি ঢাকার বুকে ভাসানটেক এলাকার সেইসব কর্মহীন মানুষের কথা, যারা একটু খাবারের জন্য রাস্তার কুকুরের সঙ্গে লড়াই করে? আমার ভ্রমণকালেই রাজধানীর রূপনগর বস্তি ভস্মীভূত হয়েছিল। মলমূত্রে দূষিত কালো রঙের পানির ওপর গড়ে উঠেছিল বস্তিটি। এখন সেই পানি আরও দূষিত।সন্ধ্যার কুয়াশায় সেখানে দেখা মিললো সন্ন্যাসীর মত দেখতে এক ব্যক্তির। মনে হতে পারে তিনি হয়ত সেখানে পবিত্র হতে এসেছেন। কিন্তু না! দুর্গন্ধযুক্ত পানিতে একের পর ডুব দিয়ে স্টিল ও লোহার জিনিসপত্রের ভাঙা অংশ খুঁজছেন তিনি। যা জুটবে সেটা তিনি বিক্রি করবেন কারওয়ানবাজারের পুরোনো জিনিস বিক্রির বাজারে। 

কিন্তু আমার আগেরবারের সফরের সময় পরিস্থিতি এমন ছিল না। তখনকার প্রমত্তা বুড়িগঙ্গা এখন প্লাস্টিকের স্তুপে প্রাণহীন।শহরের হাজারীবাগ এলাকার ২ লাখ বাসিন্দার খাওয়া, মাছ ধরা আর প্রতিনিয়ত পারাপার এই জঞ্জালময় বিষাক্ত পানিতে। হাজার বছর ধরে এই এলাকার মানুষের পেশা ছিল চামড়ার কারবার। আমার রিকশাচালকের পূর্বপুরুষরাযারা মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন তারা চামড়া ব্যবসায়ী হিসেবে নিজেদের পেশা নিয়ে মোটেই লজ্জিত ছিলেন না।

তখন আলোচ্য ছিল না কিন্তু এখন যন্ত্রণাদায়ক সত্যি এই যে, পৃথিবীতে একটি মাত্র জায়গা যদি পরিবেশগত বিপর্যয়ের হুমকিতে থাকে সেটি হলো এই হাজারীবাগ।

বাংলাদেশ একটি ব-দ্বীপ রাষ্ট্র, যাকে জড়িয়ে রেখেছে ৭০০ নদী। যাদের অনেকগুলোর উৎপত্তি ভারতীয় উপমহাদেশের ভেতরের দিকে। এখানে এসে তারা একে-বেঁকে চলে গেছে বঙ্গোপসাগরে। এইদেশে ঝরে হিমালয়ের বরফগলা জলের প্রভাবে সৃষ্ট বারি। সাইক্লোন আর অতিবর্ষার মৌসুমে সেই বৃষ্টিপাতে নদীর পানির উচ্চতা বেড়ে বিরাট এলাকাজুড়ে দেখা দেয় ভাঙন।

আমার স্মৃতিতে থাকা কক্সবাজার উপকূলের দ্বীপটি এখন বিলীন। বয়স ৩০ হলেও দেখতে বুড়িয়ে যাওয়া এক জেলেকে তিনবার নতুন করে ঘর তুলতে হয়েছে, কারণ সমুদ্র তাকে করেছে গৃহহীন। কখনো পরিবেশগত পরিবর্তনের (ক্লাইমেট চেঞ্জ) কথা না শোনা কৃষকের মুখে আমি শুনেছি, বাংলাদেশ সরকার নদীকে মনুষ্য সত্ত্বার স্বীকৃতি দিয়েছে।

ইসলামি মৌলবাদ, দারিদ্র্য, অভিবাসন এবং পরিবেশগত বিপর্যয়ের পাশাপাশি বাংলাদেশ আরও দু'টি চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন। তা হলো- পরিচ্ছন্নতা ও স্বাস্থ্যব্যবস্থা। বায়ু ও মাটির দুরাবস্থার কারণে এই ভূখণ্ডের মানুষ বরাবরই জ্বর, ডায়রিয়া, শ্বসনতন্ত্রের জটিলতা ও চর্মরোগে জর্জরিত।

এখানে লিম্ফ্যাটিক ফিলারিয়াসিস, ভিসেরালেইমানিয়াসিস, মেলিওয়িডোসিস, ফ্লুক ওর্ম, ডেঙ্গুজ্বর, জাপানিজ এনচেফ্যালিটিস, নিপাহের মতো রোগের প্রাদুর্ভাব রয়েছে। এসব রোগে প্রতি চারজনের মধ্যেই তিনজন আক্রান্তের অবস্থাই আশঙ্কাজনক হয়।

আর নিজের অভিজ্ঞতা থেকে আরেকটি শিক্ষা পেয়েছি আমি। এই দেশের পানি না ফুটিয়ে পান করলে হতে পারে জ্বর। যা আমাকে টানা কয়েকদিন পিঠ টানটান করে শুয়ে থাকতে বাধ্য করেছিল।

এসবের মধ্যেই চরম মাত্রায় ছড়িয়ে পড়েছে করোনাভাইরাস। প্রথমে চীন, তারপরে ইউরোপ হয়ে যুক্তরাষ্ট্র। ভৌগলিকভাবে ক্ষুদ্র এই রাষ্ট্রের জনসংখ্যা ১৬ কোটি। যখন লেখাটি লিখছি তখন বাংলাদেশে ৩০ হাজার ২০৫টি সংক্রমণ ধরা পড়েছে। আর মারা গেছেন ৪৩২ জন। ১৪ মে কক্সবাজারে (রোহিঙ্গা ক্যাম্প) প্রথম সংক্রমণের কথা জানায় জাতিসংঘ।

এমন পরিস্থিতিতে মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীর অনুষ্ঠান বাতিল করে সরকার।

নানা আকৃতি আর বর্ণের ঘরে তৈরি মাস্ক দেখা গেছে রাস্তায়। সংক্রমণের আশঙ্কায় বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে দেশের সবগুলো স্থল ও বিমানবন্দর।

এটি কি এক ধরনের সাবধানতা, যা অবলম্বন না করলে ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় এই মহামারী আরও ছড়িয়ে পড়তে পারত? যার পরিণাম হতে পারতো লাখ লাখ প্রাণহানি? এটি কি কোনো একটি জনগোষ্ঠীর অসম প্রতিশোধ? যার মাধ্যমে বাইরে থেকে আসা একটি মহামারির বিরুদ্ধে তারা প্রতিরোধ গড়ে তোলার চেষ্টা করছে? এই ধরনের প্রতিরোধের মাধ্যমে তারা বৈশ্বিক মহামারির বিরুদ্ধে আপাতদৃষ্টিতে সফল দেশগুলোর কাতারে নিজেদের দাঁড় করাতে পারবে, তারা কি এমন ধারণায় মগ্ন? আমার জানা নেই। 

৫০ বছর আগে আমি ছিলাম দুর্দশাগ্রস্ত দেশটিতে আসা প্রথমদিককার পশ্চিমাদের একজন। আর এখন আমি ইউরোপের উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়া শেষ বিমানটির যাত্রী। আমি শুধু পারি আশা রাখতে আর প্রার্থনা করতে।


বার্নার্ড-হেনরি লেভি হলেন “দ্য এম্পায়ার অ্যান্ড দ্য ফাইভ কিংস: আমেরিকা'স অ্যাবডিকেশন অ্যান্ড দ্য ফেট অব দ্য ওয়ার্ল্ড”-এর লেখক।


(লেখাটি দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নালে ২২ মে, ২০২০ তারিখে প্রকাশিত হয়। ফরাসি ভাষা থেকে নিবন্ধটি ইংরেজিতে অনুবাদ করেছেন স্টিভেন বি. কেনেডি। ইংরেজি থেকে বাংলা অনুবাদ করেছেন আহমেদ সার্জিন শরীফ)

   

About

Popular Links

x