সৌদি আরবে বসবাসকারী বিভিন্ন দেশের অধিবাসী ও দেশটির নাগরিকদের সমন্বয়ে ১০ হাজার মানুষ এবারের হজ পালনে অংশ নিলেও প্রস্তুতিতে কোনো ধরনের কমতি রাখছেন না দেশটির কর্তৃপক্ষ। এবারের সীমিত হজ আয়োজনে সৌদি আরব ছাড়াও ১৬০ দেশের নাগরিক অংশগ্রহণ করছেন।
রবিবার (১৯ জুলাই) থেকে হজে অংশ নেয়াদের ৭ দিনের হোম কোয়ারেন্টাইনের মধ্য দিয়ে হজের আনুষ্ঠানিকতার প্রথম ধাপ শুরু হয়েছে। কোয়ারেন্টাইন শেষে ৩ জিলহজ মক্কায় এসে আরও ৪ দিনের কোয়ারেন্টাইন করবেন তারা।
এর পর ৮ জিলহজ বাদ ফজর রওয়ানা হবেন মিনায়। মিনা যাত্রার মধ্য দিয়ে হজের মূল আনুষ্ঠানকতা শুরু হবে। ১২ জিলহজ পর্যন্ত মিনা, মুজদালিফা, আরাফাতের ময়দান ও মক্কায় হজের বিভিন্ন আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করতে হয়।
চলতি বছর বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে হজযাত্রীদের স্বাস্থ্যগত নিরাপত্তার স্বার্থে বেশ কিছু নতুন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। এসব পদক্ষেপের আওতায় প্রত্যেক হজযাত্রীর স্বাস্থ্য পরীক্ষা সম্পন্ন করা হয়েছে এবং প্রয়োজনীয় টিকা দেয়া হয়েছে।
এদিকে, রবিবার ভোর থেকে মক্কার নির্দিষ্ট এলাকাসহ মিনা, মুজদালিফা ও আরাফাতে সাধারণের প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এসব স্থানে অনুমোদিত ব্যক্তি ছাড়া কেউ প্রবেশ করলে তাকে ১০ হাজার সৌদি রিয়াল জরিমানা করা হবে। এসব এলাকার প্রবেশ পথে কড়া নিরাপত্তা ছাড়াও আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সদস্যরা টহল দিচ্ছেন। মিনা, মুজদালিফা ও আরাফাতের প্রবেশপথে চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। জিলহজ মাসের চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ২৯ বা ৩০ জুলাই (৮ জিলহজ) থেকে হজের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হবে এবং ৫ দিন চলবে।
হজের কার্যক্রম শেষ না হওয়া পর্যন্ত ঘোষিত বিধিনিষেধ জারি থাকবে। কোভিড-১৯ পরিস্থিতির কারণে হজযাত্রীদের মধ্যে যাতে ভাইরাস ছড়িয়ে না পড়ে সে জন্য এ ধরনের কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
সৌদি আরবের হজ ও উমরা মন্ত্রণালয় নিবন্ধিত হজযাত্রীদের প্রয়োজনীয় সামগ্রী পাঠিয়ে দিয়েছে। এসব সামগ্রীর বাইরে অন্য কিছু বহন করতে পারবে না হজযাত্রীরা।
প্রয়োজনীয় সামগ্রীর মধ্যে রয়েছে- চিপলাগানো একটি স্মার্ট ব্রেসলেট, দুই সেট ইহরামের কাপড়, ব্যক্তিগত প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদি, জামারাতে নিক্ষেপের জন্য জীবাণুমুক্ত কঙ্কর, জুতা, ফোনের চার্জার, জায়নামাজ, জুতার ব্যাগ, হাতব্যাগ এবং হজের বিধিবিধানসহ প্রাসঙ্গিক বই-পত্র ও স্বাস্থ্যবিধি সম্বলিত হজ নির্দেশিকা।
এদিকে, যাতায়াতের জন্য ২০ জন করে হজযাত্রীদের নিয়ে একেকটি দল তৈরি করা হয়েছে। এই ২০ জন হজযাত্রী একটি নির্ধারিত বাসে চলাফেরা করবেন।
মিনা, জামারাত, মুজদালিফা ও আরাফাতের ময়দানে যে অংশে হাজিরা অবস্থান করবেন, সেসব স্থান এরইমধ্যে জীবাণুমক্ত করা হয়েছে। মসজিদের হারামের ভেতরে ও বাইরের অংশে নামাজের কাতারে নামাজের সময় শারীরিক দূরত্ব নিশ্চিত করার জন্য স্টিকার লাগানো হয়েছে।
হাজিরা এবার মিনার তাঁবুতে থাকবেন না। মিনার নির্দিষ্ট ভবনগুলোতে তারা অবস্থান করবেন। এ ছাড়া তাওয়াফের সময় কাবা শরিফ স্পর্শ ও হাজরে আসওয়াদে চুমু দেয়া যাবে না। নির্দিষ্ট দূরত্বে থেকে তাওয়াফ ও সায়ী সম্পন্ন করতে হবে। তাওয়াফের সময দেড় মিটার দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। নামাজের জামাতেও দূরত্ব বজায় রেখে দাঁড়াতে হবে। হজযাত্রীদের জন্য সবসময় মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক।
হজযাত্রীরা বাইরে থেকে কোনো খাবার বা পানীয় নিয়ে হজের রীতিনীতি পালন করতে পারবেন না। সব হাজির জন্য খাবার ও পানি কর্তৃপক্ষ সরবরাহ করবে।
এছাড়া হজযাত্রীদের কোরবানি সম্পন্ন করতে হবে ব্যাংকের মাধ্যমে। কোনো হজযাত্রী নিজে কোরবানির পশু ক্রয় কিংবা জবাই করতে পারবেন না। হজ ব্যবস্থাপনার সাথে জড়িত পরিবহন শ্রমিক, খাবার সরবরাহকারী ও স্বেচ্ছাসেবকদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। হজযাত্রী ও হজ ব্যবস্থাপনার সঙ্গে জড়িতদের শরীরের তাপমাত্রা নিয়মিত পরীক্ষা করা হবে। কারও মাঝে করোনার লক্ষণ দেখা দিলে তাকে আইসোলেশনে পাঠানো হবে।