Friday, April 18, 2025

সেকশন

English
Dhaka Tribune

দীর্ঘায়িত হচ্ছে বন্যা, ঈদের আগে মিলছে না মুক্তি

‘বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়ে বাড়বে বানভাসীদের ‍দুর্ভোগ। বিশেষ করে ব্রহ্মপুত্র অববাহিকায় আসন্ন কোরবানি ঈদের পরেও বন্যা পরিস্থিতি চলমান থাকতে পারে’

আপডেট : ২২ জুলাই ২০২০, ০৪:৫০ পিএম

স্বল্প বিরতি দিয়ে দুই দফা বন্যায় কুড়িগ্রামের নদ-নদী অববাহিকার অর্ধশতাধিক ইউনিয়নের তিন লক্ষাধিক মানুষ তিন সপ্তাহ ধরে পানিবন্দি হয়ে আছেন। 

জল-কাদা আর ভাঙনের সাথে নিত্য বসবাসকারী এসব মানুষের জন্য সহসা কোনও সুখবর নেই। জেলার নদ-নদী গুলোতে পানি বিপৎসীমার মধ্যে থেকে দুই তিনদিন কিছুটা কমার পর আবারও বাড়তে শুরু করেছে। স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) বলছে, বর্ষণ আর উজানের ঢলে আগামী কয়েকদিন পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে। এতে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়ে বাড়বে বানভাসীদের ‍দুর্ভোগ। সব মিলিয়ে ঈদুল আজহার আগে পানিবন্দি দশা ও ভোগান্তি থেকে মুক্তি মেলার সম্ভাবনা নেই বন্যা ‍দুর্গত মানুষের। 

চলমান বন্যায় জেলার চার শতাধিক চরসহ নদ-নদী অববাহিকার এলাকাগুলো যেন অখণ্ড জলরাশিতে রূপ নিয়েছে। অনেকে বাড়িঘর ছেড়ে বাঁধ, উঁচু সড়ক কিংবা আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই নিয়েছেন। কেউবা ভাঙনে বসত ভিটা হারিয়ে সর্বশান্ত হয়ে নিকট ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে দিশেহারা। এর সাথে যোগ হয়েছে খাদ্য সংকট। সব মিলিয়ে এক দুর্বিষহ ও ভয়াবহ মানবেতর পরিস্থিতির মোকাবিলা করছেন সহায়-সম্বলহীন-আশ্রয়হীন এসব মানুষ। বিগত কয়েক বছরে এতটা দীর্ঘায়িত বন্যার কবলে পড়েনি অববাহিকার বাসিন্দারা। ফলে দীর্ঘ মেয়াদী এ বন্যার ধকল সামলে ওঠা নিয়ে সংশয় আর অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। 

পাউবোর নিয়ন্ত্রণ কক্ষের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী বুধবার (২২ জুলাই) সকাল ৬ টা পর্যন্ত ব্রহ্মপুত্র, দুধকুমার, ধরলা ও তিস্তাসহ সব নদ-নদীর পানি আবারও বাড়তে শুরু করেছে। বিপৎসীমার ওপর দিয়ে বয়ে চলা ব্রহ্মপুত্র নদের পানি গত ২৪ ঘন্টায় নুনখাওয়া পয়েন্টে ১২ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপৎসীমার ৩৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে, চিলমারী পয়েন্টে ৮ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপৎসীমার ৫০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে  এবং ধরলা নদীর পানি সেতু পয়েন্টে ২৮  সেন্টিমিটার বেড়ে বিপৎসীমার ৬৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে  প্রবাহিত হচ্ছে। এছাড়া তিস্তার পানি কাউনিয়া পয়েন্টে ৩৩ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়েছে।

ঘরবাড়ি ডুবে যাওয়ায় আশ্রয় নিয়েছিলেন রাস্তায়, এখন সেটিও ডুবতে বসেছে। ঢাকা ট্রিবিউন

পাউবো সূত্র জানায়, স্থানীয় পর্যায়ে ভারী বর্ষণ আর উজানের ঢলে জেলার নদ-নদীগুলোর সবকটি পয়েন্টে পানি বাড়তে শুরু করেছে। ব্রহ্মপুত্র ও দুধকুমার নদের উজানে ভারতের আসাম, মেঘালয়, অরুণাচল প্রদেশ এবং ধরলা ও তিস্তার উজানে সাবহিমালয়, ওয়েস্ট বেঙ্গল ও সিকিম অংশে প্রচুর ভারী বৃষ্টিপাত হচ্ছে। উজানের বৃষ্টিপাতের পানি আগামী কয়েকদিন জেলার নদ-নদী দিয়ে ভাটির দিকে পতিত হবে। ফলে জেলার বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

বুধবার (২২ জুলাই) সকালে পাওয়া খবর অনুযায়ী জেলার তিস্তা অববাহিকার রাজারহাট ও উলিপুর উপজেলা এবং ধরলা ও ব্রহ্মপুত্র অববাহিকার উপজেলার বন্যা কবলিত এলাকাগুলোতে পানি বৃদ্ধি পেয়ে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হতে শুরু করেছে।

পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুল ইসলাম বলেন, “এবারের বন্যা বেশ দীর্ঘায়িত হচ্ছে। পূর্বাভাস অনুযায়ী পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে জেলার নদ-নদীর সবকটি পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার এক মিটার উচ্চতা অতিক্রম করতে পারে। ফলে বানভাসীরা সহসাই দুর্ভোগ থেকে মুক্তি পাচ্ছেন না। বিশেষ করে ব্রহ্মপুত্র অববাহিকায় আসন্ন কোরবানি ঈদের পরেও বন্যা পরিস্থিতি চলমান থাকতে পারে।”

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, “বন্যা দুর্গতদের সহায়তায় ইতোমধ্যে জেলার ৯ উপজেলায় মোট ১৯০ মেট্রিকটন চাল, নগদ ৯ লাখ টাকা, এবং ৪ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে যা বিতরণ চলমান রয়েছে। এছাড়াও শিশু ও গো খাদ্য বাবদ আরও দুই লাখ করে টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।”

জেলা প্রশাসক আরও বলেন, “ঈদ সামনে রেখে ভিজিএফ বাবদ ৪ হাজার ২৮৫ মেট্রিকটন চাল উপ-বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে যা ঈদের আগেই চার লক্ষাধিক পরিবারের মাঝে বিতরণ করা হবে।”


আরও পড়ুন - ‘একমুঠো চাল বা অন্তত একটি টাকা নিয়ে কনসার্টে আসুন’

   

About

Popular Links

x