সরকার গত বছর কোরবানির পশুর চামড়ার যে দাম নির্ধারণ করেছিল, এবার তার চাইতে ২০% থেকে ৩০% শতাংশ কমিয়ে দাম ধরা হয়েছে। অথচ সেই দামও পাচ্ছেন না মৌসুমি ব্যবসায়ীরা।
দেশে চামড়ার চাহিদার বেশিরভাগ অংশই পূরণ হয় কোরবানির ঈদে জবাই হওয়া পশু থেকে। এবার ৭০ লাখ গরু জবাই হবে বলে ধারণা করা হলেও হয়েছে ৫০ লাখের মতো বলে দাবি করছেন সংশ্লিষ্টরা। অন্যদিকে, ছাগল ২০ লাখ জবাই হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
গত সপ্তাহে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় চামড়া ব্যবসায়ীদের সাথে বৈঠক করে কোরবানির পশুর চামড়ার দাম নির্ধারণ করে দেয়। সেখানে, ঢাকায় লবণযুক্ত গরুর চামড়ার দাম প্রতি বর্গফুট ৩৫ থেকে ৪০ টাকা ধরা হয়। আর ঢাকার বাইরে ধরা হয় প্রতি বর্গফুট ২৮ থেকে ৩২ টাকা। সারা দেশে খাসির চামড়ার দাম নির্ধারণ করা হয় প্রতি বর্গফুট ১৩ থেকে ১৫ টাকা।
একটি বড় আকারের গরুর চামড়া গড়ে ৩৫-৪০ বর্গফুট, মাঝারি আকারের গরুর চামড়া গড়ে ২৫-৩০ বর্গফুট ও ছোট আকারের গরুর চামড়া গড়ে ১৫-২০ বর্গফুট হয়ে থাকে।
সেক্ষেত্রে সরকারের নির্ধারিত দাম অনুযায়ী বড় আকারের গরুর চামড়ার দাম পড়ার কথা ১২শ’ থেকে ১৬শ’ টাকা। মাঝারি গরুর চামড়ার দাম ৮০০ থেকে ১১০০ টাকা এবং ছোট আকারের গরুর চামড়ার দাম ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা হওয়ার কথা।
অথচ সরকার নির্ধারিত দাম অনুযায়ী গরুর যে চামড়ার দাম হওয়ার কথা ৭০০ থেকে ১,০০০ টাকা, সেটার দাম চাওয়া হচ্ছে ২০০ থেকে ৪০০ টাকা। এমন অবস্থায় অসংখ্য মৌসুমি ব্যবসায়ী তাদের কাছে থাকা কাঁচা চামড়াগুলো ফেলে দেওয়া ছাড়া আর কোনও উপায় দেখছেন না।
ট্যানারি মালিকদের দাবি, করোনাভাইরাসের কারণে চলতি বছর চামড়াজাত পণ্যের অর্ডার কম আসায় এবং রপ্তানি বন্ধ থাকায় প্রচুর কাঁচা চামড়া পড়ে রয়েছে। এজন্য তারা বেশি দাম দিতে চাইছে না।
এমন অবস্থায় চামড়ার দরপতন ঠেকাতে ঈদের মাত্র কয়েকদিন আগে ২৯ জুলাই কাঁচা ও ওয়েট ব্লু চামড়া রপ্তানির অনুমতি দেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
এতে ধারণা করা হচ্ছে যে চামড়ার চাহিদা বাড়বে এবং ব্যবসায়ীরা কাঁচা চামড়ার দাম পাবেন। তবে বিশ্বে চামড়াজাত পণ্যের চাহিদা অনেক কমে গিয়েছে। তাই তিন দশক পরে রপ্তানির অনুমোদন দেওয়া হলেও, এতে ব্যবসায়ীরা কতোটুকু লাভবান হবেন, সেটা নিয়ে প্রশ্ন থেকে গেছে।
প্রশ্ন উঠেছে বাজারে যদি কাঁচা চামড়ার দাম এতো কম হয় তাহলে চামড়াজাত পণ্যের দাম এতো বেশি কেন? এব্যাপারে চামড়াজাত পণ্য ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, কাঁচা চামড়ার অনেকটাই কাটিংয়ে বাদ পড়ে যায় সেইসঙ্গে এগুলো সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াজাত করতে বড় অংকের খরচ হয়, মজুরিও লাগে অনেক বেশি। যার প্রভাব চামড়াজাত পণ্যের দামের ওপর পড়ে।
তবে বাংলাদেশের চামড়া শিল্পকে এখনও সম্ভাবনাময় বলছেন অর্থনীতিবিদরা। সরকার যে রপ্তানি অনুমোদন দিয়েছে সে বিষয়ে যদি পূর্ণাঙ্গ নীতিমালা প্রণয়ন করা হয় তাহলে সম্ভাবনাময় এই খাত থেকে আয় করা সম্ভব হবে বলে আশা করা হচ্ছে।