টেকনাফ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাশের বিরুদ্ধে টেকনাফ থানায় হত্যা মামলা রুজু করা হয়েছে।
বুধবার (৫ আগস্ট) দিবাগত রাত সাড়ে ১০ টার দিকে আদালতের নির্দেশে টেকনাফ থানায় মামলাটি রুজু করা হয়। তবে এ বিষয়ে টেকনাফ থানার বর্তমান ওসি এসবি দোহার সাথে অসংখ্যবার মুঠোফোনে যোগাযোগ করেও সত্যতা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
জামিন অযোগ্য ধারায় মামলাটি রুজু হওয়ায় আইনগতভাবে ওসি প্রদীপসহ ৯ আসামির বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা বলা যাবে না, তবে তদন্ত কর্মকর্তারা চাইলে তদন্তের স্বার্থে যেকোনও সময় আসামিদের গ্রেফতার করতে পারেন, এমনটি জানিয়েছেন অভিজ্ঞ আইনজীবীরা।
কক্সবাজার জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট আয়াছুর রহমান বলেন, “কে কার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করবে? পরোয়ানা জারি করার ক্ষমতা রয়েছে একমাত্র আদালতের। উক্ত মামলাটি আদালত টেকনাফ থানাকে হত্যামামলা হিসেবে নথিভূক্ত করতে বলেছেন, গ্রেফতার করতে বলেননি। যেহেতু মামলার ধারাগুলো জামিন অযোগ্য, সেহেতু তদন্ত কর্মকর্তারা চাইলে তদন্তের স্বার্থে আসামিদের যেকোন সময় গ্রেফতার করতে পারেন। এটিকে গ্রেফতারি পরোয়ানা বলা যাবেনা।”
একই কথা বলেছেন কক্সবাজারের সিনিয়র আইনজীবী এডভোকেট মো. আব্দুর রহিম। তিনি বলেছেন, “তদন্ত কর্মকর্তাদের যদি সন্দেহ হয় যে আসামিরা পালিয়ে যেতে পারেন বা তদন্তের স্বার্থে তাদের প্রয়োজন, তাহলেই আসামিদের গ্রেফতার করা যাবে। এর আগে নয়। মামলা রুজু হলে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হবে তেমনটি নয়।”
টেকনাফ থানার এক বিশ্বস্ত সুত্র জানায়, “অবসর নেওয়া মেজর সিনহা মুহাম্মদ রাশেদ খান নিহতের ঘটনায় কক্সবাজার জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌসের দায়ের করা মামলা আদালতের নির্দেশে টেকনাফ থানায় রুজু করে। দণ্ডবিধি ৩০২, ২০১ ও ৩৪ জামিন অযোগ্য ধারায় মামলাটি নথিভুক্ত করা হয়। উক্ত মামলায় ওসি প্রদীপ ছাড়াও উক্ত মামলায় অন্যান্য আসামিরা হলেন- টেকনাফের বাহারছড়া শামলাপুর পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রে প্রত্যাহারকৃত পরিদর্শক লিয়াকত আলী, এসআই নন্দলাল রক্ষিত, কনস্টেবল সাফানুর করিম, কনস্টেবল কামাল হোসেন, কনস্টেবল আব্দুল্লাহ আল মামুন, এএসআই লিটন মিয়া, এসআই টুটুল, কনস্টেবল মো. মোস্তফা। তাদের মধ্যে ওসি প্রদীপ অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে আগেই ছুটি নিয়ে আত্মগোপনে গেলেও বাকি আসামিরা পুলিশ লাইনেই রয়েছে।”
এর আগে বুধবার (৫ আগস্ট) দুপুরে মেজর সিনহা হত্যার বিচার চেয়ে কক্সবাজার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা করেন বড়বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস। মামলাটির শুনানিতে সন্তুষ্ট হয়ে তা “ট্রিট ফর অ্যাফেয়ার” হিসেবে আমলে নিতে টেকনাফ থানাকে আদেশ দেন আদালতের বিচারক তামান্না ফারাহ্। একইভাবে মামলাটি কক্সবাজার র্যাব-১৫কে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে মামলা অগ্রগতির প্রতিবেদন আদালতে জমা দেয়ার নির্দেশ প্রদান করেন।
প্রসঙ্গত, শুক্রবার (৩১ জুলাই) রাত সাড়ে ১০টার দিকে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান। এ ঘটনায় চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমানকে প্রধান করে একটি উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জন ও নিরাপত্তা বিভাগ। একইভাবে তদন্তের স্বার্থে টেকনাফের বাহারছড়া তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ লিয়াকত আলিসহ ১৬ পুলিশ সদস্যকে প্রত্যাহার করা হয়।