বাংলাদেশে প্রথম করোনাভাইরাস শনাক্ত হওয়ার খবর প্রকাশের পাঁচমাস পূর্ণ হয়েছে শনিবার (৮ আগস্ট)। আর এই পাঁচমাসে শনাক্ত ও মৃতের সংখ্যা কিছুটা কমলেও সংক্রমণের হার এখনও ঊর্ধ্বমুখী আছে।
একইসাথে, ঈদকে কেন্দ্র বিপুলসংখ্যক মানুষের যাতায়াত এবং সকলের মাঝে সচেতনতা আগের চেয়ে কমে যাওয়ার কারণে সামনে দিনগুলোয় রোগীর সংখ্যা আরও বাড়তে থাকবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
কেন বাড়ছে সংক্রমণ?
সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে কোভিড-১৯ নমুনা পরীক্ষা বাড়ানো তো হয়নি বরং আগের চাইতে এই হার প্রায় ২৬% কমেছে। সেকারণে সাম্প্রতিক দিনগুলোয় শনাক্ত ও মৃতের সংখ্যাও কম আসছে বলে মনে করেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। নমুনা পরীক্ষা কমে যাওয়ার পেছনে মূলত চারটি কারণ তুলে ধরছেন বিশেষজ্ঞরা।
প্রথমত, বাংলাদেশের বিশাল জনপদ বন্যার কবলে পড়ায় সেখানে নমুনা সংগ্রহ করা যাচ্ছে না। দ্বিতীয়ত, নমুনা পরীক্ষার ক্ষেত্রে ফি আরোপ করা হয়েছে। তৃতীয়ত, নমুনা পরীক্ষা না করেই ভুয়া ফলাফল প্রকাশের নানা অভিযোগ উঠে আসায় মানুষের মধ্যে আস্থাহীনতা দেখা দিয়েছে। চতুর্থত, মানুষের মধ্যে আগের মতো উদ্বেগ নেই। কেউ নমুনা পরীক্ষাকে সেভাবে গুরুত্ব দিতে চাইছেন না।
তারপরও যে সীমিত হারে পরীক্ষা হচ্ছে সেখানে এখনও সংক্রমণের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। বিগত মাসগুলোয় নমুনা পরীক্ষার অনুপাতে শনাক্তের হার ছিল চার শতাংশ থেকে কুড়ি শতাংশের মধ্যে। কিন্তু এখন এই হার বেড়ে গড়ে ২০ থেকে ২৪ শতাংশের মতো আসছে। আর এই ঊর্ধ্বমুখী হার নির্দেশ করে যে বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব নিয়ন্ত্রণে আসেনি।
সরকার দুষছে সাধারণ মানুষকে
এদিকে পাঁচমাসেও সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে না আসার পেছনে মানুষের অসচেতনতাকেই দুষছেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক নাসিমা সুলতানা।
করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের মধ্যে কোরবানির ঈদে বিপুলসংখ্যক মানুষের এক জেলা থেকে আরেক জেলায় ভ্রমণ, পশুর হাটে জমায়েত এক কথায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ক্ষেত্রে মানুষের মাছে গা ছাড়া ভাব চলে আসায় সামনের এক থেকে দুই সপ্তাহের মধ্যে সংক্রমণের গ্রাফ আবারও ওপরের দিকে উঠে যেতে পারে বলে তিনি আশঙ্কা করছেন।
নাসিমা সুলতানা বলেন, "আমরা বারবার স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার কথা বলছি কিন্তু জনগণের মধ্যে সচেতনতা একদমই নেই। মানুষ যদি ব্যক্তি পর্যায়ে মেনে না চলে তাহলে এই ভাইরাস প্রতিরোধ করা আসলেও কঠিন।"
আগে ব্যবস্থাপনা তারপর কড়াকড়ি
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ফর্মুলা অনুযায়ী কোন দেশে যদি পরপর তিন সপ্তাহ নতুন রোগী শনাক্তের হার নিম্নমুখী থাকে তাহলে ধরে নেওয়া হয় ওই দেশটিতে সংক্রমণ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এসেছে। কিন্তু বাংলাদেশের সংক্রমণের হার পাঁচমাস ধরেই ঊর্ধ্বমুখী।
তবে, সরকার যদি এখন থেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিষয়ে কড়াকড়ি আরোপ করে তাহলে সেপ্টেম্বরের শেষ নাগাদ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসতে পারে বলে আশা করছেন বিশেষজ্ঞরা।
করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের শুরুতে যেসব দেশ আক্রান্ত হয়েছিল বিশেষ করে চীন ও ইতালিতে সংক্রমণ শুরু হওয়া থেকে সর্বোচ্চ শিখরে উঠে আবার নেমে যেতে সময় লেগেছিল তিন থেকে চারমাস। কিন্তু বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে খুব ধীর প্রবণতা দেখা গেছে।
এমন অবস্থায় শনাক্তের সংখ্যার হিসেবে বাংলাদেশ বৈশ্বিক তালিকায় বর্তমানে ১৫তম স্থানে উঠে এসেছে।