নারায়ণগঞ্জে নৌকায় করে বেড়াতে নিয়ে গিয়ে ৫ম শ্রেণির এক ছাত্রীকে গণধর্ষণের পর হত্যা করে মরদেহ শীতলক্ষ্যা নদীতে ফেলে দেওয়ার ঘটনায় কথিত প্রেমিক ও তার সহযোগীদের গ্রেফতার করেছে পুলিশ। রবিবার (৯ আগস্ট) বিকেলে জেলা সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মিল্টন হোসেন ও জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আহমেদ হুমায়ুন কবিরের পৃথক আদালতে তিন আসামির জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সদর মডেল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) শামীম আল মামুন ঢাকা ট্রিবিউনকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
আসামিরা হলেন- বন্দর উপজেলার বুরন্ডি খলিলনগর এলাকার আব্দুল্লাহ (২২), বুরন্ডি পশ্চিমপাড়া এলাকার রকিব (১৯) ও নৌকার মাঝি খলিলুর রহমান (৩৬)।
নিহত কিশোরীর (১৫) দেওভোগ পাক্কা রোড সরকারি প্রাইমারি স্কুলের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী ছিল। তার বাবার নাম জাহাঙ্গীর হোসেন।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গত ৪ জুলাই থেকে নিখোঁজ ছিল জিসা মনি। এর এক মাস দু’দিন পর (৬ আগস্ট) নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানায় অপহরণ মামলা করেন তার বাবা।
মামলার বাদীর দাবি, “মেয়েকে স্কুলে যাওয়া-আসার পথে প্রেমের প্রস্তাব দিতো অভিযুক্ত আব্দুল্লাহ্। একাধিকবার নিষেধ করা হলে সে মেয়েকে অপহরণের হুমকি দেয়। গত ৪ জুলাই সন্ধ্যায় আব্দুল্লাহ্ ফোনে ঠিকানা দিলে আমার মেয়ে সেই ঠিকানায় যায়। পরে তাকে অপহরণ করে আব্দুল্লাহ্ ও তার সহযোগীরা।”
এদিকে, অপহরণের ঘটনা তদন্ত করতে গিয়ে বেরিয়ে আসে চাঞ্চল্যকর তথ্য।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শামীম আল মামুন ঢাকা ট্রিবিউনকে জানান, অপহরণ মামলার পর মেয়েটির মায়ের মুঠোফোনের কললিস্ট চেক করে রকিবের সন্ধান পাওয়া যায়। রকিবের মোবাইল নম্বর দিয়েই আব্দুল্লাহ্ নিহত কিশোরীর সঙ্গে যোগাযোগ করতো। ঘটনার দিনও ওই নম্বর দিয়ে কল করে সে। রকিবকে গ্রেফতারের পর আব্দুল্লাহ্কে গ্রেফতার করলে সে-ও নৌকার মাঝি ধর্ষণ ও হত্যার বিষয় স্বীকার করে। তার দেওয়া তথ্যানুযায়ী পরবর্তীতে মাঝি খলিলুর রহমানকে গ্রেফতার করা হয়।
আসামির জবানবন্দির বরাতে পুলিশ জানায়, ঘটনার তিন মাস আগে আব্দুল্লাহ্র সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে মেয়েটির। গত ৪ জুলাই বিকেলে বন্ধু রকিবের ইজিবাইকে বন্দরের বিভিন্ন জায়গায় ঘোরাঘুরি করে তারা। সন্ধ্যায় শহরের ৫ নম্বর ঘাট থেকে নৌকা ভাড়া করে শীতলক্ষ্যা নদীতে ঘুরতে থাকে তারা। একপর্যায়ে নৌকায় মেয়েটিকে ধর্ষণ করে কথিত প্রেমিক আব্দুল্লাহ্ ও মাঝি খলিলুর রহমান। মেয়েটি সবাইকে জানিয়ে দেওয়ার ভয় দেখালে অভিযুক্তরা তাকে শ্বাসরোধে হত্যা করে। পরে রাত ৯টার দিকে বন্দর ইস্পাহানী ঘাটের উত্তর পাশে মরদেহটি ফেলে দেওয়া হয়।
সদর মডেল থানার উপ-পরিদর্শক শামীম আল মামুন জানান, ভুক্তভোগী কিশোরীর মরদেহ এখনও উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। ধারণা করা হচ্ছে, নদীর স্রোতে ভেসে গেছে। আসামীদের কারাগারে পাঠানো হয়েছে।