Friday, March 28, 2025

সেকশন

English
Dhaka Tribune

দেশে করোনাভাইরাসে কম মৃত্যুহারের সম্ভাব্য কারণ জানালে বিশেষজ্ঞরা

'বিশেষ করে দরিদ্রদের মধ্যে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা আরও শক্তিশালী'

আপডেট : ২১ আগস্ট ২০২০, ০১:১৩ পিএম

দুর্বল স্বাস্থ্য অবকাঠামোর পাশাপাশি ঘনবসতিপূর্ণ দেশ হওয়া সত্ত্বেও ওয়ার্ল্ডোমিটারের তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত করোনাভাইরাসে মৃত্যুর হার অনেক কম।

বিশ্বের করোনাভাইরাস পরিস্থিতি সংক্রান্ত নানা তথ্য প্রদানকারী এ ওয়েবসাইটের পরিসংখ্যান অনুসারে, করোনায় বিশ্বব্যাপী গড় মৃত্যু হার ৩ দশমিক ৫৪ শতাংশের বিপরীতে বাংলাদেশে এ হার ১ দশমিক ৩ শতাংশ।

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা এর পেছনের সঠিক কারণ সম্পর্কে এখনও নিশ্চিত না হলেও তাদের মতে, জনসংখ্যার বৈশিষ্ট্য, মানুষের শক্তিশালী রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা, বিস্তৃত টিকাদান ব্যবস্থাসহ এ ধরনের বিভিন্ন কারণে এখানকার মানুষরা করোনাভাইরাস থেকে নিজেদের সুরক্ষা করার পাশাপাশি দ্রুত সুস্থও হয়ে উঠতে পারছেন।

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ২০ আগস্ট পর্যন্ত মোট ৩ হাজার ৮২২ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং মোট শনাক্ত হওয়া রোগীর সংখ্যা পৌঁছেছে ২ লাখ ৮৭ হাজার ৯৫৯ জনে।

এখন পর্যন্ত মোট মারা যাওয়াদের মধ্যে পুরুষ ৩ হাজার ১৯ জন বা ৭৮ দসহমিক ৯৯ শতাংশ এবং নারী ৮০৩ জন বা ২১ দশমিক ১ শতাংশ। শনাক্ত বিবেচনায় মোট মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৩৩ শতাংশ।

ওয়ার্ল্ডোমিটারের মতে, ১৭ আগস্ট পর্যন্ত গড় বৈশ্বিক মৃত্যুর হার প্রায় ৩ দশমিক ৫৪ শতাংশ যেখানে যুক্তরাষ্ট্রে এ হার ৩ দশমিক ১ শতাংশ, ব্রাজিলে ৩ দশমিক ২ শতাংশ, চীনে ৫ দশমিক ৫ শতাংশ, যুক্তরাজ্যে ১০ শতাংশ, ইতালিতে ১৪ শতাংশ, স্পেনের ৮ শতাংশ, রাশিয়ায় ১ দশমিক ৭ শতাংশ, ভারতে ১ দশমিক ৯ শতাংশ এবং পাকিস্তানে ২ দশমিক ১ শতাংশ।

জনবহুল দেশ হওয়ার পরও অন্যান্য অনেক দেশের তুলনায় বাংলাদেশে করোনাভাইরাসে মৃত্যুর হার অনেক কম উল্লেখ করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) প্রখ্যাত ভাইরোলজিস্ট ও সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বলেন, “আমরা এর পেছনের সঠিক কোনো কারণ বলতে পারছি না। কারণ এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো বৈজ্ঞানিক গবেষণা হয়নি। তবে আমি মনে করি, মূলত দুটি কারণ রয়েছে- জনতাত্ত্বিক এবং শারীরবৃত্তীয়।”

 তিনি বলেন, করোনায় মৃত্যুর হার কেবল বাংলাদেশে নয়, আফ্রিকাসহ অন্যান্য দেশেও খুব কম। কারণ তাদের জনসংখ্যার বেশির ভাগই তরুণ।

তরুণদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি থাকে এবং তারা দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠতে পারে উল্লেখ করে অধ্যাপক নজরুল বলেন, “আমাদের ৬০ বছর বা তার বেশি বয়সের জনসংখ্যা রয়েছে ১০ শতাংশেরও কম। তবে এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে তাদের মধ্যে মৃত্যুর হার ৫০ শতাংশেরও বেশি। তাই আমরা বলতে পারি যে করোনা থেকে সুস্থ হওয়ার ক্ষেত্রে বয়স একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।”

এছাড়া সাধারণ মানুষ, বিশেষ করে দরিদ্রদের মধ্যে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা আরও শক্তিশালী মনে হচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

এ বিশেষজ্ঞ বলেন, “আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশ (আইসিডিডিআরবি)-এর সহযোগিতায় সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) পরিচালিত সাম্প্রতিক এক জরিপ অনুযায়ী, রাজধানীর নয় শতাংশ মানুষের মধ্যে কোভিড-১৯ সংক্রমিত হয়েছে, যেখানে বস্তিতে বসবাসকারী মাত্র ছয় শতাংশ মানুষ এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন এবং তাদের মৃত্যুর হারও কম।”

অধ্যাপক নজরুল বলেন, “আমাদের দেশের মানুষ যেহেতু সাধারণভাবে বিভিন্ন ভাইরাস ও ফ্লুতে আক্রান্ত হন এবং বিভিন্ন টিকা ও ওষুধ গ্রহণ করেন, এ জন্য তাদের শরীরে প্রাকৃতিক কিছু প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা রয়েছে যা তাদের ভাইরাস প্রতিরোধে সহায়তা করছে।”

রোগ প্রতিরোধমূলক, হরমোনজনিত এবং জিনগত কারণে বাংলাদেশে পুরুষদের তুলনায় নারীদের মধ্যে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার খুব কম বলেও জানান তিনি।

সাবেক এ উপাচার্য বলেন, “বাংলাদেশে করোনা পরিস্থিতির তেমন উন্নতি হয়নি কারণ এখনও দেশে গড়ে প্রতিদিন ৩০ জনের মৃত্যু হচ্ছে। মৃত্যুর হার কম হলেও, এখনও অনেক মানুষ এ ভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছেন এবং মারা যাচ্ছেন। তাই প্রাণঘাতী এ ভাইরাস থেকে বাঁচতে আমাদের প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা আরও জোরদার করতে হবে।"

বিশিষ্ট মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ডা. এবিএম আবদুল্লাহ বলেন, বৈজ্ঞানিক গবেষণা ছাড়া কেউ নিশ্চিত হয়ে বলতে পারবে না যে বাংলাদেশে করোনাভাইরাসে মৃত্যুর হার কেন এত কম। 

“তবে অনুমান করতে পারি, অন্যান্য আক্রান্ত দেশের তুলনায় বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের তীব্রতা কম। তথ্য যাচাই করলে দেখা যায়, যাদের শরীরে অন্য কোনো জটিল রোগ রয়েছে, বাংলাদেশে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে তারাই করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যাচ্ছেন এবং যাদের সে ধরনের সমস্যা নেই তারা দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠছেন,” বলেন তিনি।

ডা. আবদুল্লাহ আরও বলেন, “দিনমজুর, রিকশাচালক এবং বস্তিবাসীসহ সাধারণ জনগণের একটি বিশাল অংশই কঠোর পরিশ্রম করেন। এ ধরনের মানুষের শরীরে প্রাকৃতিকভাবেই রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা শক্তিশালী থাকায় তারা সহজেই করোনাভাইরাস প্রতিরোধ করতে পারছেন।”

 এছাড়া বিভিন্ন রোগের প্রতিরোধক টিকা গ্রহণ করায় বাংলাদেশে শিশুদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী হয় বলে জানান তিনি।

 ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পপুলেশন সায়েন্স বিভাগের অধ্যাপক একেএম নুরুন নবী জানান, দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৭ দশমিক ৫ শতাংশ প্রবীণ বা ৬৫ বছরের বেশি বয়সের মানুষ।

 তিনি বলেন, “রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হারিয়ে ফেলায় প্রবীণরা সাধারণত বিভিন্ন দীর্ঘস্থায়ী ও গুরুতর রোগে আক্রান্ত হন। এ জন্য সারা বিশ্বে কোভিড-১৯ রোগীদের মৃত্যুর হার অনেক বেশি। তবে যুক্তরাষ্ট্র, চীন এবং ইউরোপ, এমনকি প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশ অনেক ভালো অবস্থানে রয়েছে কারণ আমাদের দেশে বয়স্ক মানুষের সংখ্যা (৭৫ বছরের বেশি) কম। আর এ জন্য আমাদের দেশে করোনায় মৃত্যুর হারও অন্যান্য দেশের তুলনায় কম।”

   

About

Popular Links

x