নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় পরকীয়া সন্দেহের জেরে জামাল (৫৪) নামে এক প্রবাসীকে হত্যার পর গোপনে দাফনের চেষ্টার ঘটনায় নিহতের স্ত্রী, ছেলে ও মেয়েকে আটক করেছে পুলিশ।
বুধবার (২৬ আগস্ট) সন্ধ্যায় নিহতের বড় ভাই আব্দুল মান্নান বাদী হয়ে ফতুল্লা মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। ফতুল্লা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আসলাম হোসেন ঢাকা ট্রিবিউনকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
এর আগে, এদিন সকালে ফতুল্লার দাপা ইদ্রাকপুর এলাকার বাড়ি থেকে নিহতের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। গোপনে দাফনের সময় স্থানীয়দের মাধ্যমে খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে নিহতের মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে পাঠায়।
এ ঘটনায় আটক করা হয়েছে- নিহতের স্ত্রী শারমীন আক্তার (৪০), মেয়ে সামিয়া আক্তার (২৭) ও ছেলে তানভীর হোসেন ডালিম (২০)-কে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, নিহত জামাল ২৭ বছর সৌদি আরবে থাকার পর দেড় বছর আগে দেশে ফিরে ফতুল্লায় থাকতে শুরু করেন। দেশে ফেরার পর পরকীয়া সন্দেহে স্ত্রী শারমিন আক্তার ডলি’র সঙ্গে তার কলহ শুরু হয়। স্ত্রী শারমিনও জামালকে সন্দেহ করতে শুরু করে। বিষয়টি নিয়ে তাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলছিলো।
সূত্র আরও জানায়, মূলতঃ মঙ্গলবার রাত আড়াইটার দিকে বাড়ির বাথরুম থেকে রক্তাক্ত অবস্থায় জামালকে উদ্ধার করে স্বজনরা। পরিবারেরক লোকজন হাসপাতালে না নিয়ে তাকে দাফনের কথা ভাবতে থাকে। সকালে দাফনের চেষ্টাও করা হয় কিন্তু এর আগে স্থানীয়দের কাছ থেকে খবর পেয়ে পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে।
প্রাথমিক তদন্তের বরাত পুলিশ জানিয়েছে, পরস্পরকে সন্দেহ করে আসছিল ওই দম্পতি। বিষয়টি নিয়ে পারিবারিক দ্বন্দের জেরে জামালকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে তার স্ত্রী ও সন্তানরা। হত্যার ঘটনা ঢাকতে গোপনে মরদেহ দাফনের চেষ্টা করে তারা।
তবে নিহতের মেয়ে সামিয়া আক্তারে দাবি, “বাবা রাত এগারোটার দিকে রাতের খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পড়েন। রাত আড়াইটার দিকে ঘুম ভাঙলে খাবার ঘরে আলো জ্বলকে দেখে সেখানে গেলে দেখি বাবাকে বাথরুমের ভেতরে পড়ে আছে।”
তখন সে মা ও ভাইকে ডেকে তোলে। পরবর্তীতে তাদের ডাক চিৎকারে বাড়ির ভাড়াটিয়ারা এসে বাথরুম থেকে বাবাকে বের করে নিয়ে আসে। কিন্তু অ্যাম্বুলেন্স না পাওয়ায় তাকে আর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়নি।
“তাছাড়া পাশ্ববর্তী ভাড়াটিয়া ও আশপাশের বাবা মারা গেছে বলে মত দেওয়ায় আর তাকে হাসপাতালে নিয়ে যায়নি পরিবারের লোকজন।”
এ বিষয়ে ফতুল্লা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আসলাম হোসেন ঢাকা ট্রিবিউনকে বলেন, নিহতের শরীর ও মাথায় ভারী জিনিসের আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। প্রাথমিক তদন্তে হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে। এ ঘটনায় নিহতের বড় ভাই নিহতের স্ত্রী ও দুই সন্তানদের আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে।