বিভিন্ন রাইড সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের কল্যাণে বাংলাদেশে মোটরসাইকেল চালকের সংখ্যা দিন দিন আকাশচুম্বী হলেও সেই আনুপাতে বাড়েনি লাইসেন্সধারী চালকের সংখ্যা।
অধিকাংশ মোটরসাইকেল চালকই নিয়ম ভঙ্গ করে থাকেন এবং নিয়ম ভঙ্গের তালিকায় সবার উপরেই রয়েছেন মোটরসাইকেল চালকরা।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ সংস্থা (বিআরটিএ) জানিয়েছে ২০১৮ সালের জুলাই মাস পর্যন্ত ২.২৭ মিলিয়ন মোটরসাইকেল দেশে নিবন্ধিত হয়েছে। যদিও, ড্রাইভিং লাইসেন্স নিবন্ধিত হয়েছে মাত্র ৯,২৬,০০০ চালকের, যার মধ্যে ১,০৩,০০০ চালক পেশা হিসেবে মোটরসাইকেল চালান।
নিরাপদ সড়কের আন্দোলনকারীরা জানায় দেশের গ্রামাঞ্চলে ব্যবসায়িক কাজে মোটরসাইকেল ব্যবহাহৃত হলেও রাজধানীতে অধিকাংশ মোটরসাইকেল রাইড সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের হয়ে কাজ করে।
জাতীয় জাহাজ, সড়ক ও রেলওয়ে প্রতিরক্ষা কমিটির সাধারণ সম্পাদক আশিস কুমার দে বলেন, এটা সত্যি যে সহজেই কাছের দূরত্ব অতিক্রম করা যায় বলে মোটরসাইকেলের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে কিন্তু, একই সাথে বাড়ছে লাইসেন্স বিহীন চালকের সংখ্যাও। গ্রামাঞ্চলে অধিকাংশ মোটরচালক আয়ের উৎস হিসাবে যাত্রী পরিবহণ করলেও তারা আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রাত্যহিক পর্যবেক্ষণের বাইরেই থেকে যায় সব সময়’।
বিআরটিএ’র এক কর্মকর্তা বলেন, ‘গ্রামাঞ্চলের অধিকাংশ মোটরচালকই রাজনৈতিক কর্মী অথবা ক্যডার হওয়ায় তারা শাস্তি থেকে রেহাই পেয়ে যান। এদেরকে যদি শাস্তির আওতায় আনা যায় তাহলে বেপোরয়া মোটরচালনা অনেকটাই কমে যাবে’।
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সইতির সাধারণ সম্পাদক মোজাম্মেল হক বলেন, ‘যথেষ্ট পরিমাণে গণপরিবহন না থাকায় মানুষ বিকল্প হিসেবে মোটরসাইকেল কিনছে। তবে অধিকাংশ মোটরসাইকেল ক্রেতাই ড্রাইভিং লাইসেন্স সম্পর্কে একদম উদাসীন থাকেন। যে কারণে রাজধানীতে বাইকের সঙ্খ্যা বাড়লেও, বাড়েনি লাইসেন্সধারী চালকের সংখ্যা’।
তিনি আরও বলেন, ‘অধিকাংশ মোটরচালকই আইন মানেননা। তাদের কারণে দূর্ঘটনা ঘটলেও তারা অধইকাংশই অল্প শাস্তি পেয়েই বেঁচে যান তারা’।
তিনি এসব বলার সময় মোটরচালকদের জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণের দাবীও তোলেন।
যদিও সাম্প্রতিক নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের ফলে পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। আন্দোলনকারীরা মানুষের মধ্যে এক ধরনের সচেতনতা তৈরী করেছে। আন্দোলনের পর ১০ দিন ব্যাপী ট্রাফিক সপ্তাহ আয়োজন করে পুলিশ। যাতে পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়।
ডিএমপির তথ্য মতে, ট্রাফিক সপ্তাহ চলাকালীন সময়ে ৮৮,২৯৩ টি মামলা করা হয়েছে যার মধ্যে ৪৩,৮৬৩ টি মামলাই লাইসেন্স বিহীন চালকদের বিরুদ্ধে।
সরকার, পুলিশ ও আদালত থেকে ট্রাফিক আইন বাস্তবায়নে চলার পথে বিভিন্ন আইন নিষেধাজ্ঞা জারি করলেও বাস্তবে এইসব আইন অথবা নিষেধাজ্ঞার কোন প্রয়োগ নেই।
২০১২ সালের মার্চে ফুটপাথে মোটরসাইকেল চালানো নিষিদ্ধ ঘোষণা করে উচ্চাদালত। এরপর, পুলিশ একজনের বেশী যাত্রী বহন ও হেলমেট ছাড়া মোটরসাইকেল চালানো নিষিদ্ধ করে। সম্প্রতি, প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকেও পথচারী ও সড়ক নিরাপত্তা বিষয়ক নির্দেশনা দেওয়া হয়।
এসবের পরও অধিকাংশ মোটরসাইকেল চালকরা এই নিয়ম নীতির কোন কিছুই মানতে চান না। ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার মোসলেহ উদ্দীন আহমেদ অধিকাংশ সড়ক দুর্ঘটনার জন্য মোটরসাইকেল আরোহীদের দায়ী করেন।
তিনি বলেন, ‘মোটরচালকরাই সবচেয়ে বেশী আইনভঙ্গ করে। ট্রাফিক সপ্তাহে দেওয়া অধিকাংশ মামলাই মোটরচালকদের বিরুদ্ধে করা হয়। ভারী যানবহন নিয়ন্ত্রণ করা সহজ হলেও মোটোরসাইকেল নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন যদি চালকদের সদিচ্ছা না থাকে’।
ডিএমপির এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা বলেন, ‘নগরীর ৪০টি পয়েন্টে চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। এইসব চেকপোস্টে বাইকারদের আইন অনুযায়ী নিয়ন্ত্রণ করতে বিশেষ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে’।
গ্রামাঞ্চলের মোটরসাইকেল চালকদের ব্যপারে তিনি বলেন, ‘গ্রামে তো লাইসেন্স ছাড়া বাইক চালানো একটা প্রথার মতো হয়ে গেছে। হাইওয়ে পুলিশের এ ব্যপারে কঠোর হপবার সময় এসেছে’।
বুয়েটের দূর্ঘটনা গবেষণা সংস্থার (এআরএই) কর্মকর্তা অধ্যাপক কাজী সাইফুন নেওয়াজ বলেন, ‘সরকার ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য বিআরটিসির ৩ মাসের প্রশিক্ষণ বাধ্যতামূলক করলে মানুষের ইচ্ছা অনুযায়ী মোটরসাইকেল কেনা বন্ধ হয়ে যাবে’।