Wednesday, March 19, 2025

সেকশন

English
Dhaka Tribune

পুকুরে বিষ প্রয়োগ, ঢাবি শিক্ষার্থীর স্বপ্ন ধূলিসাৎ

তার নিম্নবিত্ত পরিবারের পক্ষে এতবড় ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার সাধ্য নেই। এখন ধারদেনা কিভাবে শোধ করবেন, সেই চিন্তায় অস্থির হয়ে আছেন তিনি

আপডেট : ২৫ অক্টোবর ২০২০, ০৫:২৭ পিএম

২০১৬ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগ স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেছিলেন সিরাজুল ইসলাম। পড়াশোনা শেষে চাকরির জন্য কিছুদিন চেষ্টাও করেছেন তিনি। কিন্তু পরিস্থিতি বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত পাল্টে ছুটে যান গ্রামে। কৃষি খামার গড়ে তুলতে একটি পুকুর ইজারা নিয়ে ধারদেনা করে প্রায় ৬ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেন। আর কিছুদিন পর মাছ বিক্রি করার কথা ছিল। কিন্তু দুর্বৃত্তরা সোমবার (১৯ অক্টোবর) রাতে কোনো এক সময় পুকুরে বিষ প্রয়োগ করে তার স্বপ্ন ধূলিসাৎ করে দিয়েছে। 

চার ভাই ও এক বোনের মধ্যে সিরাজুল ইসলাম দ্বিতীয়। নওগাঁর ধামইরহাট উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকা চৌঘাট গ্রামের নিন্মবৃত্ত পরিবারে বেড়ে ওঠা।

সিরাজুল ইসলাম জানান, মিশ্র পদ্ধতিতে কার্প জাতীয় মাছে চাষ করেছিলেন তিনি। পুকুর ইজারা বাদেও প্রায় ৬ লাখ টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছিল। মাছও বিক্রির উপযোগী হয়ে গিয়েছিল। প্রায় ৯০-১০০শ মন মাছ পুকুরে ছিল। যার আনুমানিক মূল্য প্রায় ১৫ লাখ টাকা। এ মাছকে ঘিরেই একটু একটু করে স্বপ্ন দেখছিলেন তিনি।  

কিন্তু সোমবার (১৯ অক্টোবর) রাতের কোনো এক সময়ে তার পুকুরে বিষ ঢেলে দেওয়া হয়েছে। পরদিন মঙ্গলবার (২০ অক্টোবর) সকাল থেকে মাছ মরে ভেসে উঠতে থাকে। যেখানে প্রায় ৭ লাখ টাকার মতো ক্ষতি হয়েছে। কিন্ত তার নিম্নবিত্ত পরিবারের পক্ষে এতবড় ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার সাধ্য নেই। এখন ধারদেনা কিভাবে শোধ করবেন, সেই চিন্তায় অস্থির হয়ে আছেন তিনি। 

এ ঘটনায় তিনি বাদী হয়ে তার গ্রামের আজিজুল হক, সাহাবর হোসেন ও সাগর নামে তিন ব্যক্তিকে আসামি করে বুধবার (২১ অক্টোবর) রাতে মামলা করেন। পরে আজিজুল ও সাগরকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। 

সিরাজুল ইসলাম বলেন, “আমার স্ত্রী ধামইরহাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সিনিয়র নার্স। তার জমানো টাকা ও ধারদেনা করে পুকুর ইজারা নিয়েছিলাম। আর কয়েক দিন পর মাছগুলো বিক্রি করার কথা ছিল। কিন্তু দুর্বৃত্তরা আমার সেই স্বপ্নকে ধূলিসাৎ করে দিয়েছে। এখন পর্যন্ত প্রায় ৪০-৫০% মাছ মরে ভেসে উঠেছে। যেখানে প্রায় ৭ লাখ টাকার মতো ক্ষতি হয়েছে। এখনো মাছ মরে ভেসে উঠছে।”

তিনি বলেন, “ওই পুকুর যখন এক একর পরিমাণ জলা ছিল তখন আসামিরা ইজারা নিয়ে মাছ চাষ করেছিল। সেখানে তারা সফল হতে পারেনি। পরবর্তীতে পুকুর মালিক আবারও খনন করে পুকুরের আয়তন বড় করে। এরপর আমি পুকুরটি চাষের জন্য ইজারা নিয়েছি। আসামিরা পুকুরটি ইজারা নিতে না পারায় ক্ষোভের বশে পুকুর বিষ প্রয়োগ করে আমার ক্ষতি করার চেষ্টা করছে। ধারদেনা করে যে টাকা দিয়ে মাছ চাষে বিনিয়োগ করেছি তা পরিশোধ করা নিয়ে দুঃশ্চিন্তায় পড়েছি।”

সিরাজুল ইসলাম আরও বলেন, “আমি কষ্ট করে পড়াশোনা শেষ করেছে। আর দশজনের মতো চাকরির পেছনে না ছুটে উদ্যোক্তা হতে চেয়েছিলাম। তাই ধারদেনা করে পুকুরে মাছ চাষ শুরু করি। কিন্তু আমার সেই সাধ শেষ হয়ে যাবার পথে। আমি এদের বিচার চাই।”

ধামইরহাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল মতিন বলেন, “ঘটনায় তিনজনকে আসামি করে বুধবার রাতে মামলা হয়েছে। মামলার পর রাতেই দুইজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।” 

   

About

Popular Links

x