নাটোরের উত্তরা গণভবনের রাস্তা প্রশস্তকরণের সময় কাজের সুবিধার অজুহাতে সড়কের শেষ বিন্দুর ৬ ফুটের মধ্যে থাকা গাছগুলো কাটার উদ্যোগ নিয়েছিল সড়ক ও জনপথ বিভাগ। তবে গাছ না কেটেই রাস্তা প্রশস্তকরণের কাজ শেষে গত ৬ মাস ধরে রাস্তাটিতে যানবাহন চলছে। ঠিক এমন সময়ে রাস্তা প্রশস্তকরণের সুবিধার জন্য যেসব গাছ কাটার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল সেসব গাছ কাটা শুরু হয়েছে। এ ঘটনায় বিস্ময় প্রকাশ করেছে স্থানীয়রা।
মঙ্গলবার (৩ নভেম্বর) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সকাল থেকেই গণভবন রাস্তার পাশের বিশালাকার গাছগুলো কাটা শুরু হয়েছে। গাছ কাটায় নিযুক্ত শ্রমিকদের সঙ্গে তদারকির দায়িত্বে নিয়োজিত এক ব্যক্তি জানান, গাছগুলোর টেন্ডার আগেই করা হয়েছিল। ওয়ার্ক অর্ডার পেয়ে গাছগুলো কাটা হচ্ছে।
তবে এ ঘটনায় বিস্মিত হয়েছেন স্থানীয়রা। তাদের ভাষ্য রাস্তা প্রশস্তকরণের সুবিধার জন্য গাছগুলো কাটার কথা ছিল, কিন্তু গাছ কাটা ছাড়াই রাস্তা প্রশস্ত হয়েছে, গাড়িও চলাচল করছে গত ৬ মাস ধরে। তাহলে এখন কেন গাছ কাটার প্রয়োজন পড়ল?
দিঘাপতিয়া এমকে কলেজ মোড়ের দোকানী আলাল জানান, রাস্তাটি যে পরিমাণ প্রশস্ত করা হয়েছে তাতে কোনো গাছ বাধা হয়নি। এখন ওই গাছগুলোই রাস্তার সৌন্দর্য বাড়ানোর সাথে সাথে পথচারীদের প্রশান্তি দেয়। কোনো প্রয়োজন ছাড়াই এখন গাছগুলো কাটা দেখে তারা মর্মাহত হয়েছেন।
কলেজপাড়ার অধিবাসী বাবু জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ জেলা পরিষদের সকলেই গাছপ্রেমী। বৈশ্বিক উষ্ণতা ও জলবায়ুকেন্দ্রীক চিন্তায় প্রতি বছরই গাছ লাগানোর আহ্বান জানাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী। অথচ প্রধানমন্ত্রীর উত্তরা বাসভবনে যাতায়াতের রাস্তার পাশের সৌন্দর্যবর্ধক গাছগুলো কারণ ছাড়াই কাটা হচ্ছে- এটা সত্যিই দুঃখজনক। এ ব্যাপারে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ারও দাবি জানান তিনি।
এদিকে, গাছ কাটার বিষয়ে জানতে চাইলে নাটোর সড়ক ও জনপথ বিভাগের প্রকৌশলী আব্দুর রহিম জানান, টেন্ডার প্রক্রিয়া শেষেই ওই গাছগুলো কাটা হচ্ছে। তবে জায়গা জেলা পরিষদের দাবি করে এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্টদের সাথে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেন তিনি।
নাটোর জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী ফরহাদ আলী বলেন, ওই রাস্তার জায়গা জেলা পরিষদের হলেও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব সড়ক বিভাগের। রাস্তাটি প্রশস্তকরণের সময় সড়ক বিভাগের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে যাবতীয় প্রক্রিয়া শেষে টেন্ডার আহবান করা হয়। এরপর বনবিভাগের মাধ্যমে মূল্যনির্ধারণ শেষে ৬৫-৬৭টি গাছ ৩ লাখ টাকায় টেন্ডারের মাধ্যমে বিক্রি করা হয়। তিনদিন আগে ওয়ার্ক অর্ডার দিয়ে সাতদিনের মধ্যে গাছগুলে কাটতে বলা হয়েছে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “গাছগুলো কাটার দাবি জানিয়ে প্রক্রিয়া শেষ করার সময় না দিয়েই রাস্তার কাজ শুরু করায় গাছ কাটতে এত দেরি হয়েছে। রাস্তার কাজ শেষে প্রায় ৬ মাস আগে যান চলাচল শুরু হয়েছে।
রাস্তার কাজই যদি শেষ হয়, তবে এখন গাছ কাটার প্রয়োজন পড়ল কেন, এমন প্রশ্নের জবাবে ফরহাদ আলী বলেন, “কাজ শেষ হলেও গাছ কাটতে সড়ক বিভাগের যুক্তি হলো- গাছগুলো না কাটলে ভবিষ্যতে ওই গাছের শেকড় রাস্তার ক্ষতি করতে পারে।”