Wednesday, June 25, 2025

সেকশন

English
Dhaka Tribune

ধীর গতিতে ফের বাড়ছে করোনাভাইরাস সংক্রমণের হার

শুধু শীতের আগমন নয়, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে মানুষের উদাসীনতাও সংক্রমণের হার সাম্প্রতিক সময়ে আবারও বাড়তে শুরু করার অন্যতম কারণ বলে মনে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা

আপডেট : ১০ নভেম্বর ২০২০, ০৪:০৬ পিএম

দেশে করোনাভাইরাসসংক্রমণের হার বেড়েছে, বাড়তে পারে মৃত্যুও শীতকালে কোভিড-১৯ পরিস্থিতির সম্ভাব্য অবনতি নিয়ে ক্রমবর্ধমান উদ্বেগের মাঝে তাপমাত্রা কিছুটা কমে যাওয়ায় করোনাভাইরাস সংক্রমণের হার গত এক সপ্তাহে বৃদ্ধি পেয়েছে।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিধিগুলো মেনে চলায় জনগণের অনীহা, মাস্ক না পরা এবং ভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে সরকারের পক্ষ থেকে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপের অভাবের কারণে পরিস্থিতি আবারও খারাপ হতে শুরু করেছে।

তারা বলছেন, সাম্প্রতিক করোনাভাইরাস সংক্রমণের হারের বৃদ্ধি সরকারের জন্য একটি সতর্কবার্তা। কারণ আসন্ন শীতে তাপমাত্রা কমার সাথে সাথে বাড়তে থাকবে করোনাভাইরাসের বিস্তার। সেই সাথে বাড়বে করোনাভাইরাসে মৃত্যুর হারও।

বর্তমান পরিস্থিতি

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের (ডিজিএইচএস) পরিসংখ্যান অনুসারে, চলতি বছরের মে ও জুন মাসে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের চূড়ান্ত সময়ে প্রতিদিন গড়ে প্রায় চার হাজার মানুষ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। ওই সময়ে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৫০ জনের মৃত্যু হয়েছে। নমুনা পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হার ওই সময়ে ছিল ২৪-২৫%।

তবে সেপ্টেম্বরের শেষ সপ্তাহ থেকে সংক্রমণের হার কিছুটা কমতে শুরু করে। এক পর্যায়ে, অক্টোবরে সংক্রমণের হার ১০% এর নিচে নেমে আসে। কিন্তু ধীরে ধীরে করোনাভাইরাস পরিস্থিতি আবারও অবনতির দিকে যেতে শুরু করেছে শীত আসতে না আসতেই।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দেয়া পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত ৩১ অক্টোবর,  দেশে ১,৩২০ জন ব্যক্তি নতুন করে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হন। শনাক্তের হার ছিল ১১.৪৫%। ১ নভেম্বর সারা দেশে ১,৫৬৮ জনের শরীরে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্ত হয়। এই মাসে সংক্রমণের হার ছিল ১২.৫০%। কিন্তু একদিনের ব্যবধানে সংক্রমণের মাত্রা উল্লেখযোগ্য হারে বেড়ে যায়। ২ নভেম্বর ১,৭৩৬ জন করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হন। ওই দিন সংক্রমণের হার ছিল ১৩.৪৭%।

শুধু নভেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহের পরিসংখ্যান দেখলেই করোনাভাইরাস পরিস্থিতি যে আবারও জটিল আকার ধারণ করছে তা স্পষ্টভাবে বোঝা যায়।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, ৩ নভেম্বর ১,৬৫৯ জনের শরীরে ভাইরাসটির সংক্রমণ ধরা পড়ে। এদিন সংক্রমণের হার ছিল ১১.৮০%। ৪ নভেম্বর শনাক্তের হার ছিল নভেম্বর ১০.৯০% এবং নতুন করে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হন ১,৫১৭ জন। ৫ নভেম্বর ১,৮৯১ জন কোভিড-১৯ রোগী শনাক্ত করা হয়। ওইদিন শনাক্তের হার ছিল ১২.১০%। ৬ নভেম্বর শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ছিল ১,৪৬৯ জন, শনাক্তের হার ছিল ১০.৮৬%  এবং ৭ নভেম্বর ১১.২৯ শনাক্তের হার নিয়ে শনাক্ত হন ১২৮৯ জন।

বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ বজলুর রশীদ বলেছেন, অক্টোবরের শেষে বৃষ্টিপাতের কারণে উত্তর-পশ্চিম দিকের বাতাসের ফলে গত সপ্তাহে দেশের তাপমাত্রা হ্রাস পেয়েছে।

তিনি জানান, শুক্রবার পঞ্চগড়, গাইবান্ধা, পাবনা ও রাজশাহীসহ উত্তরাঞ্চলে ১৪-১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। শ্রীমঙ্গলে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল; ১১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

আবহাওয়াবিদ বজলুর রশিদ বলেন, “যখন তাপমাত্রা ১৫ ডিগ্রির নীচে নেমে আসে, আমরা এটিকে ঠান্ডা আবহাওয়া বলি। সুতরাং, আপনি বলতে পারেন শীত ইতিমধ্যে শুরু হয়ে গেছে, তবে তাপমাত্রা কয়েকদিনের মধ্যে বাড়বে এবং এই মাসের শেষ সপ্তাহে এটি আবার কমতে পারে।”

তিনি আরো জানান, ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে শীত পুরোদমে শুরু হতে পারে এবং বেশ কয়েকটি শৈত প্রবাহ এ সময় দেশে আঘাত হানতে পারে। সাধারণত, জানুয়ারি বাংলাদেশের শীতলতম মাস এবং ঠান্ডা আবহাওয়া ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি পর্যন্ত চলতে পারে।

করোনাভাইরাস সংক্রমণের মাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ার কারণ প্রসঙ্গে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সাবেক আঞ্চলিক উপদেষ্টা মুজাহেরুল হক বলেন, “করোনাভাইরাস আবারও বাড়ার প্রধান কারণ মানুষের অসচেনতা। মাস্ক পরে চলা কিংবা স্বাস্থ্য সুরক্ষা বিধি মেনে চলতে সাধারণ জনগণের উদাসীনতা এবং সামাজিক দুরত্ব নিশ্চিতে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করার ক্ষেত্রে সরকারের শিথিল মনোভাব- এই দু’টি কারণে ধীর গতিতে বাড়তে শুরু করেছে করোনাভাইরাস সংক্রমণের মাত্রা।”

তিনি আরো বলেন, “ভাইরাসের সংক্রমণ বৃদ্ধির পেছনে তাপমাত্রা হ্রাসই প্রধান কারণ নয়। কোনো কার্যকর প্রতিরোধ ব্যবস্থা না থাকলেও এই ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়তে পারে এবং আমাদের দেশে এখন সেটাই ঘটছে।”

   
Banner

About

Popular Links

x