ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি হাবিবুর রহমান বলেছেন, “নিহত পুলিশের সিনিয়র এএসপি আনিসুল করিম শিপনের পদোন্নতি বিভাগীয় বা মানসিক সমস্যার কারণে হয়নি, এমনটা সঠিক নয়। ভিন্ন কারণে তার পদোন্নতি হয়নি। চাকুরিতে কারো পদোন্নতি আগে হয়, কারো পরে হয়, এটি একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। এটা আইনি প্রক্রিয়া। আইনি প্রক্রিয়ার কারণে তার পদোন্নতি হচ্ছিল না, পরবর্তীতে যথাসময়ে পদোন্নতি হয়ে যেত।”
রাজধানীর আদাবরে হাসপাতাল কর্মচারীদের মারধরে নিহত এএসপি শিপনের পরিবারকে সমবেদনা জানাতে শুক্রবার (১৩ নভেম্বর) গাজীপুরে গিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ডিআইজি হাবিবুর রহমান এ কথা জানান।
তিনি বলেন, “নিহত পুলিশের সিনিয়র এএসপি আনিসুল করিম শিপনের স্ত্রীকে সম্মানজনক পেশায় কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হবে। পুলিশের আইজি ড. বেনজীর আহমেদ এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন।”
ডিআইজি হাবিবুর রহমান আরও বলেন, “আমাদের দেশে পুলিশের জন্য নিজস্ব কোনো মানসিক হাসপাতাল নেই। পুলিশ সদস্যরা যে কোনো হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে পারেন। একজন সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে এএসপি আনিসুল করিম শিপন চিকিৎসা নিতে সরকারি হাসপাতালে গিয়েছিলেন। কিন্তু সেখানে তিনি কমফোর্ট মনে করেননি। তাই তিনি আদাবরের ওই হাসপাতালে গিয়ে ছিলেন। কিন্তু সেখানে কিভাবে তিনি নিহত হয়েছেন তা ভিডিওচিত্র দেখে সবাই অবহিত হয়েছেন। এ ভিডিওচিত্রের বাস্তবতা রয়েছে। সেখানে কিভাবে আনিসুলকে ধরে নিয়ে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে তা ভিডিওচিত্রে রয়েছে।”
শুক্রবার বিকেলে তিনি বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে পুলিশের নিহত সিনিয়র এএসপি আনিসুল করিম শিপনের গাজীপুর শহরের বরুদা এলাকার বাসায় যান। তিনি নিহতের স্বজনদের সঙ্গে কথা বলেন ও খোঁজ খবর নেন। পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলার সময় নিহতের স্ত্রী শারমিন সুলতানা, বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা ফাইজুদ্দিন আহমেদ, বড় ভাই রেজাউল করিম সবুজ, বোন শামসুন্নাহার সুমন ও ডা. উম্মে সালমাসহ স্বজনরা কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। এ সময় তাদেরকে শান্তনা ও আনিসুল করিম হত্যার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচারের আশ্বাস দেন ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি।
পরে পুলিশ কর্মকর্তারা গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের কেন্দ্রীয় কবরস্থানে যান। সেখানে তারা নিহতের কবরে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন ও কবর জিয়ারত করেন।
এ সময় ডিআইজি হাবিবুর রহমানের সঙ্গে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার খন্দকার লুৎফুল কবির, র্যাব-৪ এর সিও মোজাম্মেল আহমেদ, বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের জেনারেল সেক্রেটারি ও নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার জায়েদুল আলম, নরসিংদীর পুলিশ সুপার প্রলয় কুমার জোয়ারদারসহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে, আনিসুল করিম শিপন হত্যার প্রতিবাদ ও জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে জাতীয় প্রেসক্লাবসহ সারাদেশে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রাক্তন ও বর্তমান শিক্ষার্থীরা।
শুক্রবার সকাল ১০টা থেকে বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অনুষ্ঠিত প্রতিবাদ কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ও বর্তমানের পাঁচ শতাধিক শিক্ষার্থী।
এছাড়া, ময়মনসিংহের ভালুকা ও গফরগাঁও, যশোর, বগুড়া, মুন্সীগঞ্জ, খুলনাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় মানববন্ধন ও প্রতিবাদ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়।
প্রসঙ্গত, পুলিশের সিনিয়র এএসপি আনিসুল করিম শিপন বরিশাল মহানগর পুলিশে (বিএমপি) সহকারি পুলিশ কমিশনার পদে কর্মরত ছিলেন। গত সোমবার (৯ নভেম্বর) তাকে চিকিৎসার জন্য রাজধানীর আদাবরে মাইন্ড এইড হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে হাসপাতালের কর্মচারীদের নির্যাতনে তার মৃত্যু হয়।
হত্যাকাণ্ডের শিকার এএসপি আনিসুল করিম শিপন ২০১০ সালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণ রসায়ন বিভাগ থেকে এমএসসি সম্পন্ন করেন। পরবর্তীতে ৩১তম বিসিএস-এ অসামান্য কৃতিত্বের সাথে উত্তীর্ণ হন তিনি। পুলিশ ক্যাডারে দ্বিতীয় স্থান পেয়ে সহকারী পুলিশ সুপার হিসেবে বাংলাদেশ পুলিশে যোগদান করেন। চাকরিকালীন তিনি পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ, র্যাবসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করেন।