কয়েক দিনের ব্যবধানে শিলাইদহ কুঠিবাড়ি রক্ষাবাঁধের আরও একশ’ মিটার পদ্মারগর্ভে বিলীন হয়ে গিয়েছে। শনিবার রাত ২টা ১০মিনিটে কয়া ইউনিয়নের কালোয়া অংশে হঠাৎ করেই আবারও রক্ষাবাঁধের ভাঙ্গন শুরু হয়। দেখতে দেখতে মাত্র ৪০ মিনিটের মধ্যে বাঁধের প্রায় একশ মিটার এলাকা নদীগর্ভে চলে যায় বলে জানান স্থানীয় বাসিন্দারা। এ সময় বাঁধের ওপর বসবাসরত কয়েকশ’ পরিবারের মধ্যে আতংক ছড়িয়ে পড়ে। রাত থেকেই তারা বাড়ি-ঘর সরিয়ে নেওয়া শুরু করে।
রবিবার দুপুরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কুষ্টিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙ্গন ঠেকানোর চেষ্টা করছেন। নদীর তীব্র স্রোতে রাতে জিও ব্যাগ ফেলেও ভাঙ্গন ঠেকাতে হিমশিম খাচ্ছেন শ্রমিকরা। এদিকে নদীর পাড়ে বসবাসরত প্রায় দুইশ’ পরিবারের মধ্যে আতংক ছড়িয়ে পড়েছে। যারা বেশি ঝুঁকিতে রয়েছেন, তারা বাড়ি-ঘর ভেঙ্গে অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছে।
স্থানীয় বাসিন্দা সায়দার আলী বলেন, “গভীর রাতে মানুষের হৈ চৈ শুনতে পেয়ে ঘরের বাইরে গিয়ে বাঁধের ওপর মানুষের জটলা দেখে এগিয়ে যাই। মুহূর্তের মধ্যে দেখতে দেখতে ধসে যেতে থাকে বাঁধ।” মাত্র ৪০ মিনিটে বাঁধের প্রায় একশ’ মিটার এলাকা ধসে যায়। রক্ষাবাঁধ ভেঙ্গে স্থানীয় নওয়াব আলী ও শর্মি খাতুন দম্পতির অর্ধেক বাড়ি পদ্মারগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। বাকি অর্ধেক সরিয়ে নিতে প্রাণপণ চেষ্টা করে যাচ্ছেন তারা। একই অবস্থা ইতি খাতুনের পরিবারেরও। তার বাড়িটি যে কোন মুহূর্তে পদ্মায় বিলীন হয়ে যাবে। ক্ষোভ প্রকাশ করে শর্মি খাতুন বলেন, “এই রক্ষাবাঁধ আমাদের অভিশাপ ডেকে এনেছে। আমাদের বাড়ি নদী থেকে অনেক দুরে ছিল। কিন্তু, ঠিকাদাররা কাজ করার সময় বাড়ির সীমানা থেকে কয়েক মিটার কেটে ব্লক ফেলেছে। যার ফলে নদী একেবারে ঘরের কাছে চলে আসে।”
দুইশ কোটি টাকা ব্যয়ে সদ্য নির্মিত শিলাইদহ কুঠিবাড়ি রক্ষাবাঁধ গত ৩ সেপ্টেম্বর প্রথম ভাঙ্গন শুরু হয়। কয়েক মিনিটের ব্যবধানে ওইদিন বাঁধের ৫০ মিটার এলাকা পদ্মারগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। প্রমত্ত পদ্মার ভাঙ্গন থেকে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কুঠিবাড়ি রক্ষায় মাত্র দুই মাস আগে বাঁধটি নির্মান করেছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের একটি সুত্রে জানা যায়, ‘শিলাইদহ কুঠিবাড়ি রক্ষা বাঁধের কালোয়া বাজার এলাকার আগে যে স্থানে বাঁধ ধ্বসে গেছে, সেখানে আন্ডার গ্রাউন্ড আর্থ পরিস্থিতির কারণে ডিজাইনে শাল বুল্লি দিয়ে স্লপ তৈরির নির্দেশনা ছিলো। কিন্তু, প্রকল্প বাস্তবায়নে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান সেই কাজটি না করার ফলেই এমন ভাঙ্গনের সৃষ্টি হয়েছে।’
এদিকে প্রকল্পটি নিয়ে শুরু থেকে অভিযোগ করে আসছিলেন জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয় বাসিন্দারা। ব্যাপক অনিয়ম-দূর্নীতির মধ্যে দিয়ে গত ৩০ জুন অসম্পূর্ণ প্রকল্পকে সম্পূর্ণ দেখিয়ে কাগজে কলমে প্রকল্পটি হস্তান্তর করে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের অভিযোগ, প্রকল্পের নির্ধারিত পরিকল্পনাসহ নকশা লংঘন, অর্থ অপচয় এবং বরাদ্দকৃত টাকা প্রয়োজনীয় খাতে ব্যয় না করে অব্যয়িত রাখায় ২শ’ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত প্রকল্পটি বর্তমানে ধ্বংসের মুখে পড়েছে।
কুঠিবাড়ী রক্ষাবাঁধ প্রকল্পের পরিচালক প্রকৌশলী মনিরুজ্জামান জানান, কুঠিবাড়ি রক্ষা বাঁধের কালোয়া এলাকার কিছু অংশ ভেঙ্গে যাওয়া ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙ্গন রোধের চেষ্টা করা হচ্ছে।