পরিত্যক্ত কোচ মেরামত ও রঙ করে নতুন সাজে চালু হচ্ছে ‘লালমনি এক্সপ্রেস’। ঈদকে সামনে রেখে সাদা রঙের এসব ইরানি কোচ দিয়ে লালমনি এক্সপ্রেস সাজানো হয়েছে। ইতোমধ্যে ট্রায়ালও শেষ করেছে লালমনিরহাট রেলওয়ে বিভাগ। ৬ জুন থেকে এটি লালমনিরহাট-ঢাকা রুটে নিয়মিত চলাচল শুরু করবে। তবে স্থানীয়রা বলছেন, লালমনিরহাট থেকে একমাত্র ঢাকাগামী এই আন্তঃনগর ট্রেনটিতে অনেক যাত্রী চলাচল করে, সেই তুলনায় ট্রেনটিতে আসন সংখ্যা অপ্রতুল, মাত্র ৬৭২টি। ঈদে ঘরমুখো মানুষের জন্য এই সিট সংখ্যা পর্যাপ্ত নয় বলেও মনে করছেন স্থানীয়রা।
লালমনিরহাট রেলওয়ে বিভাগীয় ম্যানেজার নাজমুল ইসলাম বলেন, ‘পুরাতন কোচ মেরামত ও রঙ করা হলেও আসন্ন ঈদকে সামনে রেখে লালমনি এক্সপ্রেসকে নতুন সাজে ৬ জুন থেকে পরিচালনা করা হবে। নতুন কোচ সংযোজনের বিষয়টি সরকারের উচ্চ পর্যায়ের সিদ্ধান্তের বিষয়। তবে আমরা চাহিদা দিয়েছিলাম কিন্তু নতুন কোনও কোচ পাইনি। তাই যা পেয়েছি, তা দিয়েই আপাতত লালমনি এক্সপ্রেস ভালোই চলবে আশা করি।
সরজমিনে দেখা গেছে, ইরানি কোচগুলো মেরামত ও রঙ করা হলেও কাজের ফিনিশিং তেমন ভালো হয়নি। বাইরে থেকে ট্রেনটির গায়ের রঙ খসখসে দেখা যায়, যা দেখতেও অসুন্দর। কোচগুলোর ভেতরে যাত্রীদের জন্য মেরামত করা টয়লেট ও পানি সরবরাহ ব্যবস্থা লোকাল ট্রেনগুলোর মতোই। লাইটিং, জানালা ও দরজার অবস্থাও নিম্নমানের। সিটগুলো কিছুটা ভালো দেখা গেলেও মুভিং অবস্থা খুবই নাজুক। ফ্যানগুলো পুরাতন। লাগেজ হ্যাঙ্গারও মজবুত নয়। পাওয়ার কারের মেশিনগুলোও পুরাতন। তবে কোচগুলোতে ভালোমানের এয়ারব্রেক লাগানো হয়েছে।
এসব বিষয়ে লালমনিরহাট সহকারী ট্রাফিক সুপারিনটেনডেন্ট সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ‘২ জুন লালমনিরহাট থেকে সান্তাহার পর্যন্ত ট্রেনটির ট্রায়াল হয়েছে। কোনও সমস্যা আপাতত ধরা পড়েনি। তবে মেরামত করা পুরাতন কোচ কী আর নতুন কোচের মতো হয়? কিছুটা তো আলাদা থাকবেই।’
রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, ১৮৯৯-১৯০০ সালের দিকে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের লালমনিরহাট বিভাগীয় কার্যালয়ের যাত্রা শুরু হয়। এরপর থেকে উত্তরাঞ্চলের ৭টি রুটে ট্রেন পরিচালনা করে আসছে লালমনিরহাট বিভাগীয় রেলওয়ে দফতর। এরমধ্যে নীলফামারী, দিনাজপুর, ঠাঁকুরগাও, রংপুর থেকে লাল-সবুজ ট্রেন চলাচল করলেও লালমনিরহাট থেকে লক্কর-ঝক্কর চলছে ‘লালমনি এক্সপ্রেস’। সেই ট্রেনের অবস্থারও এতদিনে কোনও উন্নয়ন তো হয়নি বরং ঢাকা-চট্রগ্রাম রুটে চলাচলকারী সুবর্ণ এক্সপ্রেসের পরিত্যক্ত ১৪টি কোচ সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানায় মেরামত ও রঙ করে ‘লালমনি এক্সপ্রেস’-এর সঙ্গে সংযুক্ত করা হলো, যা ৬ জুন থেকে চলাচল শুরু করবে। আসন্ন ঈদকে সামনে রেখে এই ব্যবস্থা নিয়েছে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের লারমনিরহাট দফতর।
লালমনি এক্সপ্রেস বাংলা ট্রিবিউন
পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ে সৈয়দপুর কারখানার বিভাগীয় তত্ত্বাবধায়কের কার্যালয় ও লালমনিরহাট বিভাগীয় রেলওয়ে ম্যানেজারের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯৮ সালে ইরান থেকে কোচগুলো আমদানি করা হয়েছিল। মিটারগেজ লাইনের এসব কোচ দিয়ে ঢাক-চট্রগ্রাম রেলপথে ‘সুবর্ণ এক্সপ্রেস’ আন্তঃনগর ট্রেন চালানো হতো। পরবর্তীতে সুবর্ণ এক্সপ্রেসে নতুন কোচ সংযোজন করা হলে এসব পরিত্যক্ত ঘোষণা করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। পরিত্যক্ত এসব ইরানি কোচ চট্রগ্রামের পাহাড়তলী রেলওয়ে কারখানার ইয়ার্ডে ৫ বছর পড়ে ছিল। কোচগুলোর উপরিকাঠামো নষ্ট হয়ে যায়। গত বছর এসব ইরানি কোচ পূর্বাঞ্চল রেলওয়ের চট্রগ্রাম পাহাড়তলী কারখানার ইয়ার্ড থেকে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানার ইয়ার্ডে নিয়ে আসা হয়। পরে এসব কোচ কারখানার প্রকৌশলী-শ্রমিকরা মেরামত এবং রঙ করেন।
এ ব্যাপারে লালমনিরহাট জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার মেজবাহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘লালমনিরহাট রেলওয়ের বিভাগীয় দফতর বরাবরই উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত। দেশ স্বাধীনের পর লালমনিরহাট রেলওয়ের তেমন কোনও উন্নয়ন হয়নি। ২০১১ সালের ১৯ অক্টোবর জেলার পাটগ্রামের এক জনসভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘‘তিনবিঘা এক্সপ্রেস’’ নামে একটি আন্তঃনগর ট্রেন বুড়িমারী-ঢাকা রেলপথে চালুর ঘোষণা দিয়েছিলেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর সেই ঘোষণা আজও আলোর মুখ দেখেনি। এই বিষয়ে একাধিকবার রেলমন্ত্রীকে বলেও কিছু হয়নি।’
লালমনিরহাট রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার নিজাম উদ্দিন বলেন, ‘লালমনিরহাট থেকে ঢাকা যাওয়ার সময় ট্রেনটির ৬৭২টি সিট ক্যাপাসিটি রয়েছে। আবার ঢাকা থেকে লালমনিরহাট ফেরত আসার সময় ৬৫৭টি সিট ক্যাপাসিটি রয়েছে। এরমধ্যে দিনের বেলা এসি চেয়ার ২৭টি সিট ও রাতের সময় এসি বার্থ ১৮টি সিট থাকবে। বাকি সিট শোভন চেয়ার হিসেবে বিবেচিত হবে।’
লালমনিরহাট-১ আসনের সংসদ সদস্য মোতাহার হোসেন ও লালমনিরহাট জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মতিয়ার রহমান বলেন, ‘জেলার প্রত্যেকটি ইউনিয়নে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়নের ছোঁয়া লাগলেও কেবল লালমনিরহাট রেলওয়ে বিভাগীয় দফতরের অবস্থা আগের মতোই রয়েছে। সম্প্রতি রেলমন্ত্রী মুজিবুল হকসহ রেলওয়ের ঊদ্ধর্তন কর্মকর্তাদের এনে সবকিছু ঘুরে দেখানো হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত দৃশ্যমান তেমন কোনও উদ্যোগ নেই। ২০১১ সালে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিশ্রুতি দেওয়া তিনবিঘা এক্সপ্রেস আন্তঃনগর ট্রেনটিও চালু করা যায়নি।’