আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষ-২০২০ পালনের অংশ হিসেবে সব ধরনের লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা ও ধর্ষণের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে “নারীর জন্য বিশ্ব গড়ো, পর্যাপ্ত বিনিয়োগ করো, সহিংসতা প্রতিরোধ করো”, এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে এক মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়েছে।
সোমবার (৩০ নভেম্বর) সকাল ১১টায় রাজধানীর জাতীয় জাদুঘরের সামনে বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘ (বিএনপিএস), ইউবিআর অ্যালান্স ও এফপিএবি যৌথভাবে এই মানববন্ধন কর্মসূচির আয়োজন করে।
মানববন্ধনে এফপিএবির প্রকল্প ব্যবস্থাপক হালিমা বেগম বলেন, “করোনাভাইরাস মহামারিতে সারা বিশ্বের মানুষ যখন বেঁচে থাকা নিয়ে আতঙ্কিত, তখনো নারীর ওপর চলছে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন, বাল্যবিবাহ, যৌতুক, ধর্ষণ,তালাকসহ নানা ভয়াবহ সহিংসতা অনেক বেড়ে যাওয়ায় চরম অনিরাপত্তায় ভুগছে নারীরা।”
ধর্ষণের জন্য পিতৃতান্ত্রিক মানসিকতা দায়ী করে বিএনপিএসের সমন্বয়কারী নাসরীন বেগম বলেন, “ক্ষমতা প্রদর্শনের ক্ষেত্রে ধর্ষণকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। যুদ্ধ ও সংঘর্ষকালীন এমনকি গণতান্ত্রিক পরিবেশেও ধর্ষণের ঘটনাকে ব্যবহার করা হয় প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার হাতিয়ার হিসেবে। নারীকে অবদমন করে রাখার পিতৃতান্ত্রিক মানসিকতা থেকে সাধারণত ধর্ষণের ঘটনা ঘটানো হয়। তা ছাড়া, দেশের অর্থনৈতিক বিকাশের পাশাপাশি সামাজিক বিকাশ সমভাবে না হওয়ায় নারীর প্রতি প্রচলিত দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন সেভাবে হয়নি বিধায় প্রতিনিয়ত নারীর প্রতি সহিংসতার ঘটনা ঘটছে ও নারীর মানবাধিকার লঙ্ঘন হচ্ছে।”
“দেশের সর্বক্ষেত্রে নারীর সমঅংশগ্রহণের কারণেই বাংলাদেশে উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রয়েছে”, মন্তব্য করে বিএনপিএসের ঢাকা কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক শেলীনা পারভীন বলেন, “কিন্তু অত্যন্ত দুঃখজনক হলেও সত্য যে, আজও ঘরে-বাইরে নারীর অনেক অবদানের যথাযথ স্বীকৃতি নেই। নারী একদিকে কর্মস্থলে নিরাপত্তাহীনতা, উত্তরাধিকারে সমানাধিকার না থাকা, মজুরি বৈষম্যসহ নানাবিধ শোষণ-বঞ্চনার শিকার। অন্যদিকে উগ্র ধর্মীয় মৌলবাদী একটি মহল নারীবিরোধী নানা অযৌক্তিক, অসাংবিধানিক দাবি তুলে নারীর অগ্রযাত্রার পথে বাধা হয়ে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে। নারীর অগ্রগতি তথা উন্নয়নের অগ্রযাত্রাকে অব্যাহত রাখতে নারীর প্রতি সহিংসতা কঠোর হস্তে দমন করা প্রয়োজন, প্রয়োজন আরও সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ।”
বিএনপিএসের উপ-পরিচালক শাহনাজ সুমী বলেন, “নারীর ক্ষমতায়ন ও নারীবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করতে পর্যাপ্ত বিনিয়োগ করতে হবে এবং এই বিনিয়োগ নারীর জন্য কোনো দয়া-দাক্ষিণ্য নয়, এদেশের অর্থনৈতিক চাকা সচল রাখতে এবং এ দেশকে এগিয়ে নিয়ে নারীদের যথেষ্ট অবদান রয়েছে।”
মানববন্ধনে বক্তারা নারীর প্রতি সকল প্রকার বৈষম্যমূলক আইনের পরিবর্তন, আইনের সঠিক, নিরপেক্ষ ও সময়ানুগ প্রয়োগ নিশ্চিত, মহামান্য হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী ঘটনাস্থলকে মুখ্য বিবেচনা না করে ধর্ষণ, যৌন নিপীড়ন বা এ ধরনের আমলযোগ্য অপরাধের ঘটনায় কোনো বৈষম্য, বিলম্ব ছাড়াই তাৎক্ষণিকভাবে থানায় অভিযোগ লিপিবদ্ধ করা, বিচার বিভাগসংশ্লিষ্ট সকল পর্যায়ের সেবাদানকারী সদস্যদের জেন্ডারসংবেদনশীল করে গড়ে তোলা ও জবাবদিহিতার আওতায় আনা, নারী নির্যাতনকারীকে রাজনৈতিক, সামাজিক ও প্রশাসনিক আশ্রয়-প্রশ্রয় দেওয়া বন্ধ করা, দেশের প্রতিটি থানায় নারী পুলিশ দ্বারা পরিচালিত ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টার চালু করা, ওয়াজ মাহফিলসহ সকল প্রকার ধর্মীয় সভায় নারীবিরোধী বক্তব্য আইন করে বন্ধ করা, যৌন সহিংসতা বন্ধে যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্যশিক্ষার সহায়ক পরিবেশ নিশ্চিত করা ইত্যাদি দাবি জানান।
বিএনপিএসের উপপরিচালক শাহনাজ সুমীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন বিএনপিএসের উন্নয়ন কর্মকর্তা মো. হেলালউদ্দিন, সাবেক ছাত্রনেতা মানবেন্দ্র দেব, এফপিএবির ইউথ গ্রুপের প্রতিনিধি মিতু, বিএনপিএসের ইউথ গ্রুপের প্রতিনিধি সুমন হোসেন, রাকিব হাসান, কমলা প্রমুখ।
সমাবেশে মূল আলোচনাপত্র উপস্থাপন করেন বিএনপিএসের “ইউথ গ্রুপের” প্রতিনিধি ফারজানা আক্তার।