রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) উপাচার্য অধ্যাপক এম আব্দুস সোবহান বলেছেন, “শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের চিঠিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল নিয়োগ বন্ধ রাখার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু কোনো কারণ বলেনি। শুধুমাত্র উল্লেখ করেছে প্রশাসনিক কারণ। আমরা এটা (নিয়োগ বন্ধের কারণ) জানতে চাইবো এবং আমরা দেখবো যে এ বিষয়টা কিভাবে তাদের সাথে সলভ (সমাধান) করা যায়।”
মঙ্গলবার (১৫ ডিসেম্বর) বিকেলে ভারতীয় জনগণের পক্ষ থেকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়কে দেওয়া দুটি বাসের চাবি হস্তান্তর অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে উপাচার্য এসব কথা বলেন।
এর আগে, গত ১০ ও ১৩ ডিসেম্বর শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে অন্তত ১২টি চিঠি আসে। এসব চিঠিতে নিয়োগ নীতিমালা নতুন করে প্রণয়ণ, রেজিস্ট্রারকে অব্যাহতি, উপ-উপাচার্যসহ ৭ শিক্ষক-কর্মকর্তাকে তলব করা হয়।
এছাড়া গত ১৩ ডিসেম্বর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারি সচিব নিলীমা আফরোজ স্বাক্ষরিত বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়, উপযুক্ত বিষয়ের পরিপ্রেক্ষিতে জানানো যাচ্ছে যে, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নীতিমালা ২০১৫ শিথিল করে পরিবর্তিত নীতিমালা ২০১৭ অনুযায়ী উপাচার্য অধ্যাপক এম আব্দুস সোবহান তার মেয়ে জনাব সানজানা সোবহানকে ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগ এবং জামাতা জনাব এ টি এ সাহেদ পারেভেজকে ইনস্টিটিউট অব অ্যাডমিনিস্ট্রেশনে প্রভাষক পদে নিয়োগ দিয়েছেন। উপাচার্যের এরূপ স্বজনপ্রীতি ও অনিয়মের কারণে দেশের ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হয়েছে এবং গবেষণার মানও নিম্নগামী করার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
এমতাবস্থায় উক্ত নিয়োগ কেন বাতিল করা হবে না তার ব্যাখ্যা আগামী সাত কর্মদিবসের মধ্যে প্রদানে জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হল।
চিঠির বিষয়ে জানতে চাইলে উপাচার্য বলেন, “এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্যের অভিমতের কিছু নাই। মন্ত্রণালয় থেকে আসা চিঠিতে শুধু নীতিমালা কথা বলা হয়েছে। আমার মনে হয় যে এটা ওপেন না, এটা আমাদের এমনি জবাব দিতে হবে।”
আপাতত নিয়োগ প্রক্রিয়া বন্ধ থাকবে কিনা এমন প্রশ্নে উপাচার্য বলেন, “না না, চিঠি আসলোই তো কালকে। এছাড়া রেজিস্ট্রারের অব্যাহতি বিষয়টি আইনি ব্যাপার।”
প্রসঙ্গত, চলতি বছরের ৪ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান প্রশাসনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ এনে তথ্য-উপাত্তসহ ৩০০ পৃষ্ঠার একটি অভিযোগপত্র প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, ইউজিসি ও শিক্ষামন্ত্রণালয় দাখিল করেন আওয়ামী পন্থী শিক্ষকদের একাংশ। যার পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষামন্ত্রণালয়ের নির্দেশে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে ইউজিসি। তদন্ত কার্যক্রম শেষে কয়েকটি সুপারিশসহ শিক্ষামন্ত্রণালয়ে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়। প্রতিবেদনে উপাচার্যে বিরুদ্ধে দেওয়া অভিযোগের সত্যতা পেয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়। ইউজিসির তদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে রাবিতে সকল প্রকার নিয়োগ কার্যক্রম বন্ধ রাখার নির্দেশ দিল শিক্ষামন্ত্রণালয়।