জাতীয় পতাকা বিকৃত করে বিজয় দিবস উদযাপনের অভিযোগ উঠেছে রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) একদল শিক্ষকের বিরুদ্ধে।
জাতীয় পতাকার ডিজাইন অনুযায়ী সবুজের মাঝে লাল বৃত্ত থাকার কথা থাকলেও বিজয় দিবস উদযাপনকারী ওই শিক্ষকদের পতাকায় সবুজের মাঝে লালবৃত্তের বদলে ছিল চারকোণা আকৃতির লাল বর্গ!
বুধবার (১৬ ডিসেম্বর) এমন একটি ছবি ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ভাইরাল হলে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের এমন কর্মকাণ্ডে নিন্দা-প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। এমনকি পতাকার ডিজাইন বিকৃত করে উপস্থাপন করায় নিন্দা জানিয়েছেন ওই বিশ্ববিদ্যালয়েরই কিছু শিক্ষক।
জানা গেছে, মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের বিভিন্ন পদে থাকা ১৫-২০ শিক্ষক ও কর্মকর্তা মিলে বিজয় দিবসের প্রথম প্রহরে ক্যাম্পাসে অবস্থিত স্বাধীনতা স্মারকে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। কিন্তু এ সময় তারা বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার ডিজাইন বিকৃত করে ভিন্ন ডিজাইনের পতাকা বহন করছিলেন। পরে ওই বিকৃত জাতীয় পতাকা নিয়েই স্বাধীনতা স্মারকের সামনে দাঁড়িয়ে ছবিতে পোজ দেন এবং সেই ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট করেন।
ছবিতে দেখা যায় জাতীয় পতাকার সবুজের মাঝে লাল বৃত্তটি বিকৃত করে আয়তকার বানানো হয়েছে। যা জাতীয় পতাকার অবমাননার শামিল বলে নিন্দার ঝড় উঠেছে।
এদিকে, জাতীয় পতাকার অবমাননার প্রতিবাদে দায়ী শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের গ্রেফতারের দাবিতে বৃহস্পতিবার (১৭ ডিসেম্বর) ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের একাংশ।
মানববন্ধন পরবর্তী সমাবেশে বক্তব্য দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু শিক্ষক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মশিউর রহমান, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক মাহমুদুল হক, রসায়ন বিভাগের শিক্ষক তারিকুল ইসলামসহ অন্যান্যরা।
বক্তাদের অভিযোগ, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনে ঘাঁপটি মেরে থাকা স্বাধীনতা বিরোধীরা মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত মহান জাতীয় পতাকা বিকৃত করেই ক্ষান্ত হয়নি বরং তারা এর অবমাননা করে সেই ছবি ফেসবুকে পোস্ট করার ধৃষ্টতা দেখিয়েছে। এ সময় বক্তরা অবিলম্বে দায়ীদের গ্রেফতার ও বিচার দাবি করেন।
একই ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের সাবেক সিনিয়র সহসভাপতি আরিফুল ইসলাম আরিফ বাদী হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের গনযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহকারি অধ্যাপক তাবিউর রহমানকে প্রধান অভিযুক্ত করে নগরীর তাজহাট থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।
অন্যদিকে, একই দাবিতে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেছে রংপুর মহানগর যুবলীগ। তারা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তাবিউর রহমানসহ ৯ জনকে গ্রেৃফতার করার দাবি জানিয়েছে।
গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহকারি অধ্যাপক তাবিউর রহমান এবং আব্দুল কাইয়ুম, বাংলা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক পরিমল চন্দ্র বর্মণ, ভূগোল ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক শামীম হোসেন, ইতিহাস ও প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের প্রভাষক সোহাগ আলী, মার্কেটিং বিভাগের প্রভাষক ও সহকারি প্রক্টর মাহমুদুল ইসলাম, সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক রাম প্রসাদ ও রহমতুল্লা এবং উপাচার্যের সহকারি আমিনুর রহমান।
এ বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত শিক্ষক তাবিউর রহমানসহ ৯ শিক্ষকের মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাদের সকলের মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
অন্যদিকে, তাজহাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আখতারুজ্জামানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, “জাতীয় পতাকার অবমাননার লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। এ বিষয়ে তদন্ত করে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”