করোনাভাইরাস মহামারি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সরকার “নো মাস্ক, নো সার্ভিস” নীতি চালু করলেও এখনও অনেকে মাস্ক ব্যবহার করছেন না।
মানুষ মাস্ক ব্যবহারে কেন এত অনীহা পোষণ করছে এবিষয়ে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, সঠিক প্রচারণা, জনসম্পৃক্ততা ও আইন প্রয়োগ নীতিমালাটি বাস্তবায়নে সহায়ক হতে পারে।
যেহেতু মাস্ক ব্যবহার করোনাভাইরাস সংক্রমণ হ্রাস করার মূল রক্ষাকবচ হয়ে উঠেছে, তারা বলেছেন যে সরকারকে কার্যকর ও সঠিক তথ্য প্রচারের মাধ্যমে মাস্ক ব্যবহারের গুরুত্ব বোঝাতে হবে।
তাদের মতে, সরকারের উচিৎ জনগণকে মানসম্পন্ন ও উপযুক্ত মাস্ক বিনামূল্যে সরবরাহ করা কেননা পর্যবেক্ষণের অভাবে বাজার নিম্নমানের মাস্কে সয়লাব হয়ে গেছে।
গত নভেম্বরে, সরকার “নো মাস্ক, নো সার্ভিস” নীতি কঠোরভাবে প্রয়োগের জন্য একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করে, তবে এটি এখনও কেবল কাগজেই রয়েছে।
কেন এই উদাসীনতা?
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক পরিচালক (রোগ নিয়ন্ত্রণ) ডা. বে-নাজির আহমেদ বলেন, মাস্ক পরার তাগিদ অনেক লোকই খুব কমই অনুভব করছেন কারণ তারা সরকারের বিভিন্ন কার্যক্রম থেকে ধারণা পেয়েছেন যে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ এখন একটি গুরুতর বিষয় নয়।
তিনি বলেন, সরকার বারবার বলে আসছে যে তারা করোনাভাইরাস মোকাবেলায় সফল হয়েছে- এই জাতীয় বিবৃতি জনসাধারণের মধ্যে ধারণা তৈরি করে যে ভাইরাসটি নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে এবং বিষয়টি হালকাভাবে নিতে তাদের অনুপ্রেরণা জোগায়।
সরকার করোনাভাইরাস সম্পর্কে ব্রিফিংও বন্ধ করে দিয়েছে যা করোনাভাইরাস পরিস্থিতি সম্পর্কে লোকজনের মধ্যে নেতিবাচক বার্তা দিয়েছে।
তিনি আরও বলেন, অফিস, ব্যবসা ও পরিবহন পরিষেবা আবারও চালু হয়ে যাওয়ায় এখন জনসমাগমে স্পষ্টতই কোনো বাধা নেই।
ডা. বে-নাজির বলেন, করোনাভাইরাসে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত অনেক দেশের তুলনায় বাংলাদেশে মৃত্যুর হার অনেক কম। এটিও একটি কারণ। বয়স্ক ও যাদের শরীরে অন্য সমস্যা নেই তারা ছাড়া বেশিরভাগ মানুষই দেশে দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠছে। সুতরাং এই ভাইরাসের প্রতি মানুষের ভয়ও হ্রাস পাচ্ছে।
কোন মাস্ক পরা উচিৎ?
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) সাবেক আঞ্চলিক উপদেষ্টা মুজাহেরুল হক বলেন, “আমাদের সঠিক সময়ে মানুষকে সঠিক বার্তা দেওয়া দরকার। তবে আমরা করোনার মহামারির প্রথম থেকেই তা করতে ব্যর্থ হয়েছি। যখন আমাদের লকডাউন কার্যকর করার কথা ছিল, তখন আমরা সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে জনগণকে এখানে-সেখানে যেতে এমনকি সমুদ্র-সৈকতেও জড়ো হওয়ার সুযোগ করে দিয়েছি।”
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ বলেন, সরকার “নো মাস্ক, নো সার্ভিস” নীতি গ্রহণ করেছে তবে এটি বাস্তবায়নের জন্য কোনো কৌশল নেই। সরকার জনগণকে মাস্ক পরতে বলছে। তবে এটি বলছে না যে কোন ধরনের মাস্ক পরা উচিৎ।
তিনি বলেন, কাপড়ের তৈরি ডাবল বা ট্রিপল লেয়ার মাস্কগুলো মানুষের জন্য উপযুক্ত মাস্ক এবং তারা সার্জিক্যাল ও এন-৯৫ না কিনে ঘরেই তৈরি করতে পারে।
ডা. মুজাহের বলেন, “নিম্নমানের সার্জিক্যাল মাস্ক এখন সর্বত্র পাওয়া যায় তবে সেগুলো মানুষের জন্য অনুপযুক্ত। সরকারের উচিৎ এই ধরনের নিম্নমানের মাস্ক বিক্রির অনুমতি না দেওয়া। নিম্নমানের মাস্ক উৎপাদন ও বিক্রি রোধে শক্তিশালী বাজার পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা থাকতে হবে।”
প্রয়োজন আইন প্রয়োগ
ডা. মুজাহেরুল হক বলেন, সরকার মাস্ক ব্যবহার বাধ্যতামূলক করেছে এবং রোগ প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০১৮ এর অধীনে নিরাপত্তা সামগ্রী ব্যবহার না করায় মাঝে-মধ্যে শাস্তি দিচ্ছে।
তিনি বলেন, সরকার বারবার মাস্ক পরার আহ্বান জানানোর পরও যেহেতু মাস্ক ব্যবহারে জনগণ উদাসীনতা দেখাচ্ছে, তখন আইনটি কঠোরভাবে প্রয়োগ করা ছাড়া অন্য কোনো বিকল্প নেই।
সবাইকে সাথে নিয়ে করোনাভাইরাস মোকাবেলা করার জন্য ডব্লিউএইচও একটি সুপারিশ করেছে। তবে জনগণের সম্পৃক্ততার অভাবে করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণে সরকারের প্রচেষ্টাগুলো দুর্বল হয়ে পড়েছে বলে মনে করেন তিনি।