শরীয়তপুরের সুরেশ্বর থেকে চাঁদপুরগামী যাত্রীবাহী এমএল শাহ আলী-৪ লঞ্চে দুধর্ষ ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। সোমবার (২১ ডিসেম্বর) সকাল পৌনে ১০টার দিকে শরীয়তপুরে সখিপুর থানার মান্দারী এবং চাঁদপুর সদর উপজেলার রাজরাজেশ্বর কাছিঘাটা সীমান্ত এলাকায় পদ্মা নদীতে এ ঘটনা ঘটে।
এ সময় দুটি স্পিডবোটে করে প্রায় ১৮ জনের একটি ডাকাত দল যাত্রীদের গলায় অস্ত্র ঠেকিয়ে স্বর্ণালংকার, নগদ অর্থসহ সমস্ত মালামাল ছিনিয়ে নিয়ে গেছে। এ সময় পুলিশের পোশাক পরিহিত অবস্থায় লঞ্চে ছিলেন শরীয়তপুরের সুরেশ্বর নৌ পুলিশ ফাঁড়ির উপপরিদর্শক (এসআই) জয়নাল আবেদীন। ডাকাতেরা জয়নাল আবেদীনের মোবাইল ফোনটিও ছিনিয়ে নিয়ে যায়।
লঞ্চের মাস্টার হেলাল উদ্দিন জানান, শরিয়তপুর জেলার সুরেশ্বর লঞ্চ ঘাট থেকে সকাল ৮টায় চাঁদপুরে উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসে লঞ্চটি। সকাল ৯টায় নড়িয়া এলাকায় ঘাটে পৌঁছে। সেখান থেকে প্রায় ৫৫ জন যাত্রী নিয়ে রওনা দিলে ৯ টা ৪৫ মিনিটের দিকে সখিপুর মান্দরী ও চাঁদপুর সদরের কাচিঘাটা নদী সীমান্ত এলাকায় হঠাৎ দুটি স্পিডবোটে প্রায় ১৮ জনের একদল ডাকাত লঞ্চে উঠে। তারা আমাকে এবং কোয়াটার মাস্টার হালিমকে গলায় অস্ত্র ঠেকিয়ে লঞ্চ থামাতে বাধ্য করে। এরপর যাত্রীদের টাকা পয়সা, স্বর্ণালংকার এবং সকল মালামাল নিয়ে যায়।
লঞ্চ যাত্রী নিলুফা বেগম (৪৫), পান্না বেগম (২৪), সাথী বেগম (২৬), মাকসুদা বেগমসহ (৪০) অন্যান্য যাত্রীরা জানান, ডাকাতদল লঞ্চের বেশ কয়েকজন পুরুষ যাত্রীকে বেদম মারধর করেছে। আমরা এই পথে বহু বছর যাবৎ যাতায়াত করেছি। কিন্তু কখনও এ ধরনের ঘটনার সম্মুখীন হইনি।
লঞ্চযাত্রী উজ্জল হোসেন (৫০) জানান, তারা দেশীয় অস্ত্র, রামদা, পিস্তল নিয়ে আমাদের গলায় ঠেকিয়ে আমার স্ত্রীসহ সকল যাত্রীর স্বর্ণালংকার, টাকা পয়সা নিয়ে যায়।
কুমিল্লার কলেজ শিক্ষার্থী সিমা আক্তার (১৮) বলেন, আমি নানা বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিলাম। আমার মা, ভাই, বোনসহ লঞ্চে ফেরার পথে এই ঘটনা ঘটে। ডাকাতদল হলুদ রঙের জ্যাকেট পরা ছিল। তারা আমার ছোট ভাই জিহাদকে (৭) কোলে নিয়ে নদীতে ফেলে দেওয়ার ভয় দেখায়। ভয়ে আমার মা এবং আমরা মোবাইল, টাকা, স্বর্ণালংকার যা কিছু ছিল সব দিয়ে দিতে বাধ্য হই।
এদিকে, ডাকাতির সময় লঞ্চ থেকে বিল্লাল হোসেন (৩৫) নামে ডাকাত দলের এক সদস্যকে আটক করতে সক্ষম হয়েছে লঞ্চযাত্রীরা।
আটক বিল্লাল ফরিদগঞ্জ উপজেলার খুররম খালি গ্রামের আব্বাস খানের ছেলে। তবে সে নড়িয়া ঘাটে পানি উন্নয়ন বোর্ডের মাস্টাররোলের কর্মচারি বলে জানা গেছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের এসও মামুন হোসেন।
চাঁদপুর নৌ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) জহিরুল ইসলাম বলেন, “শাহ আলী লঞ্চটি সকাল ১১টার দিকে চাঁদপুর ঘাটে এসে পৌঁছায়। পরে এসআই জয়নাল ডাকাত সদস্যকে থানায় হস্তান্তর করে। ডাকাতির ঘটনায় লঞ্চের ম্যানেজার আক্তার হোসেন মামলা করেছেন। আটক ডাকাত সদস্য থানা হেফাজতে রয়েছে।”
নৌ পুলিশ চাঁদপুর অঞ্চলের পুলিশ সুপার (এসপি) কামরুজ্জামান বলেন, “লঞ্চে থাকা নৌ পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) জয়নাল মো. বিল্লাল খান (৪৫) নামে ডাকাতকে আটক করতে সক্ষম হয়। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে এবং ডাকাতির সাথে জড়িতদের আইনের আওতায় আনার চেষ্টা চলছে।”
উল্লেখ্য, গত ১ মাসে চাঁদপুর নৌ-সীমানায় ৩টি ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। এর আগে নারায়ণগঞ্জ থেকে মতলবের মধ্যে চলাচলকারী দু’টি লঞ্চে ডাকাতির ঘটনা ঘটে।