মালিহা গ্রুপ একটি ভুয়া সার্টিফিকেট বাণিজ্য ও ভুয়া ভিসা প্রোসেসিং প্রতিষ্ঠান। কোম্পানিটির ম্যানেজিং ডিরেক্টর জিয়াউর রহমান ওরফে সোহেল, তার স্ত্রী কামরুন্নাহার মিতু চেয়ারম্যান। মেয়ে মালিহার নামে কোম্পানিটির নাম রেখেছে এই দম্পতি। মালিহা গ্রুপ সাফল্যের সঙ্গে ‘দীর্ঘ ২০ বছর ধরে সার্টিফিকেট বাণিজ্য’ করে যাচ্ছে বলে তাদের দাবি। ২০১৬ সালে রাজধানীর সীমান্ত স্কয়ারে এবং ইংরেজি দৈনিক ডেইলি স্টার ভবনে স্টুডেন্ট ফেয়ারে স্টল নিয়েছিল এই ভুয়া প্রতিষ্ঠানটি।
গত বছর ১৯ জুন ‘সুলভ মূল্যে স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্টিফিকেট বিক্রি করছে মালিহা গ্রুপ’ শিরোনামে বাংলা ট্রিবিউনে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনটি প্রকাশের পরদিন সকালেই লিংক রোডের (গ-১০৩, মধ্যবাড্ডা) অফিসের দরজায় তালা ঝুলিয়ে অন্তত ২০ জন কর্মীর সবাইকে নিয়ে লাপাত্তা হয়ে যায় জিয়া। লাপাত্তা হওয়ার পরও বাংলা ট্রিবিউন এই প্রতারক চক্রের বিষয়ে অনুসন্ধান চালিয়ে যেতে থাকে। গত বছর প্রতিষ্ঠানটি ‘সাফল্যের ১২ বছর’ প্রচারণা চালানোর মাঝপথে থমকে গেলেও এ বছর ‘সাফল্যের ২০ বছর’ নিয়ে আবার হাজির হয়েছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, বাড্ডার অফিস ছেড়ে কিছুদিন গা-ঢাকা দিয়ে থাকার পর আবার কার্যক্রম শুরু করে মালিহা গ্রুপ। তখন এক নারী কর্মীকে যৌন হয়রানি করার অভিযোগ ওঠে। প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং ডিরেক্টর জিয়াউর রহমান সোহেল ওই নারী কর্মীকে যৌন নির্যাতন করে বলে স্থানীয় থানা পুলিশকে অভিযোগ করেন এক নারী কর্মী। পরে জিয়াউর রহমান এবং তার স্ত্রী কামরুন্নাহার মিতুসহ অফিসের বেশ কয়েকজন সহকারীকে আটক করে পুলিশ। কিন্তু কোনও এক রহস্যজনক কারণে কিছুদিন পর তারা ছাড়া পায়।
এ অবস্থায় জিয়া ও মিতু ছেড়ে দেয় বাড্ডার অফিস, সঙ্গে ছেড়ে দেয় অফিসের ১০ থেকে ১২ নারী কর্মী এবং ৬ অফিস সহকারীকে (পিয়ন)। নতুন কর্মী ও পিওন নিয়োগ দিয়ে অফিস নেয় নর্দায়। সেখানেও টিকতে পারেনি বেশিদিন। পরে গত বছরের ডিসেম্বরে উত্তরার ১১ নম্বর সেক্টরের একটি ভাড়া বাড়িতে অফিস নেয়। প্রায় কোটি টাকার জোগান নিয়ে গত ফেব্রুয়ারিতে অফিস স্থানান্তর করে মহাখালীর ডিওএইচএসের ৩২ নম্বর রোডের ৪৮০ নম্বর বাসার দোতলায়।
কয়েক বছর ধরে মালিহা গ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান ‘মালিহা ট্রাভেলস লি.’ এবং ‘এডুকেশন হেল্প সেন্টার’ নাম পাল্টে এখন সার্টিফিকেট বাণিজ্যের পসরা সাজিয়েছে ‘স্টাডি হেল্পলাইন লিমিডেট’ এবং ‘প্রাইভেট এক্সাম হেল্পলাইন বিডি’ নামে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে এই নামে একাধিক পেইজও রয়েছে। অন্যদিকে এই চক্রটির বিষয়ে অনুসন্ধানে আরও বেরিয়ে এসেছে লোমহর্ষক তথ্য ও অভিযোগ।
জিয়ার সঙ্গে তার ডান হাত সফিক (সামনে) ও মেহেদি (পেছনে) বাংলা ট্রিবিউন
‘নারী কর্মীদের যৌন নির্যাতন করে জিয়াউর রহমান’
অনেক চেষ্টার পর বাংলা ট্রিবিউন খুঁজে পায় প্রতিষ্ঠানটির কয়েকজন সাবেক নারী কর্মী ও অফিস সহকারীকে। তাদের কাছে জিয়াউর রহমান সোহেলের প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে জানতে চাইলে তারা অকপটে অবৈধ কর্মকাণ্ডের কথা বলেন। তারা জানান, ভুয়া সার্টিফিকেট এবং ভুয়া ভিসার কাজ করে জিয়া। সে মূলত অরজিনাল সার্টিফিকেট দিতে পারে না, এমনকি অরজিনাল ভিসাও না। পুরোটাই ভোগাস।
জিয়া শুধু সার্টিফিকেট ও ভিসা জালিয়াতির সঙ্গেই জড়িত নয়, সে তার প্রতিষ্ঠানের নারী কর্মীদের ব্লাকমেইল করে যৌন হয়রানি করে। ১০ থেকে ১২ জন নারী কর্মী বাড্ডা অফিসে কর্মরত ছিলেন। তাদের সবার বয়স ১৬ থেকে ২৫ বছরের মধ্যে। ভয় দেখিয়ে, এমনকি টাকার লোভ দেখিয়ে তাদের কারো কারো সঙ্গে অবৈধ সম্পর্ক গড়ে তুলেছিল জিয়া। কেউ সম্মতি না দিলে তাকে ধর্ষণও করে জিয়া।
জিয়ার সবচেয়ে বড় শক্তি সফিক নামের এক কর্মচারী। সফিক ও মেহেদি নামে দুজন স্থানীয় মাস্তান জিয়ার ডান হাত ও বাম হাত হিসেবে কাজ করে। এছাড়া প্রতিষ্ঠানের অ্যাকাউন্ট সেকশন দেখতো জীবন নামের এক কর্মী। এছাড়া খলিল, রয়েল, সাঈদ, রাজন, সোহাগসহ আরও বেশ কয়েকজন পিওন কাজ করতো সেখানে। যদিও মেহেদি এবং সফিক ছাড়া বাকি সবাইকে বের করে দিয়েছে বলে দাবি সাবেক নারী কর্মী ও অফিস সহকারীদের।
ছোট্ট একটি অফিসে এত অফিস সহকারী কেন ছিল জানতে চাইলে তারা জানান, যারা ভিকটিম তারা অফিসে এসে ঝামেলা যেন না করতে পারে সে জন্যই এত অফিস সহকারী রাখতো জিয়া। তাছাড়া তার কাজটাই তো অবৈধ কাজ।
সাবেক একাধিক নারী কর্মী বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, একটি হিন্দু মেয়ে ছিল, তাকে জিয়া রুমে ডেকে নিয়ে ধর্ষণ করে। মেয়েটি অনেক চিৎকার করেছিল। তারা সব জানতেন, কিন্তু কিছু বলার ছিল না। পরে সেই মেয়েটি চুপিসারে চাকরি ছেড়ে চলে যায়। এছাড়া আরও কত মেয়েকে সে যৌন নিপীড়ন করেছে, তা বলা কঠিন বলে মন্তব্য করেন সাবেক নারী কর্মীরা।
ওই নারী কর্মীরা জানান, জিয়ার স্ত্রী মিতু সবই জানে। এটা নিয়ে তাদের মধ্যে ঝামেলাও হয়। কিন্তু মিতু গরিবের মেয়ে। তাকে মালিহা গ্রুপের চেয়ারম্যান পদে বসিয়ে খুশিতে রাখার চেষ্টা করে জিয়া। তবে মিতু তাদের সাবধান করতো। বলতো, স্যারের কাছ থেকে দূরে থাকতে। কোনও মেয়ে অফিসে জয়েন করার কয়েকদিনের মাথায় জিয়া তাকে কুপ্রস্তাব দিতো।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সাবেক এক নারী কর্মী বলেন, ‘আমি জয়েন করার কয়েকদিনের মাথায় সে আমাকে বাজে একটি প্রোপজ করে। তখন আমার নতুন বিয়ে হয়েছে। তখন অফিসে আসতে ভয় পেতাম। আমার স্বামীর সঙ্গে বিষয়টি শেয়ার করার পর থেকে আর চাকরি করিনি।’
একাধিক নারী কর্মী জানিয়েছেন, কোনও নারী কর্মী জিয়ার প্রতিষ্ঠান থেকে চাকরি ছেড়ে যেতে চাইলে তাকে নানাভাবে ব্ল্যাকমেইল করতো।
ব্ল্যাকমেইলের ব্যপারটি কেমন জানতে চাইলে তারা জানান, অফিসের সিসি ক্যামেরায় সব রেকর্ড করা হতো। ভুয়া সার্টিফিকেট দেওয়াসহ এই বাণিজ্যে জড়িত থাকার বিষয়টি সবাইকে জানিয়ে দেওয়া হবে, এমন হুমকি দিতো।
সাবেক নারী কর্মীরা জানান, মোবাইল রেখে দেওয়া হতো, ওই মেয়েদের পিওন দিয়ে অনুসরণ করানো হতো।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, মহাখালীর ডিওএইচএসের স্টাডি হেল্পলাইনের অফিসটিতে কয়েকজন নারী কর্মী জয়েন করার পর তাদের যৌন হয়রানি করার চেষ্টা করে জিয়া ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা। এ ঘটনায় গত মে মাসের প্রথম সপ্তাহে তিন থেকে চারদিন অফিসটি বন্ধও রাখে তারা। পরে ওই অফিসের এমন অবৈধ্য কর্মকাণ্ডের কথা জানতে পেরে দুজন নারী কর্মী চাকরি ছেড়ে চলে যান।
এক বছরের ব্যবধানে ‘সাফল্যের ১২ বছর’ ও ‘সাফল্যের ২০ বছর’ প্রচারণা বাংলা ট্রিবিউন
যেভাবে টাকা হাতিয়ে নেয় জিয়া-মিতু
জিয়া ও মিতুর ফাঁদে পড়া ভুক্তভোগী জাতীয় সংসদ ভবনের এক নারী কর্মকর্তা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, “গত বছরের প্রথম দিকে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেখে আমার স্বামীর জন্য উচ্চ মাধ্যমিকে প্রাইভেট পরীক্ষার ব্যবস্থা করতে যাই। ৮০ হাজার টাকার চুক্তি হয়, ১০ হাজার টাকা অগ্রিম দিই। কিন্তু জিয়া এর কয়েকদিনের মাথায় ফোন করে বলে, ‘সার্টিফিকেট রেডি, টাকা নিয়ে আসেন।’ অবিশ্বাস হচ্ছিল, পরীক্ষা না দিয়ে কীভাবে সার্টিফিকেট দেবে? তারপরও শেষটা দেখার জন্য অপেক্ষায় ছিলাম। ৩০ হাজার টাকাও সঙ্গে নিয়ে যাই। যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে জিয়ার অফিসে সবাই আমাকে ঘিরে ফেলে। রীতিমতো টাকাসহ ব্যাগ ছিনতাই করে নেওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি করে। একটা সার্টিফিকেটের মতো কাগজ দিয়ে বলে, এটাই আপনার সার্টিফিকেট। দেখেই বোঝা যাচ্ছিল সেটা ভুয়া। সঙ্গে সঙ্গে আমার স্বামীকে ফোন দিই। আমি বারবার বলছিলাম, ‘কেউ আমার দিকে এক পাও আগাবেন না। আমি কিন্তু পুলিশ ডাকবো, র্যাব ডাকবো।’”
তিনি বলেন, ‘তাদের অফিসে অনেক সিসি ক্যামেরা লাগানো। আমার সঙ্গে এমন আচরণ করার আগে জিয়া কর্মীদের বলে দেয় সিসি ক্যামেরা অফ করতে। আমার স্বামী আসার পর তাকেও ঢুকতে দিচ্ছিল না। পরে সে থানায় গিয়ে পুলিশ নিয়ে আসে। পুলিশও এসে ওদের দালালি করে। খুবই আশ্চর্য হয়েছিলাম, ওই পুলিশগুলোও তাদের পোষা ছিল। পরে বাধ্য হয়ে ১০ হাজার গচ্চা দিয়ে চলে এসেছিলাম। ওই দিনের ঘটনা মনে পড়লে আমি এখনও আঁতকে উঠি। চলে আসার সময় মেহেদি আমার জীবননাশের হুমকিও দিয়েছিল।’
সোহেল রহমান নামে জিয়ার একটি ফেসবুক আইডির নিচে কমেন্ট বক্সে আল আমিন নামে এক তরুণকে ক্ষুব্ধ মন্তব্য লিখতে দেখা যায়। তাকে ইনবক্স করে জানতে চাইলে তিনি জানান, তার বাড়ি বগুড়া। তাকে জিয়া প্রলোভন দেখিয়ে পড়াশোনার জন্য চীন পাঠাতে চেয়েছিল। রাজি হওয়াতে চুক্তি হয়েছিল ১ লাখ ৮০ হাজার টাকায়। প্রথম দফায় জমি বিক্রি করে ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা দিয়েছিলেন। তারপর জিয়াকে আর খুঁজে পাননি তিনি। এর মধ্যে তার বাবাও মারা গেছেন বলে জানান আল আমিন। তিনি বলেন, “আমরা আব্বা তখনও বেঁচেছিল। জিয়াকে ফোন করে কান্না করে বলেছিল, ‘বাবা, আপনার পায়ে পড়ি, আমার জমি বিক্রি করা টাকা ফেরত দিয়ে দেন।’ কিন্তু সে দেয়নি। এখন আমি বাড়িতে বসে আছি। আমার তো সব শেষ।”
কাস্টমারদের যৌনাঙ্গের পাশে সিরিঞ্জ দিয়ে রক্ত নিতো জিয়া গ্যাং
বাড্ডা অফিসের সাবেক চারজন অফিস সহকারী লোমহর্ষক কয়েকটি ঘটনার কথা জানান। তারা জানান, যারা স্টুডেন্ট ভিসার জন্য আসতো তাদের ভিসা তো হতোই না, উল্টো ফাঁদ পেতে বেশি টাকা আদায় করতো জিয়া। একবার একটি ছেলেকে ভিসা হয়ে গেছে বলে ফোন করে ডেকেছিল। তার সঙ্গে চুক্তি ছিল ৪ লাখ টাকার। পরে সেই ছেলে এসে যখন বুঝতে পারে সেটা ভুয়া ভিসা। তখন তার কাছে তিন লাখ টাকা ছিল। সেটা হাতিয়ে নেওয়ার জন্য ওই ছেলেকে কৌশলে ঘুমের ওষুধ খাওয়ায়। পরে সেই ছেলে অজ্ঞান হয়ে গেলে সারারাত অফিসে আটকে রাখা হয়। শফিক ও জিয়া দুজনে মিলে সারারাত ওই ছেলের যৌনাঙ্গের পাশের শিরায় সিরিঞ্জ ঢুকিয়ে রক্ত বের করে বাথরুমে ফেলেছিল। পরে ওই ছেলে দুর্বল হয়ে গেলে সকালে তার পরিবারের লোকজনকে ফোন করে ডেকে তাদের কাছে তুলে দিয়েছিল। এভাবেই ভিসার জন্য চুক্তি করা লোকজনের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা মেরে দিতো জিয়া।
যৌনাঙ্গের পাশ থেকে রক্ত কেন নেওয়া হতো জানতে চাইলে তারা জানান, যাতে সহজে কারো চোখে ব্যাপারটি ধরা না পড়ে। ভুক্তভোগী লজ্জায় দেখাবেন না। তাছাড়া কয়েকদিন পর সেটির চিহ্নও থাকে না।
সাবেক অফিস সহকারীরা জানান, এছাড়া যখন নানা ঝুঁকি থাকে, পুলিশ অথবা স্থানীয় মাস্তানরা ঝামেলা করে তখন অফিসের বাইরে থেকে তালা লাগিয়ে রেখে তারা ভেতরেই অবস্থান করে। আবার অফিসের ভেতরে সব কক্ষে এবং বাইরে বেশকিছু সিসি ক্যামেরা লাগিয়ে রাখা হয়। অধিক নিরাপত্তার জন্য অফিসের ঢোকার পথে নিজ উদ্যোগে কোলাপসিবল গেট লাগিয়ে নেয় জিয়া।
কে এই জিয়া-মিতু দম্পতি
জিয়াউর রহমান সোহেল বিভিন্ন পরিচয়ে পরিচিত। কখনও সে নিজেকে সাউদার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর হিসেবে পরিচয় দেয়, কখনও মালিহা গ্রুপের ম্যানেজিং ডিরেক্টর।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, জিয়ার গ্রামের বাড়ি বরিশাল অঞ্চলে। মিতুর বাড়ি বগুড়ায়। তারা একসঙ্গে ঢাকায় থাকেন।
জিয়াউর রহমান সোহেলের ফেসবুকে দুটি প্রোফাইল পাওয়া গেছে। যদিও গত এক সপ্তাহ ধরে তার আইডি দুটি ডিঅ্যাকটিভ দেখা যাচ্ছে। আবার লিংকডইন প্রোফাইল ঘেঁটে দুটি লিংকডইন আইডির সন্ধান পাওয়া গেছে। প্রতিটি আইডির প্রোফাইলে জিয়ার নিজের বিস্তারিত তথ্যে বলা রয়েছে, ২০০০ থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি থেকে সিএসই বিভাগে পড়াশোনা করে সে। ২০০৫ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে টেলিকম ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে মাস্টার্স করে। এরপর সাউদার্ন ইউনিভার্সিটি থেকে এমবিএ করেছে ২০০৯ সালে। এরপর ২০১২ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত ইন্টারন্যাশনাল কালচার ইউনিভার্সিটি থেকে পিএইচডি করেছে। ২০০৯ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত সে আইসিটি মন্ত্রণালয়ের একটি প্রোজেক্টের ম্যানেজার হিসেবে কাজ করেছে। ২০১০ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত রিংটেক নামের একটি প্রাইভেট কোম্পানিতে জেনারেল ম্যানেজার হিসেবে কাজ করেছে।
অন্যদিকে ২০০৪ সালে মালিহা গ্রুপ নামে একটি ট্রাভেল এজেন্সি খুলে বসে। কিন্তু জিয়ার স্ত্রী মিতুর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কোনও আইডি খুঁজে পাওয়া যায়নি।
মেরুল বাড্ডায় বিলাসবহুল ফ্ল্যাট
জিয়ার অফিসের সাবেক কর্মীরা জানান, তার যে কত টাকা আছে সে হয়তো নিজেই জানে না। ঘন ঘন স্ত্রী-সন্তান নিয়ে হংকং, জাপান, সিঙ্গাপুর ঘুরে বেড়ায়। এছাড়া খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজধানীর হাতির ঝিলের কাছে নিদ্রা রিয়েল স্টেট কোম্পানির (ম-৯৭/২, পশ্চিম মেরুল) ৯ তলা ভবনের ৬ তলায় একটি বিলাসবহুল ফ্ল্যাট কিনেছে প্রায় ১ কোটি টাকা দিয়ে। ফ্ল্যাটটি কেনে সে ২০১৬ সালের শেষ দিকে।
ওই ফ্ল্যাটে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ফ্ল্যাটের সামনে লোহার কোলাপসিবল গেট দিয়ে আটকানো, আছে সিসি ক্যামেরা। যদিও ভবনটির অন্য কোনও তলায় অথবা সিঁড়িতে কোনও সিসি ক্যামেরা নেই।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, জিয়ার নিজের রিয়েল এস্টেটের ব্যবসাও রয়েছে। এছাড়া গ্রামের বাড়ি বরিশালেও গড়েছে সম্পদের পাহাড়।
মেরুল বাড্ডার এই ভবনে রয়েছে জিয়ার ফ্ল্যাট বাংলা ট্রিবিউন
জিয়া-মিতুর অপকর্মের ‘স্বীকারোক্তি’
গত বছর বাড্ডা অফিসে থাকার সময় এক নারী কর্মীর ধারণ করা কয়েকটি গোপন ভিডিওতে দেখা যায়, জিয়া নারী কর্মীদের উদ্দেশ্যে বলছে, ‘প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে কিন্তু পত্রিকায় অনেক লেখালেখি হচ্ছে। অনেক কাস্টমার পাওয়া যাবে। কিন্তু আস্তে-ধীরে করতে হবে।’ অন্য একটি ভিডিওতে জিয়া বলছে, ‘কাস্টমারদের কাছ থেকে টাকা বেশি করে নিতে হবে। এসএসসি এবং এইচএসসি’র কাজে ৩০ হাজার চুক্তি হলে ১০ হাজার অ্যাডভান্স নিবা। মানুষ কম দিতে চায়, কিন্তু টাকা আসে। আমি যেখানে ৭০ হাজার টাকায় চুক্তি করতে পারি, তোমরা পারো না কেন? এক লাখ টাকা এসএমএস -বিজ্ঞাপন দিছি, যার সব টাকা এখনও ওঠে নাই।’
অন্য একটি ভিডিওতে জিয়ার স্ত্রী মিতু বলছে, “একটা পুরনো ক্লায়েন্ট কল করেছে। আমি তো কিছুই বলি নাই, আমারে জিজ্ঞেস করছে নাম্বার কোথায় পাইছেন। আমি বলছি, ‘১০০ টাকা দিয়ে সিমটা কিনছি। কেন ভাই, আপনি কার কাছে কল করছিলেন?’ তখন সে বলল, ‘আপু কী বলবো, মালিহা থেকে একটা এসএসসি সার্টিফিকেট কিনছিলাম, কিন্তু সব ভুয়া। টাকা নিচে ঠিকই কিন্তু ভুয়া সার্টিফিকেট দিছে। পরে কল দেই কল ধরে না, আজকে কল ধরছে, কিন্তু আপনি তো অন্যজন।’”
জিয়া এবং মিতু নিজেকে সবসময় আড়ালে রাখে। অফিসে থাকলেও নিরাপদ কক্ষে থাকে। সাধারণত কাস্টমারদের সঙ্গে প্রথম ধাপে তারা কথা বলে না। অনেক চেষ্টা করেও তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি।