বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন কার্যক্রম পরিচালনা করার তারিখ যতই এগিয়ে আসছে, দেশে দেশে পরীক্ষিত আক্রান্তের সংখ্যা ততই কমে যাচ্ছে। ধারণা করা হচ্ছে কোভিড-১৯ হয়তো আমাদের দেশে আঞ্চলিক ব্যাধি হিসেবে পরিগণিত হবে। আঞ্চলিক ব্যাধি বলতে এমন একটি রোগকে বোঝায় যা কোন অঞ্চল বা জনগোষ্ঠী মাঝে স্থায়ীভাবে উপস্থিত থাকে।
বাংলাদেশে শীঘ্রই টিকা কার্যক্রম শুরু হবে।এই টিকা মানুষের দেহে করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরিতে সাহায্য করবে। যদিও বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ইতোমধ্যেই দেশের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষের দেহে রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হয়েছে। উপরন্তু বিগত তিনদিন ধরে টেস্টের জন্য নমুনা দেওয়া রোগীদের মধ্যে মাত্র ৫% রোগী করোনাভাইরাস পজিটিভ। ফলে কয়েকজন গবেষক মনে করেন কোভিড-১৯ আঞ্চলিক ব্যাধিতে রূপ নিচ্ছে।
তবে ভাইরাসবিদ এবং জাতীয় প্রযুক্তি প্রযুক্তি পরামর্শক কমিটির সদস্য অধ্যাপক নজরুল ইসলাম ঢাকা ট্রিবিউনকে বলেন, “কোভিড-১৯ কে এখনই আঞ্চলিক ব্যাধি বলা যাচ্ছে না। আক্রান্তের হার ৫% এর নিচে থাকছে কি না তা দেখার জন্য আমাদের কমপক্ষে দুই বা তিন সপ্তাহ অপেক্ষা করতে হবে। টিকাদান প্রক্রিয়া শীঘ্রই শুরু হবে এবং উল্লেখযোগ্য সংখ্যক লোক সম্ভবত করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তুলবে।” ফলে কোভিড-১৯ অচিরেই আঞ্চলিক ব্যাধিতে রূপ নেবে বলে তিনি মনে করেন।
আক্রান্তের সংখ্যার নিম্নগামীতা
স্বাস্থ্যসেবা অধিদফতর থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী দেশে টেস্টের জন্য নমুনা দেওয়া রোগীদের মধ্যে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ২০% বা তার বেশি। ৫ সেপ্টেম্বর সংক্রমণের হার ছিল ১৫% এর বেশি। তবে এরপর থেকে তা নীচে নামতে শুরু করে। নভেম্বরের শেষের দিকে সংক্রমণের হার আবার ১৫% ছুঁয়ে যায় এবং ৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়তেই থাকে।
৭ ডিসেম্বরের পর সংক্রমণের হার নিম্নগামী হতে হতে ১০% এ এসে নামে যা এপ্রিলের পর সবচেয়ে কম ছিল। ৬ জানুয়ারি থেকে তা আরও কমে ৪%-৬% এসে দাড়ায়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দেশের শীর্ষস্থানীয় একজন মহামারিবিদ ঢাকা ট্রিবিউনকে বলেন, “আক্রান্তের হারের নিম্নগামীতা দেখে বোঝা দেশে মানুষের মধ্যে অঞ্চলভিত্তিক হার্ড ইমিউনিটি তৈরি হয়েছে। প্রতিদিনের আক্রান্তের হার হ্রাস পাচ্ছে। দেশে ভ্যাকসিন এসে পৌঁছেছে। দেশে অনেক মানুষের ভাইরাসের বিরুদ্ধে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে। অতএব, আমরা বলতে পারি বাংলাদেশের কোভিড-১৯ আঞ্চলিক ব্যাধি হিসেবে রূপ নিচ্ছে।”
বাড়ছে আরোগ্য লাভের হার
ডিজিএইচএস এর পরিসংখ্যান অনুযায়ী সংক্রামিত লোকের সংখ্যা আরোগ্য লাভকারীদের সংখ্যার মধ্যে খুব কম ব্যবধান রয়েছে। গত আড়াই মাসে প্রায় ১১৯,৬৬১ জন সংক্রামিত হয়েছে এবং প্রায় ১৪৭,৮৩৫ জন আরোগ্য লাভ করেছে। ডিজিএইচএসের তথ্য অনুসারে, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ৫৩০,২৭১ জন আক্রান্তের ভেতর প্রায় ৮৯.৫৯% মানুষ আরোগ্য লাভ করেছে। নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে এই হার ছিল প্রায় ৭৯.৬৪%।
সোমবার স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, “করোনা মোকাবিলায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের মতো উন্নত দেশের তুলনায় বাংলাদেশ ভালো অবস্থানে সবাই ভেবেছিল কোভিড -১৯ এর দ্বিতীয় তরঙ্গ বাংলাদেশে আঘাত হানতে পারে। তবে মনে হয় বাংলাদেশে দ্বিতীয় তরঙ্গের প্রভাব পড়েনি।”
ভাইরাসবিদ নজরুল ইসলাম বলেন, “শীতকালে বাংলাদেশে চার ধরনের ভাইরাস সংত্রমিত করে। ইনফ্লুয়েঞ্জা এ ভাইরাস, প্যারাইনফ্লুয়েঞ্জা ৩, শ্বাসযন্ত্রের সিনসিটিয়াল ভাইরাস এবং রাইনোভাইরাস। যখন এই চার ধরণের ভাইরাসের কোন একটি রোগীর দেহে উপস্থিত থাকে তখন সাধারণত শ্বাসযন্ত্রের ভাইরাস রোগীর দেহে প্রবেশ করতে পারে না। আমরা ভেবেছিলাম শীতকালে কোভিড-১৯ আমাদের দেশে মারাত্মক রূপ নেবে। তবে আক্রান্তের হার বাড়ার বলে প্রতিনিয়ত হ্রাস পাচ্ছে যা আমাদের জন্য মঙ্গলজনক।”
তিনি আশা করেন, এ অবস্থা অব্যাহত থাকবে। যেহেতু দেশের সব জনগণকে টিকা দিতে অনেক বেশি সময় লাগবে তাই সতর্কতাস্বরূপ তিনি সবাইকে মাস্ক পরা এবং হাত ধোওয়ার অভ্যাস গড়ে তোলার পরামর্শ দিয়েছেন।