বগুড়ায় বিষাক্ত মদপানে মৃতের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। মঙ্গলবার (২ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যা পর্যন্ত গত ৪৮ ঘন্টায় নতুন করে আটজনসহ মোট ১৬ জন মারা যাবার খবর পাওয়া গেছে। তবে আইন শৃংখলা বাহিনী ১০ জনের মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্ত করেছে। বিষাক্ত মদ বিক্রি করে হত্যায় জড়িত থাকার মামলায় সদর থানা পুলিশ রাতেই চারটি হোমিও ফার্মেসির ৪ মালিক-কর্মচারীকে গ্রেফতার করেছে।
বুধবার (৩ ফেব্রুয়ারি) সকালে সদর থানার ওসি হুমায়ুন কবির জানান, তারা এখন পর্যন্ত বিষাক্ত মদপানে প্রেমনাথ, সুমন, রামনাথ, সাজু, পলাশ, জলিল, জুলফিকার ও রমজান আলীর মৃত্যুর তথ্য পেয়েছেন। ওই আটজনের মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্ত করা হয়েছে। তবে মৃতের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে। তিনি আরও জানান, মদপানে অসুস্থ শহরের শিববাটি এলাকার হোটেল শ্রমিক রঞ্জু মিয়ার ভাই মনোয়ার হোসেন সোমবার রাতে সদর থানায় শহরের ফুলবাড়ি এলাকার পারুল হোমিও হলের মালিক নুরুন্নবী শেখ ও তার ভাই পুনম হোমিও হলের মালিক নুর আলম শেখ এবং তিনমাথা এলাকার খান হোমিও হলের মালিক শাহিনুর ইসলামের নাম উল্লেখ করে আরও অজ্ঞাতদের বিরুদ্ধে বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেছেন। মঙ্গলবার রাতভর বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে ৪জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অন্যদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে।
গ্রেফতার চারজন হচ্ছে, বগুড়া শহরের ফুলবাড়ি এলাকার পারুল হোমিও হলের মালিক নুরুন্নবী শেখ, গালাপট্টি এলাকার মুন হোমিও হলের মালিক এমএ খালেক, চেলোপাড়ার করতোয়া হোমিও হলের মালিক শাহিদুল ইসলাম ও একই এলাকার হাসান হোমিও হলের কর্মচারী মো. জুয়েল।
পুলিশের সূত্র ও বিভিন্ন এলাকায় খোঁজ নিয়ে বিষাক্ত মদপানে মৃত ১৬ জনের নাম পাওয়া গেছে। এদের মধ্যে চারজন হাসপাতালে ও ১২ জন নিজ নিজ বাড়িতে মারা গেছেন। পুলিশ ১০ জনের মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্ত করলেও অন্যদের মরদেহ স্বজনরা পুলিশকে না জানিয়ে দাফন করেছেন।
শাজাহানপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল্লাহ আল মামুন জানিয়েছেন, বিষাক্ত মদপানে মারা গেছেন সন্দেহে দুরুলিয়া গ্রামের মেহেদী হাসান ও কাটাবাড়িয়া গ্রামের আহাদ আলীর মরদেহ উদ্ধার করে মর্গে পাঠানো হয়েছে।
এদিকে মদপানে মৃত প্রেমনাথের ছেলে সুজন রবিদাস জানান, তারা পেশায় মুচি। তার বাবা প্রেমনাথ, চাচা রামনাথ, বড় ভাই সুমন ও প্রতিবেশি রমজান আলী তিনমাথা এলাকার খান হোমিও হলের মালিক শাহিনুর ইসলামের কাছ থেকে নিয়মিত মদ কিনে পান করতেন। ওই দোকান থেকে তারা ৩১ জানুয়ারি মদ কিনে পান করে মারা গেছেন।
বর্তমানে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালে শহরের শিববাটি এলাকার হোটেল শ্রমিক রঞ্জু মিয়া (৪০), ফুলবাড়ি এলাকার মৃত পলাশের ভাই আতিকুর রহমান পায়েল (৩৮) এবং তার বন্ধু কালিতলার ইলেকট্রিক মিস্ত্রি আইয়ুব আলী (৩৯) চিকিৎসাধীন রয়েছেন। গোপনে চিকিৎসা নিচ্ছেন, সারিয়াকান্দির হাটফুলবাড়িতে মদপানে মৃত মাদক ব্যবসায়ী লাজু মিয়ার ভাই শফিকুল ইসলাম। এছাড়া শাজাহানপুুর উপজেলায় অন্তত পাঁচজন চিকিৎসা নিচ্ছেন।
মঙ্গলবার সন্ধ্যা পর্যন্ত মৃত যাদের নাম পাওয়া গেছে, তারা হচ্ছে, বগুড়া শহরের পুরান বগুড়া দক্ষিণপাড়ার রামনাথ রবিদাস (৬০), তার ভাই প্রেমনাথ রবিদাস (৭০), তার ছেলে সুমন রবিদাস (৩৮), পুরান বগুড়া জিলাদারপাড়ার কুলি শ্রমিক রমজান আলী (৬৫), শাজাহানপুর উপজেলার দুরুলিয়া মন্ডলপাড়ার অটো মেকানিক্স মেহেদী হাসান (২১), রহিমাবাদ উত্তরপাড়ার ইলেকট্রিক মিস্ত্রি আবদুর রাজ্জাক (৪০), কাটাবাড়িয়া গ্রামের সার্ভেয়ার আহাদ আলী (৪০), পুরান বগুড়া দক্ষিণপাড়ার ফাঁপোড় এলাকার রিকশা চালক জুলফিকার রহমান ফকু (৫৬), ফুলবাড়ি মধ্যপাড়ার রিকশা চালক আবদুল জলিল (৬৫), ফুলবাড়ি দক্ষিণপাড়ার কারখানা শ্রমিক পলাশ মিয়া (৩৪), কাটনারপাড়া হটুমিয়া লেনের হোটেল শ্রমিক সাজু মিয়া (৫৫), একই এলাকার বাবুর্চি মোজাহার আলী (৭০), চারমাথা ভবেরবাজারের হোটেল ব্যবসায়ী আলমগীর হোসেন (৫৫), তিনমাথা এলাকার রাজমিস্ত্রি রমজান আলী (৬০), কাহালু উপজেলার উলট্ট গ্রামের অটো রিকশা চালক আবুল কালাম (৫০) এবং সারিয়াকান্দির হাটফুলবাড়ি দক্ষিণপাড়ার রিকশা চালক মাদক ব্যবসায়ী লাজু মিয়া (৫০)।