দেশে দ্বৈত পাসপোর্টধারী নাগরিকের সংখ্যা মোট ১৩ হাজার ৯৩১ জন। গত বুধবার (৩১ মার্চ) অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয়ে দাখিল করা বৈধ দ্বৈত পাসপোর্ট ও দ্বৈত নাগরিক সংক্রান্ত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) পুলিশ সুপার (ইমিগ্রেশন) এই প্রতিবেদন দাখিল করে।
প্রতিবেদনে দেখা যায়, বাংলাদেশের নাগরিকেরা যেমন যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, সুইডেন, সুইজারল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, জার্মানির মতো উন্নত দেশের নাগরিকত্ব পেয়েছেন, ঠিক তেমনই আবার কিছু অতি দরিদ্র ও বিতর্কিত দেশের নাগরিকত্বও নিয়েছেন কেউ কেউ।
এরমধ্যে সোমালিয়া, ইয়েমেন, জিবুতি, তানজানিয়া, সেন্ট কিটস এন্ড নেভিস, ফারো দ্বীপপুঞ্জ, ত্রিনিদাদ এন্ড টোবাংগনিয়ান, ওয়ালেস এন্ড ফুটুনা ইত্যাদি দেশ এমনকি উত্তর কোরিয়ার নাগরিকত্ব পেয়েছেন এক বাংলাদেশি।
দ্বৈত নাগরিকদের সংখ্যা ও দেশ
যুক্তরাষ্ট্রে ১০ হাজার ৭৭৪ জন, আফগানিস্তান ৯ জন, আলজেরিয়া ১ জন, এন্টিগুয়া ৫ জন, অস্ট্রেলিয়া ১৭৮ জন, অস্ট্রিয়া ৭ জন, বাহামিয়ান ১ জন, বাহরাইন ২ জন, বারবাডিয়ান ১ জন, বেলজিয়াম ২১ জন, ভুটান ২ জন, বলিভিয়া ১ জন, বসনিয়া ১ জন, ব্রাজেলিয়ান ২ জন, ইংল্যান্ড ৫৬৮ জন, ব্রুনাই ২ জন, বুলগেরিয়া ১ জন, কানাডা ৩৮৯ জন, কম্বোডিয়া ২ জন, চিলি ১ জন, চীনে ১৭৭ জন, ডেনমার্ক ৫ জন, জিবুতি ১ জন, ডমিনিকান ৩ জন, ডাচ ১২ জন, পূর্ব টিমর্স ১ জন, মিশর ১১ জন, সাইপ্রাস ২ জন, ফারো দ্বীপপুঞ্জ ১ জন, ফিলিপাইন ৪০ জন, ফিন্স ২১ জন, ফ্রান্স ২১ জন, জার্মানি ২৩৮ জন, গ্রীক ৩ জন, হংকং ১৫ জন, ভারত ৬১৭ জন, ইন্দোনেশিয়া ৪০ জন, ইরান ৭ জন, ইরাক ৭ জন, আইরিশ ১১ জন, ইতালি ১১৭ জন, জাপান ৬৬ জন, জর্ডান ১ জন, কেনিয়া ৩ জন, উত্তর কোরিয়া ১ জন, দক্ষিণ কোরিয়া ৪১ জন, কুয়েত ২ জন এবং কিরগিজ ২ জন।
এছাড়াও লাটভিয়ান ১ জন, লেবানন ২ জন, লিবিয়া ১ জন, লুক্সেমবার্গ ১ জন, মালয়েশিয়া ৭৬ জন, মালদ্বীপ ১৩ জন, মালিয়ান ৪ জন, মরিশাসে ২ জন, মালদোভান ২ জন, মঙ্গোলিয়ান ৫ জন, মায়ানমার ৮ জন, নেপাল ২২ জন, নিউজিল্যান্ড ১২ জন, নাইজেরিয়ান ৩ জন, নরওয়ের ৩ জন, পাকিস্তানি ১১৯ জন, ফিলিস্তিনে ১ জন, পেরু ১ জন, ফিলিপাইনে ২ জন, পোল্যান্ডের ৪ জন, পর্তুগালে ৬ জন, কাতার ১ জন, রোমানিয়ান ৩ জন, রাশিয়ান ৬৫ জন, গ্রানাডা ১ জন, সৌদি আরব ১০ জন, সিঙ্গাপুর ১৭ জন, সোমালিয়া ১৬ জন, দক্ষিণ আফ্রিকা ১৩ জন, স্প্যানিশ ১১ জন, শ্রীলঙ্কা ৫৭ জন, সেন্ট কিটস এন্ড নেভিস ৪ জন, সুইডেন ৫৯ জন, সুইজারল্যান্ড ২৩ জন, তাইওয়ান ৬ জন, তানজেনিয়া ৮ জন, থাইল্যান্ড ২৬ জন, তিমুর ১ জন, ত্রিনিদাদ এন্ড টোবাংগনিয়ান ১ জন, তুর্কি ১৫ জন, সংযুক্ত আরব আমিরাত ৮ জন, উগান্ডা ৬ জন, ইউক্রেন ৪ জন, উজবেকিস্তান ২ জন, ভেনিজুয়েলা ২ জন, ভিয়েতনাম ৫ জন, ওয়ালেস এন্ড ফুটুনা ১ জন, ইয়েমেন ৩ জন ও জিম্বাবুয়েতে ২ জন ব্যক্তি দ্বৈত নাগরিক হিসেবে বসবাস করছেন।
এর বাইরেও রয়েছে অবৈধ দ্বৈত নাগরিক
রাষ্ট্রপক্ষের আইন কর্মকর্তা ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক জানান, বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদারের নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চ দেশে দ্বৈত পাসপোর্টধারী ও দ্বৈত নাগরিকদের তালিকা দাখিল করতে বলেন। সে অনুযায়ী এসবি পুলিশের পক্ষ থেকে ১৩ হাজার ৯৩১ জন দ্বৈত পাসপোর্টধারী দ্বৈত নাগরিকের তালিকা দাখিল করা হয়েছে।
“এটা হলো যারা বৈধভাবে দ্বৈত নাগরিক ও দ্বৈত পাসপোর্টধারী তাদের তালিকা। এর বাইরেও কিন্তু অবৈধ দ্বৈত পাসপোর্টধারী ও দ্বৈতনাগরিক রয়েছে। আমরা এসবি পুলিশের দাখিল করা এই তথ্য এফিডেভিট আকারে হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট বেঞ্চে দাখিল করব। এরপর এ বিষয়ে শুনানি হবে,” বলেন তিনি।
গত বছরের ২১ ডিসেম্বর অর্থপাচার ও দুর্নীতির মাধ্যমে যারা বিদেশে বাড়ি নির্মাণ করেছেন অথবা কিনেছেন, সেই বাংলাদেশিদের মধ্যে যাদের দ্বৈত নাগরিকত্ব ও পাসপোর্ট আছে এবং যারা দেশের তিনটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে দেশে-বিদেশে ঘন ঘন যাতায়াত করছেন, তাদের তালিকা চান হাইকোর্ট। বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি আহমেদ সোহেলের ভার্চুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন নজরে নিয়ে গত বছরের ২২ নভেম্বর একই বেঞ্চ স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে এক আদেশে বিদেশে অর্থ পাচারকারীদের সব ধরনের তথ্য চান।