এক সপ্তাহের লকডাউনের তৃতীয় দিনে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছে।
এর আগে, সরকার দেশব্যাপী লকডাউনের মধ্যেই বুধবার থেকে সিটি কর্পোরেশন অঞ্চলে গণপরিবহণ চলাচলে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার ঘোষণা দেয়।
এই সিদ্ধান্তটি অন্যান্য বাণিজ্যিক ক্ষেত্র এবং শহরজুড়ে রাইড শেয়ারিং মোটরসাইকেল চালকদের মধ্যে ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে।
গুলিস্তানে, তৈরি পোশাক বিক্রেতারা স্বাস্থ্যবিধি মেনে তাদের দোকান পুনরায় চালু করার দাবিতে একটি বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে।
ঢাকা রেডিমেড গার্মেন্টস ব্যবসায়ীদের জন্য সমবায় সমিতির ব্যানারে বিক্ষোভকারীরা ফুলবাড়িয়া সুপার মার্কেট-২ এর সামনে অবস্থান নিয়ে বিআরটিসি টার্মিনালের সামনের রাস্তা অবরোধ করে।
প্রতিবাদকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা ফোরামের সভাপতি মো. আবদুল মান্নান বলেন, সরকার যদি দোকান পুনরায় খোলার অনুমতি না দেয় তবে একটি কঠোর আন্দোলনের ডাক দেওয়া হবে।
তিনি আরও বলেন, ব্যবসায়ীরা প্রয়োজনে নিজেরাই দোকান খুলবেন।
পরে সকাল ১১টার দিকে পুলিশ রাস্তা থেকে অবরোধকারীদের সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলে ধাওয়া ও পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।
রাজধানীর মগবাজার মোড়ে মোটরসাইকেলে রাইড শেয়ারিংয়ের চালকদের বিক্ষোভ। মেহেদী হাসান/ঢাকা ট্রিবিউন
পুলিশের দাবি, তারা যানজট কমাতে বিক্ষোভকারীদের রাস্তা ছেড়ে যেতে বলেছিল, তবে বিক্ষোভকারীরা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে এবং একপর্যায়ে পুলিশের দিকে ইটপাটকেল ছুঁড়তে শুরু করে।
এ বিষয়ে এক পুলিশ কর্মকর্তা ঢাকা ট্রিবিউনকে বলেন, পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করতে ধাওয়া দেয়। এ ঘটনায় কেউ আহত হয়নি।
এদিকে, বসুন্ধরা সিটি শপিং মলের দোকান মালিক ও শ্রমিকরা অবিলম্বে দোকান ও মার্কেট পুনরায় চালু করার দাবিতে পান্থপথে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন। এ বিষয়ে তারা প্রধানমন্ত্রী ও সিটি কর্পোরেশনের মেয়রের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
এছাড়া লকডাউনের কারণে শপিংমল বন্ধের প্রতিবাদ করে নিউমার্কেট এবং সংলগ্ন শপিংমলগুলোতে দোকান মালিক ও কর্মচারীরা টানা চতুর্থ দিন বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন।
তাদের দাবি, লকডাউন চলাকালেও চার ঘণ্টার জন্য মার্কেট খোলা রাখতে অনুমতি দেওয়া উচিত।
মোটরসাইকেলে রাইড শেয়ারিং চালকদের বিক্ষোভ
সরকারের পক্ষ থেকে রাইড শেয়ারিং সেবার নিষেধাজ্ঞার অবসানের দাবিতে বুধবার (৭ এপ্রিল) রাইড শেয়ারিংয়ে মোটরসাইকেল চালকরা রাজধানীর বিমানবন্দর সড়ক, এমইএস মোড়, মিরপুর, মগবাজার ও জাতীয় প্রেসক্লাব সড়কসহ কয়েকটি পুরাতন সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করে।
বুধবার সকালে মগবাজার মোড় অবরোধ করে রাখার কয়েক ঘণ্টা পরে পুলিশ রাইড শেয়ারিংয়ের মোটরসাইকেল চালকদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
মিরপুর এলাকায় বিক্ষোভে যোগ দেওয়া মোটরসাইকেল চালক মো. আবুল বাশার ঢাকা ট্রিবিউনকে বলেন, “করোনাভাইরাসের কারণে চাকরি হারিয়ে আমি রাইড শেয়ারিংয়ের মাধ্যমে পরিবারের ভরণপোষণ যোগাচ্ছি। এই পরিষেবাটি আবার চালু না হলে আমার চারজনের পরিবার অনাহারে থাকবে।”
“কোভিড-১৯ সংক্রমণের ক্ষেত্রে পাবলিক ট্রান্সপোর্টে ভ্রমণের চেয়ে রাইড শেয়ারিং নিরাপদ। যদি সরকারি পরিবহনগুলো আবার চালু করা হয়, তবে কর্তৃপক্ষ এখনও আমাদের পরিষেবা বন্ধ রাখবে কেন?” প্রশ্ন করেন ত
মোটরসাইকেল চালকদের বিক্ষোভ ছত্রভঙ্গ করতে লাঠিচার্জ করে পুলিশ। মেহেদী হাসান/ঢাকা ট্রিবিউন
তার দাবি, তারা মিরপুরের সনি সিনেমা হলের পাশে শান্তিপূর্ণভাবে বিক্ষোভ করছিলেন। সেই বিক্ষোভে পুলিশ হামলা করে।
মিরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাজিরুর রহমান বলেন, পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করেনি। তাদের প্রতিবাদ কর্মসূচি শেষে নিজেরাই ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়।
শাহ আলী থানার ওসি এ বি এম আসাদুজ্জামান ঢাকা ট্রিবিউনকে জানান, অনেক মোটরসাইকেল আরোহী এক ঘণ্টার জন্য মিরপুর দশ মোড়ে জড় হলে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
এভাবে শহরব্যাপী বিভিন্ন অবরোধে যান চলাচল কয়েকঘণ্টার জন্য স্থবির হয়ে যায়।
এদিকে, সকাল সাড়ে দশটার দিকে প্রেস ক্লাবের সামনে রাইড শেয়ারিং সার্ভিসের অধীনে শতাধিক মোটরসাইকেল চালক নিষেধাজ্ঞার সময়ে চলাচলের কারণে তাদের গাড়ির নামে মামলা করার প্রতিবাদ করেছেন।
প্রসঙ্গত, নতুন করে ঘোষিত এই লকডাউন ১১ এপ্রিল পর্যন্ত চলবে। লকডাউনের দ্বিতীয় দিনে ১২টি সিটি কর্পোরেশন এলাকায় ৫০% যাত্রী নিয়ে গণপরিবহন চলাচালের অনুমতি দেওয়া হয়।
বুধবার রাজধানী ঘুরে বহু লোককে স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা করেই চলাচল করতে দেখা যায়। এছাড়া ফার্মগেট ও কারওয়ান বাজার এলাকার অনেক দোকানদারকে নিষিদ্ধ সময়েও গোপনে পণ্য বিক্রি করতে দেখা গেছে।