ভারত থেকে আসা যাত্রীদের মাধ্যমে করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে ১৮টি বিধি-নিষেধসহ সীমান্ত সোমবার (২৬ এপ্রিল) থেকে বন্ধ রয়েছে। এর ফলে প্রথম দিনেই বেনাপোল ও পেট্রাপোলে আটকা পড়েন বাংলাদেশ ও ভারতের সাড়ে ৩ শতাধিক যাত্রী।
যাত্রীরা ভিড় করেন বেনাপোল ও পেট্রাপোল ইমিগ্রেশন চেকপোস্টে। সকাল থেকে দুই দেশের কোনো যাত্রীর ইমিগ্রেশন হয়নি।
পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত আগামী ৯ মে পর্যন্ত ভারতের সঙ্গে সীমান্ত পথ বন্ধ থাকবে। হঠাৎ যাত্রী পারাপার বন্ধ করে দেওয়ায় পেট্রাপোল ইমিগ্রেশনে বাংলাদেশি যাত্রীদের ভিড় বেড়ে যায়।
বেনাপোল স্থল বন্দরের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, “সরকারি নিষেধাজ্ঞার কারণে বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে সকল ধরনের যাত্রী গমনাগমন সম্পূর্ণ রূপে বন্ধ রয়েছে। তবে আমদানি-রপ্তানি স্বাভাবিক রয়েছে।”
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ সীমান্তে আটকা পড়েন মেডিকেল ছাত্রসহ অন্তত ৫০ জন ভারতীয় নাগরিক। অন্যদিকে ভারতের পেট্রাপোল সীমান্তে আটকা পড়েন অন্তত ২৫০ বাংলাদেশি। আটকে পড়া বাংলাদেশিদের অধিকাংশ মেডিকেল ভিসা নিয়ে চিকিৎসার জন্য ভারতে গিয়েছিলেন।
জানা গেছে, দিন যতই বাড়ছে ভারত ভ্রমণকারীদের মাধ্যমে করোনাভাইরাস সংক্রমণ বাড়ছে। বিষয়টি মাথায় রেখে ২৯ মার্চ বাংলাদেশ সরকার সতর্কতা হিসেবে ১৮টি বিধিনিষেধ দিয়ে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে ইমিগ্রেশনসহ বিভিন্ন দফতরে চিঠি পাঠায়।
এর মধ্যে একটি ধারা ছিল, যারা ভারত থেকে ফিরবেন অবশ্যই ব্যক্তিগত খরচে ১৪ দিন বেনাপোলে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে। পরে সংক্রমণ ঝুঁকিমুক্ত হলে ফিরবেন বাড়িতে। কিন্তু এসব নির্দেশনা বাস্তবায়ন করেও করোনাভাইরাসের প্রকোপ নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছিল না। অবশেষে বাধ্য হয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি জরুরি বৈঠকে সোমবার থেকে ১৪ দিনের জন্য সীমান্তপথে ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে যাত্রী যাতায়াত বন্ধে ইমিগ্রেশন কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করে।
এদিকে সরকারের এ সিদ্ধান্তকে অনেকে সাধুবাদ জানিয়েছেন। আবার অনেকে মনে করছেন বন্ধ ঘোষণায় দুই দিনের সময় বেঁধে দিলে ভালো হতো। হঠাৎ করে ইমিগ্রেশন বন্ধ কার্যক্রম ঘোষণার এ তথ্য জানতে না পারা অনেকে যাত্রী সকাল থেকে ভিড় করছেন বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল ইমিগ্রেশন অফিসের সামনে। এ সব যাত্রীদের মধ্যে অধিকাংশ রয়েছে চিকিৎসা, বাণিজ্য ও শিক্ষা গ্রহণে যাতায়াতকারী। আটকে পড়া এ সব যাত্রীদের অনেকের একদিকে যেমন ভিসা শেষের পথে, তেমনি অর্থনৈতিক অবস্থাও সংকটের মধ্যে। এতে তারা বলতে গেলে অনেকটা অসহায় হয়ে পড়েছেন।
মনির হোসেন নামের এক যাত্রী জানান, তিনি ১০ বছরের শিশুকে নিয়ে হার্টের চিকিৎসার জন্য চেন্নাই গিয়েছিলেন। অপারেশন শেষে সোমবার ভোরে বেনাপোলে পৌঁছে লকডাউনের খবর পান।
বেনাপোল ইমিগ্রেশনের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আহসান হাবিব জানান, আটকে পড়া যাত্রীদের দেশে ফেরত আনার ব্যাপারে কোনো নির্দেশনা পাননি তিনি।
বেনাপোল ইমিগ্রেশনের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আহসান হাবিব বলেন, “১৪ দিন ইমিগ্রেশন বন্ধের নির্দেশনাপত্র হাতে পেয়েছি। সকাল থেকে যাত্রীদের পাসপোর্টের যে আনুষ্ঠানিকতা তা বন্ধ রাখা হয়েছে।”
বেনাপোল স্থলবন্দরের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক আব্দুল জলিল বলেন, “নিষেধাজ্ঞার কারণে সোমবার সকাল থেকে কোনো যাত্রী ভারতে প্রবেশ করেনি। ভারত থেকেও কোনো যাত্রী বাংলাদেশে আসেনি। তবে বাণিজ্যের ক্ষেত্রে কোনো বিধি-নিষেধ নেই। ফলে আমদানি-রপ্তানি ও বন্দর থেকে পণ্য খালাস সচল আছে।”
বেনাপোল ইমিগ্রেশন স্বাস্থ্য বিভাগের মেডিকেল অফিসার হাবিবুর রহমান জানান, ভারত থেকে রোববার ৫৭০ জন বাংলাদেশি যাত্রী দেশে ফিরেছেন। এ যাত্রীর মধ্যে তিনজন করোনাভাইরাস পজিটিভ ছিল। এরা ভারতে গিয়ে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হন। আক্রান্তদের যশোর সদর হাসপাতালের করোনা ইউনিটে ভর্তি করা হয়েছে। করোনা নেগেটিভ সনদ না থাকা ১১ জনকে বেনাপোল রজনীগন্ধা আবাসিক হোটেলে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে।