গায়ে লাল পাঞ্জাবি আর মুখে বাহারি রঙ মেখে প্রতিদিনই বাড়ি থেকে বের হন বাবুল হোসেন বাবু গায়েন। জীবিকার তাগিদে ছুটে চলেন জেলার বিভিন্ন পথে প্রান্তরে। গান শুনিয়ে আনন্দ দিয়ে কিছু পয়সা পেলেই এতেই তিনি খুশি। বাহারি সাজের এ মানুষটি গান শোনানোর সময় চোখে মুখে আনন্দ থাকলেও বাইরে থেকে দেখে বোঝার উপায় নেই তার বুকরে ভেতরে লুকিয়ে আছে এক সাগর কষ্ট।
পৃথিবীতে আপন বলতে জন্মদাতা মা ও দুই মেয়ে ছাড়া বাবুলের আর কেউ নেই। স্ত্রীকে হারিয়েছেন অনেক আগেই। সংসার চালাতে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে ঘুরে গান আর গল্প শোনান তিনি। গান শেষে খাবার খেয়ে পথের ধারে, রেলস্টেশন কিংবা বাস টার্মিনালে ঘুমিয়ে পড়েন তিনি।
অকালে স্ত্রীকে হারানোর বেদনা অন্যদিকে সংসারে অভাব। সব মিলিয়ে নিজের বুকে হাজারো কষ্ট চেপে রেখে অন্যদের গান শুনিয়ে আনন্দ দেওয়া তার প্রধান কাজ। আর এমন কষ্টের কাজ প্রায় এক যুগ ধরে করে আসছেন নওগাঁ সদর উপজেলার ভিমপুর গ্রামের বাবু গায়েন।
বাবুল হোসেন বাবু বলেন, "আগে গ্রামে গ্রামে যাত্রাপালায় অভিনয় করতাম। এখন আর যাত্রাপালার দিন নাই। তাই ১২ বছর ধরে বিভিন্ন জায়গায় গান করে বেড়াই। বয়সের কারণে কাজ করতে পারি না এজন্য কেউ কাজে নেয় না। ছোট বেলায় বাবাকে হারিয়েছি। স্কুলে যাওয়ার সুযোগ হয়নি। সেই ছোট থেকেই সংসার আমাকে চালাতে হয়েছে। আমার তিনটি মেয়ে আছে। কী কপাল আমার!"
তিনি আরও বলেন, "বড় মেয়ে পাঁচ বছর, মেজ মেয়ে তিন বছর আর ছোট মেয়ের বয়স যখন ছয় মাস তখন আমার স্ত্রী মারা যায়। খুব কষ্টে আমি আর আমার মা মিলে মেয়েদের বড় করেছি। প্রতিদিন গান করে যে টাকা উপার্জন হয় দিন শেষে সেই টাকা খাবার কিনে বাড়িতে যেতাম। যেদিন টাকা কম উপার্জন হত সেদিন আর বাজার-সওদা করতে পারতাম না। গান করে যে টাকা উপার্জন হয় তা থেকে একটু একটু করে কিছু টাকা জমিয়ে বড় দুটি মেয়েকে বিয়ে দিয়েছি। এখন আর একটি মেয়ে আছে, ১২ বছর বয়স তার।"
বগুড়ার সান্তাহার, নওগাঁ, নাটোর, গাইবান্ধা, জয়পুরহাট, রাজশাহী, কুষ্টিয়াসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় ঘুরে ঘুরে গান করেন বাবু গায়েন। তিনি বলেন, "মানুষ আমার গান শুনে যে টাকা দেয় তাতেই আমার সংসার চলে। প্রতিদিন ৩০০-৪০০ টাকা পর্যন্ত আয় হয়। আবার কোনো দিন ২০০ টাকাও উপার্জন হয়। দুই মেয়েকে বিয়ে দেওয়ার সময় লোন নিয়েছিলাম। এখন প্রতিমাসে তার কিস্তি দিতে হয়। সংসারের অভাবের কারণে আমি পড়ালেখা করতে পারিনি। আমার মেয়েদেরও পড়ালেখা করাতে পারিনি।"