সিলেট বিভাগের সবচেয়ে ব্যয়বহুল সড়ক “বঙ্গবন্ধু মহাসড়ক” উদ্বোধনের আগেই সড়কের এক পাশে প্রায় ৩০ মিটার এলাকা ধসে পড়েছে।
তবে মঙ্গলবার (২২ জুন) থেকে ধসে পড়া ওই অংশের মেরামত শুরু হয়েছে। সংশ্লিষ্টদের মতে, সড়কের জমি ঠিকমতো তৈরি না হওয়ায় এমনটি হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সিলেট-কোম্পানীগঞ্জ-ভোলাগঞ্জ “বঙ্গবন্ধু মহাসড়ক” এলাকায় বিগত কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিতে ব্লকগুলো ধসে যায়। সোমবার (২১ জুন) এ সংক্রান্ত ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে মঙ্গলবার সড়ক ও জনপথ বিভাগ এবং নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান স্পেক্ট্রা ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেড-এর প্রতিনিধিরা সড়কটি পরিদর্শন করেন।
সড়ক ও জনপথ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ২০১৭ সালের শুরুর দিকে সিলেট ওসমানী বিমানবন্দর বাইপাস ইন্টারসেকশন লালবাগ-সালুটিকর-কোম্পানীগঞ্জ-ভোলাগঞ্জ পর্যন্ত যাতায়াতের জন্য বঙ্গবন্ধু মহাসড়ক নির্মাণের কাজ শুরু হয়।
৩৭ কিলোমিটার দীর্ঘ ও ২৪ ফুট প্রস্থের সড়কটি নির্মাণের শুরুর দিকে এ প্রকল্পের ব্যয় ৪১৫ কোটি ৫০ লাখ টাকা ধরা হলেও প্রকল্পের মেয়াদ দু’দফা বাড়িয়ে বর্তমান ব্যয় ধরা হয়েছে ৬২৬ কোটি ৯২ লাখ টাকা। সড়কটি নির্মাণে প্রতি কিলোমিটারে ব্যয় হচ্ছে ২০ কোটি ৮৯ লাখ টাকা।
সড়ক ও জনপথ বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী খালেদুজ্জামান জানান, চলতি বছরের ৩০ জুন এ প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হবার কথা। ইতোমধ্যে মূল রাস্তার কাজ শেষ হয়েছে। তবে এখনো কিছু আনুষঙ্গিক কাজ বাকি আছে। আশা করছি, আগামী ফেব্রুয়ারি-মার্চের আগেই প্রকল্পের কাজ শেষ করা যাবে। এজন্য এরই মধ্যে প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে।
তিনি আরও জানান, ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান কর্তৃক সড়কটি হস্তান্তরের আগেই রাস্তার কিছু অংশ ধসে পড়েছে। তাই ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানই এই অংশ মেরামত করছে।
এ বিষয়ে সড়ক ও জনপথ বিভাগের বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, “সমস্যা কেবল ওই একটি স্থানেই হয়েছে। তবে সংস্কারের কাজ শুরু হয়েছে। শিগগিরই সংস্কারের কাজ হয়ে যাবে।”
স্থানীয়দের অভিযোগ, সড়ক ও জনপথ বিভাগের কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানটি নিম্নমানের কাজ করায় উদ্বোধনের আগেই ব্লকগুলো ধসে পড়েছে। এমনকি সড়কের নির্মাণ কাজ শুরুর সময়ে পাথর, সিমেন্টসহ বিভিন্ন ধরনের নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করা নিয়ে অভিযোগ তুলেছিলেন তারা। মানববন্ধন ও স্মারকলিপি প্রদানসহ নানা কর্মসূচিও পালন করেছিলেন স্থানীয়রা।
তবে এ সকল অভিযোগ অস্বীকার করেছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সড়ক ও জনপথ বিভাগের এক প্রকৌশলী।
স্পেক্ট্রা ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেড এর প্রকৌশলী ও উপ-প্রকল্প ব্যবস্থাপক তৌহিদ জামিল বলেন, “বৃষ্টিতে ব্লকগুলো ধ্বসে পড়েছে। নতুন মাটি, তাই ভারী বৃষ্টি হলে অনেক সময় ধসে যায়।”
তিনি আরও জানান, সড়কের হস্তান্তরের পরও দুই বছর এর রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকবে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি।
পূর্বের প্রকল্প প্রস্তাব অনুযায়ী, ৩০ কিলোমিটার রাস্তার মধ্যে সারফেস কোর্স (নতুন সড়ক, বিটুমিনাস) নির্মাণের কথা ছিল ১৬.৭২ কিলোমিটার রাস্তায়। এতে ব্যয় ধরা হয় ২২৫ কোটি টাকা। আর রিজিড পেভমেন্টে (কংক্রিট) ১৩.৩৩ কিলোমিটার রাস্তা নির্মাণের কথা ছিল। এতে ব্যয় ধরা হয় ১৯০ কোটি টাকা। কিন্তু, সড়কটির গুরুত্ব বিবেচনা করে পরবর্তীতে সংশ্লিষ্টরা পুরো রাস্তাই রিজিভ পেভমেন্টে করার সিদ্ধান্ত নেন। যার ফলে ব্যয় বেড়ে বর্তমানে ৬২৬ কোটি ৯২ লাখ টাকায় দাঁড়িয়েছে।