Tuesday, March 18, 2025

সেকশন

English
Dhaka Tribune

কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ ক্যান্টিনে বিক্রি হচ্ছিল মাদকদ্রব্য!

সন্ধ্যা নামলেই রাতের আঁধারে ভিক্টোরিয়ার বন্ধ ক্যাম্পাস চলে যায় মাদকসেবী যৌনকমীদের দখলে

আপডেট : ১৫ জুলাই ২০২১, ১১:৩৬ পিএম

মারণঘাতী করোনাভাইরাসের প্রকোপে বিগত ১৬ মাস ধরে বন্ধ রয়েছে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজ ক্যাম্পাস। বন্ধ ক্যাম্পাস আর পরিত্যক্ত ছাত্রাবাস এখন হয়ে উঠেছে মাদকসেবী আর যৌনকর্মীদের আস্তানা। ছুটির এ সময়ে অতিরিক্ত সতর্কতা আর পুলিশের টহল উপক্ষা করে কলেজ ক্যান্টিনে চলে মাদক বিক্রি। রাতের আঁধারে পরিত্যক্ত ছাত্রাবাস থাকে যৌনকর্মীদের দখলে। 

কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের ডিগ্রি শাখার ২২টি বিভাগে প্রায় ২৫ হাজার শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করেন। কবি নজরুল ইসলাম ছাত্রাবাস ও নওয়াব ফয়জুন্নেসা হলে হাজারো শিক্ষার্থী আবাসিক সুবিধা পেয়ে থাকে। এছাড়া, কয়েক হাজার ছাত্র-ছাত্রী ধর্মপুর এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকেন। বাসিন্দারা নিরাপত্তাহীনতার কথা জানিয়েছেন।

একাধিক বিশ্বস্ত সূত্র থেকে জানা যায়, কলেজের কান্দিরপাড় উচ্চমাধ্যমিক শাখায় দেয়ালের উপর দিয়ে বহিরাগতরা প্রবেশ করেন। তারা রাতে অবস্থান করে মাদক সেবন করেন। নিউ হোস্টেল ও শেরে বাংলা ছাত্রী হোস্টেলের পরিত্যক্ত ভবনে রাতের আধাঁরে যৌনকর্মীদের যাতায়াত রয়েছে। ডিগ্রি শাখার পরীক্ষা ভবনের টয়লেটের সেপটিক ট্যাংক, জিয়া অডিটরিয়ারের পেছনে, মোতাহের হোসেন কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি ভবনের সামনে, কথা ভবনের নিচতলা, বিজ্ঞান ভবন-২ এর বিশেষ কিছু কক্ষে মাদকসেবীদের আড্ডা জমে। দিনে কলা ভবনের তিনতলা, রাতে নিচতলায় মাদকসেবন করে স্থানীয় যুবকরা। সন্ধ্যা থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত কলেজ ক্যান্টিন ক্যাফে-৭১ এর চলে মাদকবিক্রি। শহর, শহরতলী ও কোটবাড়ি এলাকার মাদকসেবীদের নিয়মিত আসর ক্যাফে-৭১। অভিযুক্তদের সবাই কলেজ ছাত্রলীগ থেকে বহিষ্কৃত।

ভিক্টোরিয়া কলেজ বিতর্ক পরিষদের একজন নারী সদস্যের অভিযোগ, কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে বহিরাগতরা বসে সিগারেট খায়। এখানে পাঠাগার ও দু’টি সংগঠনের কার্যক্রম চলে। তাদের কারণে মেয়ে সদস্যরা আসতে চায় না।

কলেজের গণিত বিভাগের এক ছাত্র জানান, গত চার বছর ধরে কলেজ ক্যাম্পাসে বহিরাগতদের অধিপাত্য বেড়েছে। ফেসবুকে কলেজ ছাত্রীদের সাথে অবৈধ প্রেম সম্পর্কে লিপ্ত হয়ে, শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হয় বহিরাগত বখাটেরা। তারা ছাত্রীদের ব্ল্যাকমেইল করে কলেজের বিভিন্ন কক্ষে নানা অপকর্মে লিপ্ত হয়। এ সন্ত্রাসীরা অস্ত্র বহন করে তাই এখানের শিক্ষক, শিক্ষার্থী কর্মচারি কেউ তাদের বিরুদ্ধে কথা বলতে চায় না।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে, কলেজের একজন কর্মচারী জানান, মাদক বিক্রির মূল কাজটি করে থাকেন  শুভ নামের এক স্থানীয় যুবক। তারা সবাই আশিক, জুবায়ের গ্রপের লোক। কলেজ বন্ধ থাকলেও তারা ক্যান্টিনে দিনে ও রাতে অবস্থান করে। বাইকে করে মাদক ক্রেতারা আসে, আবার চলে যায়। তাদের সাথে সব সময় অস্ত্র থাকার কারণে নৈশ্য প্রহরীরা ভয়ে কিছু বলে না।

এ সময় তিনি আরও বলেন, সরকারি কোনো নিয়ম না মেনেই ছাত্রলীগের বহিষ্কৃত সদস্যদের কলেজ ক্যান্টিন দেওয়া হয়েছে। তারা এখন অপরাধের আখড়া বানিয়েছে ক্যান্টিনকে।

ছাত্রলীগ কুমিল্লা মহানগর সূত্রমতে, দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গের দায়ে ২০১৯ সালের ১১ মে ভিক্টোরিয়া কলেজ ছাত্রলীগের তিন সদস্যকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। তারা হলেন রাকিবুল ইসলাম জুবায়ের, আশিকুর রহমান জুয়েল ও আবদুর রহমান বাবু। দল থেকে বহিষ্কারের পর এ চক্রের সদস্যরা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠে।

ভিক্টোরিয়া কলেজ ছাত্রলীগের আহবায়ক কাজী সায়েম বলেন, “যারা মাদকের সাথে যুক্ত, সে যেই হোক ছাত্রলীগে তাদের স্থান নেই। অভিযোগ পেলে আমি সাথে সাথে ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। আর ক্যাম্পাসকে মাদকমুক্ত করার জন্য আমি অধ্যক্ষ স্যারের সাথে কথা বলবো।” 

কোতয়ালী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বখতিয়ার উদ্দিন চৌধুরী বলেন, “টহল পুলিশ সব সময় কাজ করে থাকে। ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে যখন কল পাই, আমরা সাথে সাথে ক্যাম্পাসে যাই। একাধিক বার কিছু যুবককে থানায় নিয়ে আসা হয়েছে। পরে তাদের অভিভাবক এসে মুচলেকা দিয়ে তাদের নিয়ে গেছে। কারও নামে মামলা দেওয়া হয়নি। কোতয়ালী থানার অধীনে এখন চারটি ফাঁড়ি রয়েছে। নতুন ফাঁড়ির বিষয়ে পুলিশ সুপার স্যার সিদ্ধান্ত দিবেন।”

শিক্ষক পরিষদ সম্পাদক মোহাম্মদ শাহাজাহান মনে করেন, কলেজের এ সমস্যা দীর্ঘদিনের। পুলিশ প্রশাসন আমাদের সহযোগিতা করেন নিয়মিত। তবে সমস্যার স্থায়ী সমাধান ও নিরাপত্তার জন্য এখানে একটি পুলিশ ফাঁড়ি প্রয়োজন। এ বিষয়ে পুলিশ সুপার মহোদয়ের নিকট আমরা লিখিত আবেদন করবো।

কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ড. আবু জাফর খান বলেন, “কারও বিরুদ্ধে মাদক সংক্রান্ত অভিযোগ পাওয়া গেলে সাথে সাথে পুলিশে দেওয়া হবে। বিগত সময় থেকে এখন বহিরাগতদের প্রবেশ কমেছে। ক্যাম্পাসের গুরুত্বপূর্ণ অংশে আমরা ক্লোজ সার্কিট (সিসিটিভি) ক্যামেরা স্থাপন করেছি। আমাদের পুরো ক্যাম্পাস সিসিটিভি ক্যামেরার আওতায় আনার পরিকল্পনা রয়েছে।” এছাড়া, কলেজের নানা বিষয়ে সমস্যা সমাধানের ধারাবাহিক প্রচেষ্টা চলছে বলে জানান তিনি।

   

About

Popular Links

x