টাঙ্গাইলে রক্ত দিতে যাওয়া এক শিক্ষার্থীকে মানসিক ভারসাম্যহীন রোগীর ইনজেকশন দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। শুক্রবার (২৩ জুলাই) দুপুরে টাঙ্গাইল ক্লিনিক এন্ড হসপিটালে এ ঘটনা ঘটে।
ওই শিক্ষার্থী টাঙ্গাইল পৌর এলাকার পশ্চিম আকুর টাকুর পাড়ার আবু বক্কর সিদ্দিকের ছেলে মো. বায়েজিদ। তিনি সরকারি সা’দত কলেজের স্নাতক (সম্মান) দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। যদিও এ ঘটনার পর ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ ভুল স্বীকার করে একটি লিখিত মুচলেকা দিয়েছে।
জানা গেছে, ভূক্তভোগী বায়েজিদের এক বন্ধুর বড় ভাইয়ের স্ত্রী অন্তঃসত্বা ছিলেন। সন্তান ডেলিভারির জন্য ওই নারী শুক্রবার সকালে টাঙ্গাইল ক্লিনিক এন্ড হসপিটালে ভর্তি হন। এরপর ওই নারীর রক্ত প্রয়োজন হলে বায়েজিদ দুপুরে রক্ত দেওয়ার জন্য ক্লিনিকে যান। ওই নারীর পাশেই এক মানসিক রোগী ভর্তি ছিলেন। এসময় ওই ক্লিনিকের প্যাথলজি বিভাগের প্যাথলজিস্ট মেহেদী হাসান দু’টি মানসিক ভারসাম্যহীন রোগীর ইনজেকশন পুষ করেন তাকে।
শিক্ষার্থী বায়েজিদের সহপাঠীরা জানায়, রক্ত দিতে হলে আগে কি ইনজেকশন দেওয়া লাগে এমন প্রশ্ন করার পরেও মেহেদী হাসান বায়েজিদকে দু’টি ইনজেকশন পুশ করে। পরে তার কাছে বিষয়টি জানতে চাওয়া হলে মেহেদী হাসান বলে ভিটামিনের ইনজেকশন দেওয়া হয়েছে। পরে এ নিয়ে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে মেহেদী হাসান সরে পড়েন। পরবর্তীতে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে এটি মানসিক ভারসাম্যহীন রোগীর ইনজেকশন।
তারা আরও বলেন, মূলত ভুল করে বায়েজিদকে ইনজেকশন দেয়া হয়েছে। ইনজেকশন দেওয়ার আগে মেহেদী হাসান বায়েজিদকে কোন কিছুই জিজ্ঞাসা করেননি। যদি রোগীর নাম ঠিকানা মিলিয়ে দেখা হতো তাহলে এমন ভুল হতো না।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী বায়েজিদ বলেন, “আমার এক বন্ধুর বড় ভাইয়ের স্ত্রীকে রক্ত দেয়ার জন্য ক্লিনিকে আসি। কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আমাকে দু’টি ভারসাম্যহীন রোগীর ইনজেকশন পুশ করে। এতে আমি চিন্তিত রয়েছি। আমার এখন ঘুম ঘুম ভাব আসতেছে। এ ঘটনায় আমি সুষ্ঠু বিচার চাই।”
এদিকে বিষয়টি জানাজানি হলে শিক্ষার্থী বায়েজিদের সহপাঠীদের সঙ্গে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বাকবিতণ্ডা হয়। পরে বিষয়টি জানতে পেয়ে বায়েজিদের এলাকার স্থানীয় কাউন্সিলর সাইফুল ইসলাম ঘটনাস্থলে আসেন। পরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ভুল স্বীকার করে লিখিত একটি মুচলেকা দেয়। ওই মুচলেকায় উল্লেখ করা হয়, “ইনজেকশন পুশ করার ফলে যদি তার কোন ক্ষতি হয় তাহলে আমরা দায়ভার বহন করবো।”
প্যাথলজি বিভাগের প্যাথলজিস্ট মেহেদী হাসান বলেন, “অন্যজনকে দিতে গিয়ে ভুল করে বায়েজিদকে ইনজেকশন দেওয়া হয়েছে।”
রক্ত দিতে হলে আগে ইনজেকশন দেওয়া লাগে কি না এমন প্রশ্নের উত্তর তিনি দিতে পারেনি। পরে তিনি বিষয়টি নিয়ে ভুল স্বীকার করেছেন।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, “ভুল করে মানসিক এক রোগীর ইনজেকশন ওই আরেকজনকে দেওয়া হয়েছে।”
টাঙ্গাইল ক্লিনিক এন্ড হসপিটালে ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মাসুদুর রহমান বলেন, “বিষয়টি আমাদের ভুল হয়েছে। ভুল স্বীকার করে মুচলেকা দেওয়া হয়েছে। তার যাতে কোনো ক্ষতি না হয় তার জন্য প্রাথমিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।”
এ ব্যাপারে সিভিল সার্জন আবুল ফজল মো. শাহাবুদ্দিন খান বলেন, “বিষয়টি আমি শুনেছি। এ ব্যাপারে লিখিত অভিযোগ দিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।”