সিলেট এমএজি ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যুক্তরাজ্য প্রবাসী এক নারী যাত্রীকে রেখেই ফ্লাইট ছেড়ে যাওয়ার ঘটনায় সমালোচনার ঝড় উঠেছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।
গত বুধবার (২৮ জুলাই) বিমানবন্দরে অপেক্ষারত ওই নারীকে রেখেই উড়াল দেয় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ফ্লাইটটি।
এ ঘটনায় সিলেট ওসমানী বিমানবন্দরে কর্মরত একজনকে স্ট্যান্ড রিলিজ ও আরেকজনকে সাসপেন্ড করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স সিলেটের জেলা ম্যানেজার ফারুক আলম।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের অপ্রীতিকর আচরণ ও অপেক্ষমাণ যাত্রীকে রেখেই ফ্লাইট ছেড়ে যাওয়ার বিষয়ে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জানিয়েছে বিমান কর্তৃপক্ষ।
তবে তদন্ত কমিটিতে কারা আছেন বা কাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে সে বিষয়ে বিস্তারিত জানাননি বিমান কর্মকর্তারা।
ফারুক আলম জানান, ভুক্তভোগী ওই নারী আগামী ৪ আগস্ট বেলা ২টা ৪০ মিনিটের ফ্লাইটে লন্ডন যাবেন। বিমান কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে তার সঙ্গে দেখা করে সমবেদনা জানানোর পাশাপাশি অন্য ফ্লাইটে তাকে লন্ডন পৌঁছে দেওয়ার অনুরোধ করা হয়েছে।
তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিমান কর্তৃপক্ষের একটি সূত্র জানিয়েছে, বিমানের জুনিয়র ট্রাফিক অ্যাসিস্ট্যান্ট (জেটিও) ইউনুস ও মোখলেছের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে যুক্তরাজ্য প্রবাসী ভুক্তভোগী যাত্রী জামিলা চৌধুরী জানান, বিমানের পক্ষ একটি প্রতিনিধি দল শনিবার রাতে তার কাছে দুঃখ প্রকাশ করেছেন। তবে তিনি “ফাইট” চালিয়ে যাবেন।
তিনি বলেন, বিমানের স্টেশন ম্যানেজার ওমর হায়াত ও জেটিও জাহিদুল ইসলাম সুমনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ না পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাব।
জামিলা আরও জানান, টিকেট রি-ইস্যুর জন্য তাকে আরেকটি পিসিআর টেস্ট ছাড়াও হোটেলে কোয়ারেন্টাইন বাবদ অতিরিক্ত অর্থ গুনতে হচ্ছে।
ঘটনা সূত্রে জানা যায়, সিলেট থেকে লন্ডনগামী বিমানের সরাসরি ফ্লাইটের (বিজি-২০১) যাত্রী ছিলেন ভুক্তভোগী জামিলা চৌধুরী। ঘটনার দিন (বুধবার) ওই ফ্লাইটে যুক্তরাজ্য যাওয়ার কথা থাকলেও ওসমানী বিমানবন্দরের কিছু কর্মকর্তার অসৌজন্যমূলক ও অন্যায় আচরণের কারণে ফ্লাইটে উঠতে পারেননি বলে অভিযোগ করেন তিনি।
পরবর্তীতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ ঘটনার ভিডিও ছড়িয়ে পড়লে শনিবার ওই নারীর সঙ্গে যোগাযোগ করে বিমান বাংলাদেশ সিলেটের জেলা ম্যানেজার এম ফারুক আলমের নেতৃত্বে চার সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল।
জামিলা চৌধুরী জানান, সেদিন নির্ধারিত সময়ে বাংলাদেশ বিমানের কাউন্টারে পৌঁছান তিনি। কিন্তু সেখানে দায়িত্বরত কর্মকর্তা তার কাছে লোকেটর ফর্ম চান। তখন মোবাইলে থাকা লোকেটর ফর্মটি দেখালেও প্রিন্ট কপি দেখতে চান এক কর্মকর্তা।
তিনি বলেন, “বারকোডযুক্ত লোকেটর ফর্মের প্রিন্ট কপি বাধ্যতামূলক হতে পারে না। কারণ সবকিছুই এখন স্বয়ংক্রিয়ভাবে করা হয়। তারপরেও আমি বিমানবন্দরের নির্ধারিত কাউন্টারে লোকেটর ফর্ম প্রিন্ট করার জন্য যাই। কিন্তু সেখানে দীর্ঘ লাইন থাকায় তা প্রিন্ট করাতে বেশ কিছু সময় চলে যায়।
জামিলা চৌধুরী আরও বলেন, পরে লাগেজে অতিরিক্ত ওজনের কারণে আমার কাছে উৎকোচ (ঘুষ) টাকা দাবি করেন ওই কর্মকর্তা। আমি অতিরিক্ত ওজনের লাগেজ ফিরিয়ে দিয়ে শুধুমাত্র একটি লাগেজ নিয়ে আমাকে বোর্ডিং পাস দেওয়ার কথা জানালে ওই কর্মকর্তা উত্তেজিত হয়ে আমার ওপর পাসপোর্ট ছুঁড়ে মারেন এবং অকথ্য ভাষা ব্যবহার করেন। এমনকি আমাকে বোর্ডিং পাস না দিয়েই লাইন থেকে বের করে দেন।”
পরে তিনি বিমানবন্দরে থাকা অবস্থায়ই নিজের মোবাইলে কয়েকটি ভিডিও ধারণ করেন। একটি ভিডিওতে দেখা যায়, কর্তব্যরত বিমান কর্মকর্তা বলছেন, “আমাদের মধ্যে হিউমিনিটি (মানবতাবোধ) নেই। আপনি ম্যানেজারের কাছে যান, আমরা আপনাকে কোনো সাহায্য করতে পারব না।”
আরেকটি ভিডিওতে দেখা যায় সাহায্য চাইতে গেলে এক কর্মকর্তা লাগেজ বেল্টের ওপর দিয়ে লাফিয়ে পালাচ্ছেন।
তবে, বিমান কর্মকর্তারা এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, অতিরিক্ত ওজনের লাগেজের কারণে তাকে ছাড়াই ফ্লাইট ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে সিলেট বিমানবন্দরে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের স্টেশন ম্যানেজার চৌধুরী মো. ওমর হায়াত বলেন, “ওই যাত্রীর সঙ্গে নির্ধারিত ওজনের চেয়ে ৪৪ কেজি বেশি ওজনের মালামাল ছিল। প্রতি কেজিতে ২ হাজার ৬১১ টাকা হিসেবে এক লাখ ১৪ হাজার টাকার উপরে পরিশোধ করার কথা তার। কিন্তু তিনি প্রথমে ওভার ওয়েটের মূল্য পরিশোধ করতে রাজি হননি। পরে যখন তিনি অতিরিক্ত লাগেজ ছেড়ে যেতে রাজি হন ততক্ষণে কাউন্টার বন্ধ হয়ে গেছে।”
বিমান বাংলাদেশের ওয়েবসাইটে প্রতি কেজি অতিরিক্ত ওজনের জন্য ১০ পাউন্ড (১১৮০ টাকা) ফি উল্লেখ আছে জানালে তিনি বলেন, “ওয়েবসাইটে কী আছে জানি না, তবে আমাদের এই ফি-ই ধার্য করা আছে এবং নিয়ম মাফিক সেটাই নেওয়া হচ্ছে।”
ওমর হায়াত আরও বলেন, “নির্ধারিত সময়ের এক ঘণ্টা আগে আন্তর্জাতিক ফ্লাইটের কাউন্টার বন্ধ করতে হয়। কিন্তু ওই যাত্রী নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তার লাগেজের ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেননি। তাই তাকে রেখেই বিমান ছাড়তে হয়েছে।”