মানুষের ক্রমবর্ধমান অত্যাচার ও বনাঞ্চল হ্রাস পাওয়ায় আবাসস্থল হারাতে শুরু করেছে বন্যহাতি। এরইমধ্যে কক্সবাজার দক্ষিণ বন-বিভাগের আওতায় টেকনাফ পাহাড়ের গহীনে একটি বন্যহাতির বাচ্চা প্রসবের সুসংবাদ দিয়েছে বনবিভাগ।
কক্সবাজার দক্ষিণ বনবিভাগ জানায়, সোমবার (২ আগস্ট) দুপুরের দিকে টেকনাফ উপজেলার হোয়াইক্যং ইউনিয়নের হোয়াইক্যং বিটের মংলা জাইন চাকমার ঘোনা এলাকার বনের অভ্যন্তরে একটি বন্যহাতি বাচ্চা প্রসব করেছে। এনিয়ে গত এক বছরে কক্সবাজার দক্ষিণ বনবিভাগে বন্যহাতির বাচ্চার সংখ্যা দাড়িয়েছে ১৬টিতে।
টেকনাফ হোয়াইক্যং রেঞ্জের সহকারী বনসংরক্ষক তারেক রহমান বলেন, “বনের ভেতর একটি বন্যহাতি বাচ্চা প্রসব করেছে দেখতে পেয়ে ডিউটিরত সিপিজি’র সদস্যরা বনবিভাগকে অবগত করে। খবর পেয়ে হোয়াইক্যং একটি দল ঘটনাস্থলে যায়।”
তিনি আরও বলেন, “সবকিছু প্রাকৃতিকভাবেই ঘটছে এবং মা হাতিসহ বাচ্চা সুস্থ ও স্বাভাবিক রয়েছে। সিপিজি সদস্যদেরকে মা ও বাচ্চা হাতির গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করতে ডিউটিতে রাখা হয়েছে।”
কক্সবাজার বন ও পরিবেশ সংরক্ষণ পরিষদের সভাপতি দীপক শর্মা দীপু বলেন, “২০১৭ সালে মিয়ানমার থেকে বিতাড়িত হয়ে উখিয়া ও টেকনাফের অন্তত ১০ হাজার একর বনভূমি ধংস করে আশ্রয় নিয়েছে ১১লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা। এ কারণে, উক্ত বনাঞ্চলে হাতিগুলোর পরিবেশ, আবাসস্থল ধংসের কারণে বন্যহাতিগুলোর জীবন সংকটে পড়ে। বন্ধ হয়ে যায় তাদের চলাচলের করিডোর। এরমধ্যে বন্যহাতি বাচ্চা প্রসব করার খবর অত্যন্ত সুখকর। এই অবস্থায় হাতিদের যে আবাস্থল রয়েছে তা নিরাপদ রাখতে হবে। খাদ্য নিরাপত্তাসহ নানাভাবে তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।”
কক্সবাজার পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক মো. শেখ নাজমুল হুদা জানান, “হাতির আবাস্থলের এসব এলাকায় আগের পরিবেশ ফিরে এসেছ। এখনো হাতির নিরাপদ আবাসস্থল জোন হিসাবে রয়েছে এসব বনাঞ্চল। খাদ্য নিরাপত্তা, নিরাপদ এবং সহনীয় পরিবেশ রয়েছে বলে এখনো হাতিরা এসব এলাকায় নির্বিঘ্নে বিচরণ করছে এবং বাচ্চা প্রসব করছে। এসব বন্যহাতিদের কোনভাবে বিরক্ত করা যাবে না। যদি মানুষের কারণে অবাধ চলাফেরা করতে না পারে, সেক্ষেত্রে হাতিগুলো অন্যত্রে চলে যেতে পারে। তাই সংশ্লিষ্ট বনবিভাগকে আরও সতর্ক থাকতে হবে।”
কক্সবাজার দক্ষিণ বনবিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. হুমায়ুর কবির জানান, কক্সবাজার থেকে টেকনাফ পর্যন্ত দক্ষিণ বনবিভাগের আওতাধীন বনাঞ্চলে গত ১ বছরে এক বছর বয়সী প্রায় ১৬ টি বাচ্চা দেখা গেছে। হিমছড়ি, ধোয়াপালং, পানেরছড়া, ইনানী, হোয়াইক্যং, শীলখালী রেঞ্জের বনাঞ্চলে এসব বাচ্চা প্রসব করে মা হাতি। এসব হাতিগুলো এশিয়ান প্রজাতির হাতি।
তিনি আরও জানান, ২০১৭ সালের সর্বশেষ জরিপে কক্সবাজারের এই দক্ষিণ বনাঞ্চলে মোট এশিয়ান হাতির সংখ্যা ছিল ৬৩টি। এসব হাতি থেকে প্রজনন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
উল্লেখ্য, সারাদেশে ২৬৮টি মহাবিপন্ন এশীয় হাতির দুই-তৃতীয়াংশের বাস কক্সবাজার ও পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে। কিন্তু, কক্সবাজার ও পার্শ্ববর্তী বনাঞ্চলে রেললাইন, বিভিন্ন প্রকল্প, অবৈধ দখলসহ বিশেষ করে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিতে গিয়ে হাতির আবাসস্থল উজাড়, চলাচলের করিডোরে চরমভাবে বাধাগ্রস্ত ও খাদ্য সংকটে পড়ে এসব হাতি। ফলে বাধ্য হয়েই খাবারের খোঁজে লোকালয়ে হানা দেওয়ায় বন্যহাতি ও মানুষের মধ্যে দ্বন্দ্ব তৈরি হচ্ছে। অন্যদিকে, ফসল রক্ষায় এসব হাতিকে বিদ্যুৎ শক দিয়ে ও গুলি করে হত্যার একাধিক ঘটনা ঘটেছে। এ নিয়ে গত তিন বছরে কক্সবাজার দক্ষিণ ও উত্তর বনাঞ্চলে ১৮টি বন্যহাতির মৃত্যু হয়।