খুলনায় আধুনিক রেল স্টেশন নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছিল ২০১৫ সালের এপ্রিলে। শুরুতে ৫৬ কোটি টাকা বরাদ্দ থাকলেও কয়েক দফায় বরাদ্দ ও সময় বৃদ্ধি এবং নকশায় পরিবর্তন আনা হয়। ২০১৮ সালে ৬১ কোটি ২৭ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত হয় আধুনিক এই রেল স্টেশন। তবে দফায় দফায় বরাদ্দ ও সময় বাড়ানোর পরেও নির্মাণে ত্রুটি থেকে যায় স্টেশনটিতে। আর এই ত্রুটি সমাধানে আরও ৫ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
সরেজমিন ও খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, ২০১৮ সালে আধুনিক রেলস্টেশন নির্মাণ কাজ শেষ হয়। নির্মাণের পর প্লাটফর্মের উচ্চতা নিয়ে জটিলতা দেখা দেয়। প্লাটফর্ম আর ট্রেনের উচ্চতায় সামঞ্জস্য না হওয়ায় দুর্ঘটনার শঙ্কা দেখা দেয়। সাধারণ মানুষের পক্ষ থেকে স্টেশন প্লাটফর্মটি উঁচু করার দাবি ওঠে। সে অনুযায়ী গত এপ্রিল মাসে এ স্টেশনের ৬টি প্লাটফর্ম উচু করার কাজ শুরু হয়। এ পর্যন্ত ১, ২, ৫ ও ৬ নম্বর প্লাটফর্মের কাজ শুরু হয়েছে। ৩ ও ৪ নম্বর প্লাটফর্মের কাজ এখনও শুরু হয়নি। যদিও গত ৪ মাসে একটি প্লাটফর্মেরও উচুকরণ কাজ শেষ হয়নি।
খুলনার বয়রার বাসিন্দা আজহার আলী বলেন, “এত উঁচুতে পা তুলে ট্রেনে ওঠা কষ্টকর। উঁচু করার কাজ দেখে ভালো লাগছে। কিন্তু এ কাজ কবে শেষ হবে কে জানে? সময়মত কাজ শেষ হলে ভালো লাগবে। স্টেশন উঁচু করা কাজ শেষ হলে ট্রেনে ওঠা ও নামার দুর্ভোগ শেষ হবে। এখন ট্রেনে উঠতে-নামতে ভয় লাগে।”
৬০ বছরের বৃদ্ধ আলফাজ মিয়া বলেন, “প্রায়ই যাতায়াত করি। একবার পা ফসকে পড়ে যাচ্ছিলাম। সামনে থেকে একজন ধরেন ফলে সে যাত্রায় রক্ষা পাই। কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি তখন। উঁচু করার কাজ শেষ হলে এ ধরনের সমস্যা আর হবে না।”
এ বিষয়ে বাংলাদেশ রেলওয়ের সহকারী প্রকৌশলী কাজী ওয়ালিউল হক বলেন, “প্ল্যাটফর্মের নির্মাণকাজ সঠিকই ছিল। বগিগুলোর কোচ উঁচু-নিচু হওয়ায় জটিলতা দেখা দেয়। রেলওয়ের গঠিত কমিটির সিদ্ধান্তে প্লাটফর্মগুলো উঁচু করা হচ্ছে। আধুনিক রেলস্টেশনের প্লাটফর্ম উঁচুকরণের চুক্তি হয় গত ২৬ এপ্রিল। প্রতিটি প্লাটফর্ম ২ ফুট ১১ ইঞ্চি উচু করে বগির পাটাতনের সমান করা হবে। এখন ১, ২, ৫ ও ৬ নম্বর প্লাটফর্মে ঢালাই ও ফিনিসিংয়ের কাজ বাকী রয়েছে।”
খুলনা স্টেশন মাস্টার মানিক চন্দ্র সরকার বলেন, “প্ল্যাটফর্ম উঁচুকরণ কাজ নিয়মিত মনিটরিং করা হচ্ছে। প্রথম শুরু হওয়া কাজ নির্ধারিত সময়ে সম্পন্ন হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এখন সব ট্রেন ৩ ও ৪ নম্বর প্লাটফর্মে আসছে ও ছেড়ে যাচ্ছে।”
উল্লেখ্য, আধুনিক রেলস্টেশন নির্মাণ কাজ শেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৮ সালের ৩ মার্চ স্টেশনটি উদ্বোধন করেন। ওই বছরের ২৫ নভেম্বর সকালে স্টেশন থেকে চিত্রা এক্সপ্রেস ছেড়ে যাওয়ার মধ্য দিয়ে খুলনার আধুনিক এই রেল স্টেশনের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়। রেল স্টেশনটিতে ৩ তলা ভবন, ১ হাজার ২০০ ফুট দৈর্ঘ্য ও ৩০ ফুট প্রস্থের ৬টি প্লাটফর্ম, ৭৮৪ বর্গমিটারের একটি লিংক করিডোর, সীমানাপ্রাচীর, গাড়ি পার্কিং ও ফুটপাত রয়েছে।