সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যা মামলার সাক্ষ্যগ্রহণের সময় মোবাইল ফোনে আদালতের কাঠগড়ায় বসে ফোনালাপের একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও বিভিন্ন গণমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
বুধবার (২৫ আগস্ট) মামলাটির তৃতীয় দিনের সাক্ষ্যগ্রহণের সময় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী বিষয়টি নিয়ে আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করলে আদালত বরখাস্ত ওসি প্রদীপকে সতর্ক করেন।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট ফরিদুল আলম ঢাকা ট্রিবিউনকে এ তথ্য জানিয়েছেন।
ফরিদুল আলম বলেন, ‘‘সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও বিভিন্ন গণমাধ্যমে ওসি প্রদীপের ফোনালাপের ছবির ব্যাপারে কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মোহাম্মদ ইসমাইল হোসেনকে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়। এসময় আদালত বরখাস্ত ওসি প্রদীপকে মোবাইল ফোনে কারও সঙ্গে কথা বলতে হলে আদালতের অনুমতি নেওয়ার নির্দেশনা দেন। একই সঙ্গে তিনি যাতে ভবিষ্যতে অনুমতিবিহীন কাজ না করেন, সে ব্যাপারেও তাকে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে।”
এর আগে কক্সবাজার আদালতে সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যা মামলার সাক্ষ্যগ্রহণের সময় কাঠগড়ায় বরখাস্ত ওসি প্রদীপ কুমার দাসের মোবাইলফোনে কথা বলার একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। এ ঘটনায় দায়িত্ব অবহেলার কারণে এটিএসআইসহ তিন পুলিশ সদস্যকে প্রত্যাহার করা হয়েছে।
বুধবার সকালে কক্সবাজারের পুলিশ সুপার (এসপি) মো. হাসানুজ্জামান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘তিন পুলিশ সদস্যকে প্রত্যাহার করে পুলিশ লাইন্সে সংযুক্ত করা হয়েছে। এ ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। প্রত্যাহার হওয়া পুলিশ সদস্যরা হলেন- এটিএসআই মো. শাহাব উদ্দীন, কনস্টেবল আবদুস সালাম ও আবদুল কাদের।
গত সোমবার কক্সবাজার জেলার দায়রা জজ আদালতে সিনহা হত্যা মামলার প্রথম দিনের সাক্ষ্যগ্রহণ চলছিল। এ সময় সাক্ষ্য দিচ্ছিলেন মামলার বাদী সিনহার বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস। তিনি সিনহা হত্যার ঘটনার বর্ণনা আদালতে উপস্থাপন করছিলেন। তখন বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে ছিলেন ১৫ আসামি। তাদের মধ্যে ছিলেন টেকনাফ থানার বহিষ্কৃত ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাস। এসময় প্রদীপ কুমারকে কাঠগড়ায় বসে মোবাইলফোনে কথা বলতে দেখা যায়। এ সময় কয়েকজন ব্যক্তি আশপাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন।
অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহাকে গুলি করে হত্যা মামলার অন্যতম প্রধান আসামি প্রদীপ।
২০২০ সালের ৩১ জুলাই ঈদুল আজহার আগের রাত সাড়ে ৯টার দিকে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিনড্রাইভ সড়কের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর এপিবিএন চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান। হত্যাকান্ডের পাঁচ দিনের মাথায় ৫ আগস্ট নিহত সিনহার বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস বাদী হয়ে পুলিশ পরিদর্শক লিয়াকত ও টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপসহ ৯ জনকে আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব পায় র্যাব-১৫। হত্যাকাণ্ডের পর চারমাসের বেশি সময় তদন্ত শেষে ২০২০ সালের ১৩ ডিসেম্বর ১৫ জনকে অভিযুক্ত করে এবং ৮৩ জনকে সাক্ষী করে আলোচিত মামলাটির চার্জশিট দাখিল করেন তদন্তকারী কর্মকর্তা র্যাব-১৫ এর সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মোহাম্মদ খায়রূল ইসলাম। চার্জশিটভুক্ত ১৫ জন আসামি কারাগারে রয়েছে। এরমধ্যে বরখাস্ত ওসি প্রদীপ কুমার দাস, কনস্টেবল সাগর দেব ও রুবেল শর্মা ছাড়া ১২ জন আসামি আদালতে স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দি দিয়েছেন।