খুলনার ৯টি উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে আলট্রাসনোগ্রাম, এক্স-রে ও অপারেশন মেশিন থাকলেও সেগুলোকে ব্যবহার না করে তালাবন্ধ ঘরে পলিথিন ও বস্তায় মোড়ানো অবস্থায় রাখা হয়েছে। ফলে আধুনিক ও উন্নত স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন সাধারণ মানুষ।
উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যথোপযুক্ত চিকিৎসা না পাওয়ার কারণে তৃণমূল মানুষ প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য ছুটছেন শহরে। এ কারণে জরুরী মুহূর্তে সুষ্ঠু সেবা ব্যাহত হচ্ছে। উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে আধুনিক সেবার ব্যবস্থা থাকা সত্ত্বেও চিকিৎসা সেবা না পেয়ে অনেক গরীব মানুষ হতাশায় নিমজ্জিত।
জানা যায়, দিঘলিয়া উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্র এক্স-রে রুমটির প্রবেশদ্বারে কাঠের স্তূপ ভিতরে এক্স-রে মেশিন পলিথিনে মোড়ানো অবস্থায় ফেলে রাখা হয়েছে। দাকোপ উপজেলায় আলট্রাসনোগ্রাম মেশিন থাকলেও সাধারণ মানুষ চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। উন্নতমানের যন্ত্রপাতি থাকলেও সাধারণ মানুষ এসব সেবা পাচ্ছেন না। এখানে অপারেশন মেশিন রয়েছে। কিন্তু মেশিন ঘরটি থাকে তালাবন্ধ।
দিঘলিয়া হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য আসা মিনারুল (১২) এর মা বলেন, “ছেলে খেলতে গিয়ে পায়ে আঘাত পায়। চিকিৎসক বলেছেন একটি এক্স-রে করতে হবে। তাই নদী পার হয়ে খুলনায় শহরে গিয়ে পরীক্ষা করাতে হয়েছে। এ হাসপাতালে এক্স-রে মেশিন থাকলেও আমরা জানি না। আর কখনও মেশিনটি দেখিনি। অসুস্থ ছেলেকে নিয়ে শহরে যাওয়া আসায় ভোগান্তি পোহাতে হয়।”
দাকোপ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স রোগী কল্যাণী আরা (৩১) বলেন, “গর্ভবতী হওয়ার নিয়মিত শারীরিক চেকআপ করা প্রয়োজন। চিকিৎসকরা আলট্রাসনোগ্রাম করতে বলেছেন। দাকোপ থেকে খুলনার দূরত্ব ৩৮ কিলোমিটার। সড়কেরও বেহাল অবস্থা। এ পরীক্ষা খুলনা শহরে গিয়ে করে আনতে হয়। একটি পরীক্ষার রিপোর্ট আনতে এক দিন সময় লেগে যায়। অর্থ ব্যয়সহ মানসিক ও শারীরিক সমস্যা সম্মুখীন হতে হচ্ছে।”
ফুলতলার বাসিন্দা যুবায়ের গাজী বলেন, “কিছুদিন আগেও ফুলতলা উপজেলা হাসপাতালে অপারেশন হতো, আলট্রাসনোগ্রাম পরীক্ষা হতো, এক্স-রে হতো। এখন এ সব পরীক্ষা বন্ধ রয়েছে। কিছু অসাধু চিকিৎসকের কমিশন বাণিজ্যের কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।”
দিঘলিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (টিএইচও) ডা. মাহাবুবুর রহমান বলেন, “হাসপাতালটিতে এক্স-রে, আলট্রাসনোগ্রামসহ অপারেশন করার সব ধরণের ব্যবস্থা রয়েছে। তারপরও এই সেবা রোগীদের দিতে পারছি না। মূলত এ হাসপাতালে দক্ষ টেকনিশিয়ান নেই। বেশ কয়েকবার দক্ষ জনবল সংকট থাকার বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়ে অবগত করা হয়েছে। আর মেশিনগুলো নতুন রাখার জন্য পলিব্যাগে মোড়ানো হয়েছে।”
খুলনা সিভিল সার্জন ডা. নিয়াজ মোহাম্মাদ বলেন, “উপজেলাগুলোতে আধুনিক এ সব সেবা চালু করতে প্রয়োজন জনবল। এ পদগুলো শূন্য রয়েছে। এ কারণে রোগীদের আধুনিক সেবা দিতে পারছি না।”
খুলনা বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. জসীম উদ্দিন বলেন, “দক্ষ টেকনিশিয়ান, জনবল না থাকায় মেশিনগুলো চালু করা যাচ্ছে না। জনবল ও টেকনিশিয়ান নিয়োগ হলে এই সমস্যা দূর হবে।”