দেশের পর্যটন শিল্পে উন্মোচিত হতে যাচ্ছে এক নতুন দিগন্ত। এর আগে আমদানি করা হলেও এখন থেকে নিজস্ব উদ্যোগে নির্মাণ করা হবে আন্তর্জাতিক মানের ক্রুজশিপ বা বিলাসবহুল জাহাজ। দুই বছরের মধ্যে চালুর লক্ষ্য নিয়ে আন্তর্জাতিক মানের ক্রুজশিপ নির্মাণে হাত দিয়েছে সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্তৃপক্ষ।
চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর তীরে দেশের খ্যাতনামা জাহাজ নির্মাতা প্রতিষ্ঠান কর্ণফুলী শিপ বিল্ডার্স লিমিটেডের একটি ড্রাই ডকে সম্প্রতি তিনটি ক্রুজশিপের নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে।
কর্মকর্তাদের মতে, প্রতিটি জাহাজের মূল্য হবে কমপক্ষে ৭৭ কোটি টাকা। গোটা প্রকল্পে খরচ হবে মোট ২৩১ কোটি টাকা।
তারা জানান, প্রতিটি ক্রুজ জাহাজে যাত্রীদের জন্য ১৫০টি এবং ক্রুদের জন্য ৫০টি কেবিন থাকবে। প্রতিটি কেবিনে একটি সংযুক্ত বাথরুম থাকবে।
এছাড়াও, যাত্রীদের জন্য ২০টি প্রেসিডেন্সিয়াল স্যুট থাকবে।
আরও পড়ুন- কক্সবাজার-সেন্ট মার্টিনে চালু হলো দেশের প্রথম ক্রুজ শিপ
প্রতিটি জাহাজে একটি ত্রিমাত্রিক (থ্রিডি) প্রেক্ষাগৃহ, দুটি সুইমিং পুল, লন্ড্রি, বার, ক্যাফে, হেলিপ্যাড, খোলা জায়গা, পুলসাইড ক্যাফে, পার্লার, কিডস কর্নার এবং ফুড কোর্টসহ সমস্ত অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধা থাকবে।
ক্রুজের মধ্যে কোনো যাত্রী অসুস্থ হয়ে পড়লে হেলিপ্যাডের মাধ্যমে বোর্ড কর্তৃপক্ষ তাকে নিকটবর্তী হাসপাতালে নিয়ে যেতে পারবে।
প্রেক্ষাগৃহগুলোয় একত্রে ৬০ জন মানুষের বসার ব্যবস্থা থাকবে। এগুলো কনফারেন্স রুম বা যাত্রীদের পারিবারিক অনুষ্ঠানের জন্যও ব্যবহার করা যাবে।
প্রসঙ্গত, ২০২০ সালের ডিসেম্বরে কক্সবাজার-সেন্টমার্টিন রুটে বাংলাদেশের প্রথম বিলাসবহুল ক্রুজ জাহাজ “এমভি বে ওয়ান” চালু হয়েছিল। মিৎসুবিশি হেভি ইন্ডাস্ট্রিজের তৈরি জাহাজটি ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে জাপান থেকে আমদানি করেছিল কর্ণফুলি শিপ বিল্ডার্স লিমিটেড।
নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী ঢাকা ট্রিবিউনকে জানান, ২০২৩ সালের মধ্যে এই জাহাজগুলো চালু করা যাবে বলে সরকার আশাবাদী। তিনি বলেন, “এটি শুধু দেশের পর্যটন শিল্পকেই প্রসারিত করবে না বরং অর্থনীতিতেও বিশেষ ভূমিকা রাখবে।”
প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, “এই জাহাজগুলোর প্রত্যেকটিতে আধুনিক বিনোদন সুবিধা থাকবে যাতে একজন পর্যটক একটি ক্রুজে ১৫ দিন পর্যন্ত আরামে থাকতে পারেন। তাছাড়া, এই ধরনের ভ্রমণ শুধুমাত্র ইউরোপে বিদ্যমান। এমনকি আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারতেও এমন ভ্রমণের ব্যবস্থা নেই। এই জাহাজগুলোতে ভারত, শ্রীলঙ্কা এবং মালদ্বীপেও ভ্রমণ করা যাবে।”
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ -পরিবহন কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ তাজুল ইসলাম ঢাকা ট্রিবিউনকে জানান, কর্ণফুলি শিপ বিল্ডার্স লিমিটেডের সঙ্গে স্বাক্ষরিত চুক্তি অনুযায়ী জাহাজগুলো ২০২৩ সালের জুনের মধ্যে সরবরাহ করা হবে।
তিনি বলেন, “তারপর জাহাজগুলোকে চালুর আগে ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অব ক্ল্যাসিফিকেশন সোসাইটি সেগুলোকে যাচাই করবে।”
সর্বোৎকৃষ্ট সেবা দিতে তারা কিভাবে বড় কর্পোরেশনের সঙ্গে চুক্তি করতে চায় তা ব্যাখ্যা করে সৈয়দ তাজুল ইসলাম বলেন, “পর্যটকদের কাছে বিশ্বমানের ক্রুজ অফারের জন্য আমরা শেরাটন, প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও এবং ইন্টারকন্টিনেন্টালের মতো শীর্ষস্থানীয় বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তির ব্যাপারে ভাবছি।”