নাটোর শহরতলীর উলুপুর আমহাটি এলাকার একটি মাদ্রাসায় এক ছাত্রীকে গরম ভাতের মাড়ের ওপর ফেলে নির্যাতনের অভিযোগে উঠেছে। এ ঘটনায় ওই মাদ্রাসার দুই শিক্ষকসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার (৩০ সেপ্টেম্বর) দুপুরে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
এ ঘটনায় জামিয়া তালেমুন নেছা হাফেজিয়া মহিলা মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক সোহরাব হোসেন (৩৫) তার স্ত্রী শিক্ষক সালমা খাতুন (৩০) এবং সোহরাব এর বাবা বাবুলকে (৫০) গ্রেপ্তার করা হয়। তারা সবাই নাটোর সদর উপজেলার উলুপুর আমহাটি এলাকার নিজ বাড়িতে মাদ্রাসা পরিচালনা করে আসছিল।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সদর উপজেলার উলুপুর আমহাটি এলাকার জামিয়া তালেমুন নেছা হাফিজিয়া মহিলা মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ জোর করে মেয়েদের দিয়ে রান্নাসহ সব ধরণের কাজ করাতেন। কেউ কাজ করতে না চাইলে তাদেরকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করা হতো। গত শুক্রবার বিকেলে ইয়াসমিন খাতুন ভাত রান্না করে ঘরে নিয়ে যাওয়ার সময় তার হাত থেকে ভাতের পাতিল পড়ে যায়। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে প্রতিষ্ঠানটির প্রধান সোহরাব হোসেন মারধর করে। পরে তার স্ত্রী সালমা খাতুন তাকে গরম ভাত ও মাড়ের ওপর ফেলে দেন। এতে তার পেট, বুক ও হাত পুড়ে যায়।
নির্যাতনের শিকার ইয়াসমিনের বাবা ইমরান ইসলাম জানান, পাঁচ দিন ধরে মেয়ের সঙ্গে যোগাযোগ না হওয়ায় এক আত্মীয়কে মেয়ের খবর নিতে বলেন। তখন সেখানে খবর নেয়ার পর বিষয়টি জানতে পেরে দ্রুত মাদ্রাসার একটি কক্ষের তালা ভেঙ্গে মেয়েকে উদ্ধার করে নাটোর সদর হাসপাতালে ভর্তি করেন। এর আগে ঘটনাটি তার বাবা মাকে না জানানোর জন্য ওই আত্মীয়কে নিষেধ করে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক শিক্ষার্থী ও একজন অভিবাবক বলেন, “চার বছর আগে এই মাদ্রাসা শুরু হয়, সেখানে এলাকার প্রায় ৩০ থেকে ৩৫ জন ছাত্রী রয়েছে। পালাক্রমে মাদ্রাসায় পড়ুয়া সবাইকে ঘরের কাজকর্ম থেকে শুরু করে রান্নার কাজ করতে বাধ্য করা হয়। এছাড়া হুজুর ও তার পরিবারের লোকজনদের কাপড় ধোঁয়াসহ অন্য কাজও করতে হয়।”
এ ব্যাপারে গ্রেপ্তার হওয়ার আগে মো. সোহরাব হোসেন জানান, তিনি ইয়াসমিনকে নির্যাতন করেননি। সে নিজেই পড়ে গিয়েছিল। বাবা-মায়ের ফোন নম্বর না থাকায় ঘটনাটি তার খালুকে জানানো হয়েছিল।
নাটোর সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম জানান, ইয়াসমিনের শরীরে পোড়া জখম আছে। হাসপাতালে ভর্তি রেখে তার চিকিৎসা চলছে।
নাটোর সদর হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুনসুর রহমান বলেন, “বিষয়টি আমলে নিয়ে মামলার তদন্ত শুরু হয়েছে। অভিযুক্ত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ ঘটনায় ইয়াসমিনের বাবা ইমরান ইসলাম (৩২) বাদি হয়ে সদর থানায় বৃহস্পতিবার মামলা করেছেন।”