বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলায় মোস্তফা রাশেদ (৫০) নামে অবসরপ্রাপ্ত এক সেনা সার্জেন্টকে ‘‘অপহরণচেষ্টার‘’ সময় পুলিশ তার বড় ছেলে খালেদ মাহমুদকে (২৫) গ্রেপ্তার করেছে। একই সঙ্গে তার ছয় সহযোগীকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
সোমবার (৪ অক্টোবর) দিবাগত গভীর রাতে উপজেলা মাঝিড়াপাড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
মঙ্গলবার বিকেলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন রাশেদ। তবে তার স্ত্রী আনিছা বেগমের দাবি, রাশেদ মানসিক রোগী। ছেলে তাকে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছিল।
শাজাহানপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, সম্পত্তির লোভে ছেলে ও তার লোকজন সাবেক ওই সেনা সদস্যকে অপহরণের চেষ্টা করেছিলেন।
এ কাজে ব্যবহৃত মাইক্রোবাস জব্দ ও অভিযুক্তের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বিকেলে মামলা দায়েরের পর তাদের আদালতের মাধ্যমে বগুড়া জেল হাজতে পাঠানো হয়।
গ্রেপ্তার আসামিরা হলেন- মোস্তফা রাশেদের বড় ছেলে খালেদ মাহমুদ, তার সহযোগী রাজশাহীর বোয়ালিয়া উপজেলার বালিয়াপুকুর গ্রামের মোসাদ্দেকুর রহমান (৩৬), একই উপজেলার কয়েরদারা বিলপাড়ার আবদুস সাত্তার (৩৬), কাশিয়াডাঙ্গা উপজেলার মুন্সিপাড়া গ্রামের মো. অলি (৪২), পাবনা সদর উপজেলার পৈলানপুর গ্রামের নোমান আরাফাত (২৫), একই উপজেলার ছাতিয়ানী গ্রামের আজিজুর রহমান সুমন (৪৪) এবং মাইক্রোবাস চালক লস্করপুর গ্রামের মানিক শেখ (৩২)।
পুলিশ ও এজাহার সূত্র জানায়, বগুড়ার সোনাতলা উপজেলার পোড়াপাইকর গ্রামের মোস্তফা রাশেদ ২০১৫ সালে সেনাবাহিনী থেকে অবসর নেন। গ্রামের বাড়ি ছাড়াও শাজাহানপুরের মাঝিড়াপাড়ায় তিন শতক জমির ওপর তার বাড়ি আছে। অবসরে যাওয়ার পর তিনি স্ত্রী ও
তিন ছেলেকে নিয়ে গ্রামের বসবাস করতেন। মাঝিড়াপাড়ার বাড়ি ভাড়া দেওয়া ছিল।
দুই বছর আগে এ সম্পত্তি নিয়ে স্ত্রী ও সন্তানদের সঙ্গে তার বিরোধ দেখা দেয়। এ কারণে তিনি গত দু’মাস ধরে মাঝিড়াপাড়া বাড়িতে একা বসবাস করে আসছিলেন। বাড়িটির অন্য তিন কক্ষ ভাড়া দিয়েছেন তিনি।
সিএনজি চালিয়ে, বাড়ি ভাড়া ও পেনশনের টাকা জমিয়ে প্রতি মাসে স্ত্রী ও সন্তানদের পাঠাতেন।
অন্যদিকে, বড় ছেলে খালেদ মাহমুদ সম্পত্তি হাতিয়ে নিতে তার বাবাকে অপহরণ,হত্যা ও লাশ গুমের পরিকল্পনা করেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে অজ্ঞাত মোবাইল ফোন নম্বর থেকে রাশেদকে জানানো হয় তার নামে একটি মোবাইল কোম্পানি থেকে গিফ্ট এসেছে। সেটি মাঝিড়ার সি-ব্লক থেকে নিতে হবে। রাত সাড়ে ১০টার দিকে একই নম্বর থেকেই আবারও ফোন আসে। তখন বলা হয় তারা গিফট পৌঁছে দিতে বাড়িতে আসছেন।
রাত সাড়ে ১২টার দিকে বড় ছেলে খালেদ মাহমুদ ছয় সহযোগীকে নিয়ে রাশেদের ঘরে প্রবেশ করেন। এ সময় তারা নিজেদের পুলিশ পরিচয় দেন এবং তাদের সঙ্গে থানায় যেতে বলেন। রাশেদ এতে রাজি না হলে
হাত-পা বেঁধে ও মুখ চেপে ধরে কোলে তুলে মাঝিড়া বাজারের কাছে রাস্তায় নিয়ে যান। সেখানে রাখা তাদের মাইক্রোবাসে (ঢাকা মেট্রো-চ-১১-৫৪১৫) তোলার চেষ্টা করা হয়।
মাইক্রোবাস স্টার্ট দেওয়ার সময় তার বাড়ির ভাড়াটিয়েরা টের পেয়ে সেখানে যান এবং পুলিশকে খবর দেন। খবর পেয়ে শাজাহানপুর থানার পুলিশের টহল দল ঘটনাস্থলে গিয়ে মোস্তফা রাশেদকে উদ্ধার করে।
এ সময় মাইক্রোবাসসহ অপহরণচেষ্টায় জড়িত ছেলেসহ সাতজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এদিকে, মোস্তফা রাশেদের স্ত্রী আনিছা বেগম দাবি করেছেন, তার স্বামী একজন মানসিক রোগী। বড় ছেলে তাকে পাবনার মাসুমবাজারে আলোরপথ মানসিক/মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। সাথে ওই প্রতিষ্ঠানের কয়েকজন কর্মচারী ছিলেন।
ওই প্রতিষ্ঠানের পরিচালক আলভী আদনান দাবি করেন, রোগী নিতে এসে তার লোকজন ফেঁসে গেছেন।
তবে শাজাহানপুর থানার ওসি আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, সম্পত্তি হাতিয়ে নিতে সাবেক সেনা সার্জেন্ট মোস্তফা রাশেদকে হাত-পা বেঁধে অপহরণের চেষ্টা করা হয়েছিল। মাইক্রোবাস জব্দ ও তার ছেলেসহ সাতজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ ব্যাপারে মোস্তফা রাশেদ থানায় তাদের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। পরে তাদের আদালতের মাধ্যমে বগুড়া জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে।